প্রাণের বর্ণমালা : আজকের বর্ণ ‘প-ম’

 প্রকাশিত: ২০১৬-০২-২৭ ১৪:৪৭:৫০

কালের লিখন:


পঙক্তিগুলো শব্দের দান, সাক্ষী এই অক্ষর,
পচন ধরা মগজের ভাঁজে সময়ের সাক্ষর।
পঞ্চতত্ত্ব জানিনে যদিও কি আসে যায় তাতে?
পঙ্কিল সমাজ পচে যাচ্ছে, দেখি নষ্ট আঁতাতে।

পচে যাচ্ছে মেধা মনন বাস্তবতার চাপে-
পচনশীল সময় দেখি লাফায় অলীক তাপে।
পথ ভুলে যায় পথের মানুষ, মগ্ন অন্য মতে,
পথিক মানেই পথের সাথী, দিন কিবা রাতে।

পটভূমি খুবই চেনা তবুও ঝাপসা লাগে-
পড়শি কেউ দাড়িয়ে আছে অকাল অনুরাগে।
পণ্ড করে ভাবনা সকল গেলাম তার কাছে,
পঠন পাঠন দূরে তখন, অন্ধকারেই নাচে।

পটল তুলে দিনের আলো রাতের দেখা পেলে-
পণ্ডিতজনা পঙক্তিপ্রেমে শব্দের বাতি জ্বালে।


ফরশা হলে রাতের আকাশ শুভ্র ভোরে,
ফড়িং রোদে এসো তুমি আমার দ্বারে।
ফলাহারে বসবো আমরা তৃষ্ণা ভুলে-
ফলগুধারা বয়ে যাবে তখনো বেশ সুকৌশলে।

ফল প্রত্যাশী? প্রাপ্য চাও? কাজের মানে-
ফণা তুলে সময়ের সাপ আছে বিনোদনে।
ফলাফলে কি আসে যায়? যখন তুমি নাই-
ফলপ্রসূ সম্ভাবনায়, এসো মৌলিক গান গাই।

ফনি লাগাও চুলের ভাঁজে সিঁথি কাটো-
ফঙ্গবানি জীবন তোমার সামলে হাঁটো।
ফটিকচাঁদের দেখা পেতে কাছে এসো-
ফক্কিকা নয় প্রেমসাধনে, ন্যায্য ভালোবাসো।

ফলকলিপি লিখি আমরা, হাতের পরে হাত-
ফলদায়ক গাছ ঠিক জানে, ফুরিয়ে যায় রাত।


বদলে গেছে সময় এখন বদলানোই কাজ,
বসে আছো, দাঁড়িয়ে বাঁচো, দেখো কারুকাজ।
বদন মলিন কি আসে যায়? থাকলেই সব-
বখাটে কাল ধরেছে হাল, মরেছে অনুভব।

বইয়ের পাতায় লেখা আছে, নানান কথা,
বল দেখি- তুমি ঠিক কোন বইয়ের পাতা?
বচন মিছে পচন ধরলে ভাবনায় মগজে-
বজ্রকঠিন জীবনের কথা থাকেনা কাগজে।

বসন ছেঁড়া? আসনটাও নাই, খাদ্যের খোঁজ,
বগলদাবা হিশেবের খাতায়, দেনা যুক্ত রোজ।
বন্য মনে গৃহী ভাবনা, চক্ষুমুদে পগারপার-
বদ্ধমূল ধারণায় পুড়ে, জমে অন্তমুলে অন্ধকার।

বয়স কত? এখনি বিষাদ? উঠো এগিয়ে যাও-
বদান্যতা থাকলে মনে, যাবে গন্তব্যে কালের নাও।
 

ভয়ে আছো তুমি, ক্ষয় হবে তাই অকালে-
ভগ্নদশা পেরিয়ে যদি স্বচ্ছ চোখে তাকালে।
ভজন যবে শুদ্ধ হবে কাটবে অলীক ভয়-
ভবতরঙ্গের ঢেউয়ে তবে আর হবেনা ক্ষয়।

ভবন বানাও অট্টালিকা নিরাপত্তা বলয়-
ভগ্নমনে এখনো চলে প্রাত্যহিক প্রলয়।
ভয়চকিত অভয় তোমার আড়ালে হাসে-
ভরাডুবি নিশ্চিত জেনো এই অভ্যাসে।

ভয়াল নদীর ঢেউ জানেনা যাচ্ছে কোথা-
ভস্মাবৃত স্মৃতির কোণে অজান ব্যথা।
ভক্তিশূন্য হৃদয় মাঝার শক্তি কোথায়?
ভগ্নাংশ লুকিয়ে থাকে, দৃশ্যমান ব্যথায়।

ভগ্নাবশেষ পড়ে আছে, ভয়কে করো জয়-
ভগ্নোদ্যম অন্য কারও, মোটেও তোমার নয়।


মগ্ন মনে লগ্ন যাচো, অভ্রান্ত সময় পরিভ্রমণ-
মনের মতোই প্রাত্যহিক অমূল্য এ জীবন।
মজে আছি সময়পৃষ্ঠে, নিত্য বাঁধন-বাঁধা,
মরুতৃষ্ণা বুকে নিয়েই শুদ্ধতায় সুর সাধা।

মরেছে মানুষ, মরবে আরও, জন্মাবেও ফের-
মরা-বাঁচা, যাওয়া-আসা প্রত্যহ দেখছি ঢের।
মজ্জাগত ভাবনাগুলো দুলছে ভাবের দোলায়-
মনোমনে মনের তৃষা মরছে হেলায় ফেলায়।

মত্ত হয়ে বিষের মোহে একদিকে যাত্রা করো-
মধুপাত্র দূরে রেখে, অকালেই অযথা মরো।
মতিভ্রষ্ট মানুষ যেমন দেয়না নিজেকে পাহারা-
মঙ্গল আলো জ্বালেনা সে, দেখেনা স্বীয় চেহারা।

মন মরিলেই অচল গাড়ি, কোথায় ঘুরো মিছে?
মধ্যাহ্নে নিজের ছায়াও, থাকেনা নিজের পিছে।


প্রাণের বর্ণমালা সম্পর্কে-
প্রাণের বর্ণমালা নিয়ে লেখা মূলত বাংলা বর্ণের খেলা। প্রতিটি বর্ণের প্রতি আলাদা মমত্ববোধ লালন করেই কালের লিখন কর্তৃক রচিত হয়েছে এ ধারাবাহিক লেখাগুলো।

মূল বর্ণকে উপজীব্য করে এক একটি কবিতার শরীর গড়ে উঠেছে। ১৪ লাইনের প্রতিটি কবিতার প্রতিটি লাইন শুরু হয়েছে একটি নির্দিষ্ট বর্ণকে কেন্দ্র করে। প্রতিটি লাইনের শুরুর শব্দ গঠিত হয়েছে মূলবর্ণকে কেন্দ্র করে।

কিছু কবিতা অক্ষরবৃত্ত ছন্দে লেখা, কিছু কবিতায় কবির নিজস্ব নির্মাণশৈলী বিদ্যমান। প্রতিটি কবিতায় আ কার, ই কার, ঈ কার, ও কার সহ সকল কার বর্জন করা হয়েছে মূলবর্ণকে প্রাধান্য দিয়ে। এজন্য সৃষ্টি হয়েছে- মূলবর্ণ কেন্দ্রিক শব্দসংকট এবং কিছু অপ্রচলিত শব্দের বাধ্যতামূলক ব্যাবহার।

শব্দের আদিতে বসে শব্দ গঠন করতে না পারায়, কিছু কিছু বর্ণ বাদ দিতে হয়েছে। যেমন- ঋ ঙ, ঞ ইত্যাদি। শব্দের আদিতে বসে অর্থপূর্ণ শব্দ গঠনে সক্ষম এরকম ৩৮ টা বর্ণ দিয়ে ৩৮ টা কবিতার সমন্বয়ে রচিত হয়েছে প্রাণের বর্ণমালার লেখার ধারাক্রম। সবগুলো কবিতার জন্মকাল সেপ্টেম্বর- ২০১৫।

কবিতাগুলো শিশুপাঠ্য হিসেবে লেখা হয়নি। সকল বাংলা ভাষাভাষী মানুষকে বর্ণপ্রেমে উজ্জীবিত করতেই এই প্রয়াস। তাছাড়া শব্দপ্রেমী কবির অক্ষরের দায়শোধও আছে কিছুটা। শুধুমাত্র বর্ণের দিকে দৃষ্টি না দিলেও প্রতিটি কবিতা আলাদা আলাদা সময়, ঘটনা, ভাব, বিষয় আর অনুভব ধারণ করেছে, যা পাঠকের মনে কাব্যিক দোলা দিতে সক্ষম বলে কবির আশাবাদ।

আপনার মন্তব্য