ফারহানা রহমান-এর ৫ কবিতা

 প্রকাশিত: ২০১৬-০১-১৭ ১৪:৩৬:৫৯

 আপডেট: ২০১৬-০১-১৭ ১৪:৪২:০৭

ফারহানা রহমান:

শেষ চিরকুট
মোহময় ইশারার কারুকাজ ছড়ানো
নয়নে রঙিন ফাতনার মায়াবী আভাস মাখা কৌতুক।

গভীর স্নান শেষে শূন্য হতে হতেও মাছের আঁশটে শ্যাওলার দগ্ধতা কাটেনা কিছুতেই...
সারারাত  মূর্ছনার মাঝে জ্যাজ, ব্লুজের নীলিমায় নীল হতে হতে
পেগ পেগ -
ব্লাডিমারি, স্ক্রুড্রাইভার, টাকিলা শেষে
শ্যাম্পেন – হুইস্কি – রাম।

চলুক তবে  চলুক!!
নিষ্পাপ নিঃশ্বাসে কুণ্ডলী পাকায় কুহক কষ্টের রিং;
বিষাদের মোহিত ক্ষরণ।
নিঃস্ব হতে হতে আরও নিঃস্ব
শ্মশানের চিতায় বিনাশ হয়ে গেছে কবেই সেই ভালোবাসার অলৌকিক চিরকুট।
তবুও কোন বিচ্ছিন্ন কোণে, আজন্ম তৃষিত প্রেমিক শেষ বিচ্ছেদের হেমলক পান করে চলেছে এখনো।


ফাউস্টের মত নিঃসঙ্গ
গভীররাতে এখনো আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়;
ডুব সাঁতারু হই পৃথিবীর তিনভাগ জলের সমান কান্নার আধারে।
ফাউস্টের মত নিঃসঙ্গ তোমার দুচোখ।
ফোঁটা ফোঁটা হাহাকারে মরচে পড়ার আগেই আমার হৃদয়কে তুমি বাঁচাতে পারতে।
একটিবারের জন্যও তো তুমি তোমার অসুস্থ ভাবুকতা বিসর্জন দিলেনা,
শুধু তোমার হাত ধরে হাটতে চেয়েছিলাম।
নিরাসক্ত ক্লাউন হয়ে খেলা ভেঙ্গে দিলে;
স্মৃতির ভিতর দিয়ে হেঁটে হেঁটে নিজের বিষণ্ণ ছায়ার সাথেই একাত্ম হতে হয় আমাকে।
তোমার বৃত্ত থেকে বের হতে দেয়না সেই একটিমাত্র রোমাঞ্চকর যামিনী । শেষে বিষকুম্ভের নিয়তির নৌকা উজানে ভাসিয়েছি।
চোখে নিয়ে বৈস্টমির আগমনী গান। অগত্যা অতিপ্রাজ্ঞ অন্ধবাল্মীকি হবো।
 
প্রেমিকা হবো না আর।
 
মিথ্যেমাথুর
অতৃপ্ত রয়ে যায় তবুও সেইসব সোনালী শিশিরমাখা প্রত্যাশাগুলো; সুদূর কোন অতীতের এক লাস্যময়ী মৎস্যকন্যার – হিল্লোল তোলা ছন্দে । প্রতীক্ষা ছিল শিল্পের শোভামাখা মানবিক এক মনের। নিভৃত গহীন অরণ্যে মৃত সভ্যতার মাঝে নিখোঁজ হীরকচূর্ণ ভালোবাসার। পোড় খাওয়া বিদীর্ণ গুল্মের ঢেউয়ে বহতা পেতে চায় মর্মর স্বচ্ছ জলের।

আহা প্রেম !!

দীঘল তরুর মত বেদনার আঁকিবুঁকি রেখা। শ্যাওলার শান্ত সুরভিত পদ্ম ছাপিয়ে আসে লোবানের শুধুই করুণ ঘ্রাণ। চক্রবৃদ্ধিহারে বেড়ে যায় বিষের প্রকোপ ধীরেধীরে। ক্ষতবিক্ষত হৃদয় ! ঝাপসা হয় শ্বেত সারসের ছায়ার শেষ দৃশ্যপট।
অবগাহনের নীলিমায় আঁকা হয় এক একটি ছেঁড়া ছেঁড়া অনলে মিথ্যেমাথুর,
- হারানো আখড়ার ছাঁদে ।

 
শুন্যপাতার প্রান্তে ঝুলে আছি
মহাবিশ্বের শেষ হিমায়িত মদ আমি ।  
শুন্যপাতার শেষ প্রান্তে হামাগুড়ি দিয়ে চলেছি আর ভাবছি জলাভূমির খুব কাছেই পৌঁছে গেছি; আর তখনই  
নক্ষত্রের দোলনায় দুলে দুলে ঠাণ্ডা জলের রেখার মৃদু বুদ্বুদ হয়ে উবে যাও...

স্বর্ণাভ সর্ষে ক্ষেতের পাশে অবলুপ্ত ভূমি, যেখানেই সে একাকী দাড়িয়ে ছিল;  
বৃষ্টির ভিতরে উথাল পাথাল জোছনার উন্মাদনায়,  
আগুন নেভাতে শুধু বৃষ্টির কাছেই আশ্রয় পেতে চেয়েছি।
আর পান করো তৃষ্ণার্ত হয়ে ললাটের শেষ অস্থিমজ্জা!  
তবু সেসব উন্মেষ রাতে জলের মৃদু মর্ম্মরধ্বনি শোনার আশায় তোমারই বুকে কান পাঁতি ।

অঝোর বৃষ্টির ধারার মাঝে আগুণ ধরাতে চেয়েছি কতবার ব্যাকুলতায়  
ভিজে কাঠ জড় করে বারবার মমতায় সিক্ত নীলাভ আগুণ জ্বালিয়েছি আমি  
আর তুমি তোমার আলিঙ্গন মাঝে পুনঃপুন: ভেঙে পড়ার ধ্বনি তরঙ্গায়িত করেছো ।

পথের মাঝে গভীর জলপ্রপাতে মধুর অবিরত ঝর্ণাধারা,
সেখানেও  
পড়ে থাকে নিদারুণ স্বপ্নের ছাইভস্ম, নিরেট পাথর দৃষ্টি  
যার অবয়ব আমি বুকের মাঝে ধরেছিলাম আমার দুহাতে,
তাকেও শেষ বেলায় আমি বিসর্জন দিয়েছি ভালোবাসার শেষ চুম্বন কপালে একে দিয়ে।
 

আমাকে তুমি লাবণ্য করে রেখো
আমি লাবণ্য হতে চেয়েছিলাম।
বালিয়াড়ি বাঁধের কোনায় এক ঠোঙা বাদাম হাতে দাড়িয়ে অনন্তকাল চেয়ে থাকবো।
কুসুম বনের ভিতর দিয়ে ঢেউয়ে ভেসে যাওয়া সুখের ছোট্ট সেই সময়রেখা। যতই দূরুহ চড়াই উৎরাই পথ পার হতে হয় হোক!

আগুনলাগা সেই সব দিনগুলোয় ।
সুখের বারান্দা জুড়ে সূর্যাস্তের লাল আভা মাখা সন্ধ্যায়।
ধ্রুপদী নৃত্যের মায়াবী জালে জড়িয়ে থাকা তুমুল স্বপ্নগুলো। ফিরে ফিরে আসুক !

আমি আসলে লাবণ্যই হতে চেয়েছিলাম।
চারুশিল্পের অদৃশ্য কোন ছোঁয়ায় সিক্ত হয়ে ছিল আমার হৃদয়।
আকাশমণির শত শত তারাফুলের মাঝে একটি চন্দ্রমল্লিকা হতে দিও আমায়। আমাকে নিত্যদিনের ব্যবহার্য ঘড়ায় তোলা জল কেতকী করোনা কখনো। আমি লাবণ্যের মত দীঘি হবো।

তোমার মন যখন খুশী সাঁতার কাটবে তাতে। আমি লাবণ্য হবো।
আমাকে তুমি লাবণ্য করে রেখো।

আপনার মন্তব্য

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন