‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নিয়ে অনিশ্চয়তা

 প্রকাশিত: ২০২০-১২-১২ ০০:২৭:১৬

 আপডেট: ২০২০-১২-১৩ ১৬:০৬:২০

সিলেটটুডে ডেস্ক:

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে মাসব্যাপী যে বইমেলার আয়োজন হয় এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে সে ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ার শঙ্কা দিয়েছে। ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র আয়োজক বাংলা একাডেমি এবার বইমেলার আয়োজন করতে অনিচ্ছুক বলে জানা গেছে।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলছেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মেলা আয়োজন স্থগিতের চিন্তাভাবনা করছি। করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর বইমেলা শুরু করার তারিখ ঘোষণা করা হবে। এই সময় স্টল বসিয়ে মেলা আয়োজন করার জন্য উপযুক্ত সময় মনে করছি না। তাই আমরা সময় নিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘যদি দেখি, জানুয়ারি মাসে সময় ভালো যাচ্ছে, তাহলে ফেব্রুয়ারি মাসেই আয়োজন করব। তবে অবস্থা বিবেচনা করে ১ ফেব্রুয়ারির উদ্বোধনী তারিখ স্থগিত করলাম। তবে মেলা বাতিল হয়নি। এই তারিখ থেকে ভার্চুয়াল মেলার আয়োজন করা হবে। শুধু বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্ধারিত তারিখে মেলা শুরু হবে না, পরে হতে পারে।’

১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে একটি বড় জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন হয়েছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। সে উপলক্ষে সাত-আটজন প্রকাশক একাডেমির ভেতরে পূর্ব দিকের দেয়াল ঘেঁষে বই সাজিয়ে বসেছিলেন। সে বছরই প্রথম বাংলা একাডেমির বিক্রয়কেন্দ্রের বাইরে অন্য প্রকাশকদের বই বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়।

১৯৮৩ সালে মনজুরে মওলা যখন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন, তখন তিনি বাংলা একাডেমিতে প্রথম ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র আয়োজন করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বইমেলা করা সম্ভব হয়নি। ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে বর্তমানের অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়। বাংলা একাডেমির তথ্যানুযায়ী চলতি বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছিল। নতুন বই প্রকাশিত হয়েছিল ৪ হাজার ৯১৯টি। বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছিল ৪১টি নতুন বই।

৭ ডিসেম্বর ছিল স্টল বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করার শেষ সময়। কিন্তু ‘বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি’ ও ‘বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি’র বেশিরভাগ প্রকাশনাই স্টল বা প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেননি।

জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আবেদনের সময় বাড়ানো, স্টল বা প্যাভিলিয়নের ভাড়া কমানো এবং প্রণোদনা চেয়েছিলাম সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর কাছে। তিনি মৌখিকভাবে সম্মতিও জানিয়েছিলেন। পরে এ বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।’

এদিকে, বাংলা একাডেমির আয়োজনে প্রতিবারের মত এবারও একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান ফেসবুকে তার প্রতিক্রিয়ায় ভার্চুয়াল বইমেলার এই ধারণা নিয়ে প্রশ্ন রেখে বলছেন, ‘কয়েকটি টিভি ও অনলাইন মিডিয়ায় দেখলাম, বইমেলা এবার হচ্ছে না। স্থগিত হবে। মেলা নাকি এবার ভার্চুয়ালি হবে। ভার্চুয়াল বইমেলাটা কী জিনিস? এখানে কি বই বিক্রি হবে? ভার্চুয়ালি বই বিক্রির জন্য তো রকমারি.কম আছে। আরও অসংখ্য অনলাইন বই বিক্রয় প্রতিষ্ঠান আছে। পাঞ্জেরী, পাঠক সমাবেশ, বাতিঘরসহ অনেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে বই বিক্রি করছে। বাতিঘরের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করলে বই বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছে। তাহলে ভার্চুয়াল বইমেলার আলাদা বিশেষত্ব কোথায়?’

স্বকৃত নোমান বলেন, ‘করোনার কারণে নিউ মার্কেট বন্ধ? প্রতিদিন নিউ মার্কেট হয়ে বাসায় ফিরি। মানুষের যে ভিড় দেখি, যে ঠেলাঠেলি দেখি, রাস্তায় যে জ্যাম দেখি, তাতে তো মনে হয় না দেশে করোনা নামক কিছু আছে! করোনার কারণে কি গাউসিয়া মার্কেট বন্ধ? বসুন্ধরা মার্কেট বন্ধ? টোকিও স্কয়ার বন্ধ? যমুনা ফিউচার পার্ক বন্ধ? বঙ্গবাজার বন্ধ? বাংলাদেশের কোন মার্কেটটা বন্ধ? ওয়াজ মাহফিল বন্ধ? মসজিদ-মন্দির-গির্জা বন্ধ? বাস-ট্রেন-লঞ্চ বন্ধ? সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত বন্ধ? রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ বন্ধ? কিছুই তো বন্ধ না। সবই চলছে। শুধু স্থগিত হবে বইমেলা। কেন? কোন যুক্তিতে?’

আপনার মন্তব্য