প্রকাশিত: ২০২০-০২-০৪ ০০:১৫:১১
রেজা ঘটক:
সোমবার ছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলার দ্বিতীয় দিন। বইমেলায় ঢুকেছি একটু দেরিতে, ৬টার দিকে। টিএসসি গেট থেকে ঢুকতেই পুলিশের সাথে বড় রকমের বচসা! সিগারেট এবং লাইটার নিয়ে বইমেলায় ঢুকতে দেবে না পুলিশ। আমি জিজ্ঞেস করলাম, সিগারেট তো আমার পয়সায় কেনা, এটা ফেলে দেব কেন? জবাবে পুলিশ কইলো, তাদের স্যারের সাথে কথা বলেন। কিন্তু স্যার গেছে নামাজ পড়তে।
আমি আবার টিএসসি ফেরত এসে একটা সিগারেট খেলাম। তারপর প্যাকেট থেকে সিগারেটগুলো পকেটে নিলাম। আর লাইটার নিলাম হাতে।
পুলিশকে জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় আপনাদের স্যার? বললো এখনো আসেন নাই! তাহলে আই কী কত্তাম? বললো, সিগারেট আর লাইটার নিয়ে ঢুকতে পারবেন না। বললাম, এই নেন লাইটার, আমি বইমেলা থেকে বের হবার সময় আমার লাইটার ফেরত দেবেন আপনি? বললেন, ওনার বদলি ডিউটি, লাইটার উনি রাখতে পারবেন না। কইলাম, তাহলে আমি কী করব? পুলিশ বললেন, লাইটার রেখে যেতে হবে! আমি ওনার সামনে লাইটার ছুড়ে মেড়ে বইমেলায় ঢুকে গেলাম। লিটলম্যাগ কর্নারে গিয়ে প্রথমেই দশ-বারো জনকে নিয়ে সিগারেট খেলাম। মেজাজটা ঠিক করার জন্য।
আমরা বইমেলা শুরু হবার আগেই বাংলা একাডেমিকে সুস্পষ্টভাবেই বলেছিলাম, বইমেলায় ঢোকার সময় পুলিশের এই সিস্টেমকে আমরা তীব্র ভাষায় অপছন্দ করি। পুলিশ কবি-লেখক-প্রকাশকদের সঙ্গে এমন করবে কেন? আমরা কি অপরাধী নাকি? বাংলা একাডেমিকে আমরা আবারো সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, বইমেলায় আমাদের ধূমপানের জন্য সুনির্দিষ্ট কর্নার দিতে হবে। একাডেমি আমাদের সেই আহবানে এখনো সাড়া দেয়নি। সেই সুযোগ পুলিশ নেবে এটা কেমন কথা? আমাদের পুলিশ কি দিনদিন 'গে' হয়ে যাচ্ছে? এটা কোন ধরনের সভ্যতা?
তাহলে কি বাংলাদেশের কবি-সাহিত্যিকরা কেউ ধূমপান করবে না? আমরা সুনির্দিষ্ট ধূমপান কর্নার চাই। বইমেলায় ঠিকই সিগারেট পৌঁছে যায়, এবং আমরা প্রতিদিনই সিগারেট খাবো। এটা কেউ কোনো পাহারা বসিয়ে কোনো উপায়ে বন্ধ করতে পারবে না। হাজার চেষ্টা করেও পারবে না। কিন্তু পুলিশের এই কবি-লেখকদের প্রতি এই আচরণ বন্ধ হওয়া উচিত।
বাংলা একাডেমি প্রয়োজনে আমাদের আইডি কার্ডের ব্যবস্থা করুক। যাতে আইডি দেখলে পুলিশ জানবে এদের কাছে সিগারেট আছে। এরা সিগারেট খাবেই। কিন্তু পুলিশের এই গর্হিত কাজকে আমরা তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বইমেলাকে ধূমপান মুক্ত রাখার জন্য আমরাই সহযোগিতা করব। কিন্তু আমাদের একটা সুনির্দিষ্ট ধূমপান কর্নার দিতে হবে। পৃথিবীতে এমনকি এয়ারপোর্টেও ধূমপান কর্নার থাকে। কবি-সাহিত্যিকরা ছয় ঘণ্টা বইমেলায় থাকবে, আড্ডা দেবে আর ধূমপান করবে না, এটা কী কেউ বিশ্বাস করবে? এটা কী কোনো বাইবেল যে পুলিশের এই আচরণকে আমাদের মেনে নিতে হবে? বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, পুলিশের এই আচরণ বন্ধ করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিন। আপনারা সবাই জানেন ধূমপান থেকে কবি-লেখকদের কোনো ভাবেই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আটকাতে পারবেন না।
আজকে পুলিশের সাথে বচসা হওয়ার কারণে কোনো স্টলে যাবার মত কোনো মুড পাই নাই। বইমেলায় যতক্ষণ ছিলাম, ঘুরে ঘুরে আড্ডা দিয়ে কাটিয়েছি। লিটলম্যাগে আজ আড্ডা জমে উঠেছিল। লেকপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা গান গেয়ে দারুণ জমিয়েছিল। আজকে আর আড্ডারুদের নাম বলব না। কারণ পুলিশের সাথে কালও আমাদের সিগারেট নিয়ে নতুন করে বচসা হতে পারে!
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় চন্দ্রবিন্দু থেকে এসেছে হামিম কামালের উপন্যাস 'জাদুকরী ভ্রম' ও মাহবুব ময়ূখ রিশাদের উপন্যাস 'আরিমাতানো'। এক রঙা এক ঘুড়ি থেকে এসেছে আবু সাইদ লিপু'র উপন্যাস 'দৃশ্য দূষণ', অন্যপ্রকাশ থেকে এসেছে সাদাত হোসাইনের উপন্যাস 'মরণোত্তম', বাতিঘর থেকে এসেছে কবি আলফ্রেড খোকনের 'নির্বাচিত কবিতা', পাঞ্জেরী থেকে এসেছে ড. মোহাম্মদ আমীনের 'ব্যবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র'।
বইমেলায় গতকাল একদম পেছনের সারিতে ক্যান্টিন সংলগ্ন কিছু স্টলে ইলেক্ট্রিসিটি লাইন ছিল না। আজ আলোক সমস্যার সমাধান হয়েছে। শাহবাগ থেকে ছবিরহাট হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে বইমেলায় ঢোকার যে সুযোগটি ছিল, আজকে সেই গেটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটা বইমেলায় প্রবেশের জন্য নতুন একটি বিড়ম্বনা তৈরি করেছে। বরং ছবিরহাট হয়ে উদ্যান থেকে বইমেলায় প্রবেশের পথটি খোলা রাখা উচিত। অনেককে ভুল করে ছবিরহাট থেকে ঢুকে বইমেলার টিনের বেড়ার পাশে এসে আবার ফিরে গিয়ে ছবিরহাট থেকে বের হয়ে আবার টিএসসি থেকে প্রবেশ করতে হয়েছে। এই প্রবেশ পথটি বন্ধ করাটা মোটেও কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।
পুলিশ নিজেদের দায়িত্ব কমানোর জন্য এই যে নতুন মওকা বের করেছে, এটা বাংলা একাডেমি'র মেনে নেওয়া ঠিক হবে না। আবার মেট্রো রেলের কাজের কারণে এবার টিএসসি থেকে বাংলা একাডেমি পর্যন্ত আসা যাওয়া খুব সমস্যা। সেখানে আজ বইমেলা শেষ হবার আগেই টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত সড়কটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ায় বইমেলা থেকে বের হওয়া মানুষদের নতুন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।
আমরা আশা করব, বাংলা একাডেমি বইমেলা চলাকালীন টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত সড়ক অংশটুকু যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি বন্ধ রাখবে। এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের লেকপারের গেটটি পুনরায় চালু করবে। বইমেলা এখনো জমে ওঠেনি অথচ এরমধ্যেই পুলিশ নিজেদের ইচ্ছেমত সড়ক ছেড়ে দেওয়া বা গেট বন্ধ করার মত যে অপকর্মগুলো করছে, বাংলা একাডেমিকে এটা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে অনুরোধ করব।
বই হোক আপনার নিত্য সঙ্গী। প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিন। আপনার সন্তানকে সঠিক বইটি পড়তে দিন। সবাইকে অমর একুশে গ্রন্থমেলার শুভেচ্ছা।
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০
আপনার মন্তব্য