প্রাণের বর্ণমালা : আজকের বর্ণ ‘য-শ’

 প্রকাশিত: ২০১৬-০২-২৮ ১৭:৩১:৪৮

কালের লিখন:


যতন করে রাখবো তোমায় হৃদয় মন্দিরে,
যখন ফিরবে দেখবে তখন, দেখাবো ধীরে।
যন্ত্র নয়, মানুষ হয়েই থাকবো তখনো স্থির-
যতকাল এ হৃদয়ে থাকে ভালোবাসার ভিড়।

যত্রতত্র তোমার কথাই, হয় মুখ্য আলোচনা-
যদিও জানি আমি ছাড়া তুমি সবার অচেনা।
যথোপযুক্ত কথার ভিড়ে, চিড় ধরে যায়-
যথার্থ বানী একাকী দূরে, হাসে একলা অসহায়।

যন্ত্রণা এই বুকের ভিতর গুমরে কাঁদে যদি-
যথাসর্বস্ব হারিয়ে যায় নিরালে একাই কাঁদি।
যতোই বলি মনের কথা ভিন্নতা থাকে ঘিরে-
যতিচিহ্ন কাঁটার মতো, নিরালে আসে ফিরে।

যথাক্রমে পৃষ্ঠা উল্টাই, তুমিই শুধু স্থির-
যত্নহীন পাখিদের জেনো, থাকেনা কোন নীড়।
 
 

রক্তে তোমার শক্ত প্লাবণ নতুনের ডাক-
রঙিন দিন নতুন সূর্য, জীর্ণতা দূরে যাক।
রসিক হলে পথের প্রেমে মত্ত থেকো ঠিক-
রচিত হয় নিষ্ঠা পেলে, নিশ্চিত কোন দিক।

রসদপূর্ণ ঘরে যদিও বিশদ ব্যখ্যা থাকে-
রহস্য হয় ঘন, জীবন যদি অন্য ছবি আঁকে।
রণকুশল নিজের জন্য, টিকে থাকাই মূল,
রক্ষী যদি ভক্ষণ করে, পাবেনা কোন ক‚ল।

রংমশালে আলো জ্বালো কালোর বিনাশ-
রবি বন্দনায় মগ্ন হলেই বিকল্প সন্ত্রাস।
রক্তআঁখি চতুর্দিকে সবাই দেখায় ভয়-
রক্তিম করো শাণিত ভাবনা, হবেনা ক্ষয়।

রক্তকমল ফুটেছে আবার স্নিগ্ধ আলোর দিন-
রক্ষাকবচ তোমার হাতেই, বাজাও সময় বীণ।


লড়াই চলে সমানে সমান, দুর্বল সবল নয়,
লক্ষ্যচ্যুত নিশানাতে, নিত্য মাধুর্যের ক্ষয়।
লতানো পাতায় লতিয়ে থাকে সকল অনুভব,
লক্ষণ দেখে ভক্ষণ হয়, মানুষ চিনে সব।

লম্বাদৌড়ে পিছিয়ে যাও পাইনা তোমায়-
লগ্নভ্রষ্ট চেতনা সকল অকালেই ঝরে যায়।
লয়হীন এক মহাযাত্রা, প্রলয় মূলে হানা-
লঘুচিত্ত খোঁজে বৃত্ত, যদিও আদতে দৃষ্টিকানা।

লব্ধ সময় স্তব্ধতা দেয়, যাপিত কোলাহল,
লগ্ন দেখে ভগ্ন মনে, চলে অহেতুল চলাচল।
লতার মতো জড়িয়ে থাকা প্যাঁচানো পথ-
লম্বা হয় পায়ের টানে, চলন্ত এক শপথ।

লজ্জা ভারি কমা ও দাড়ি ক্রমশ বাক্যছাড়া-
লবণাক্ত চোখের জলেও মিটে না কিছু খরা।


শতাব্দীর পুরনো অন্ধকার নেমেছে আবার-
শব্দহীন দ্যোতনায় সবকিছু জ্বলে পুড়ে ক্ষার।
শমন এখন অতি কমন রোগ, মরছে লোক,
শব হলে কি হয়? দুদিনেই ভুলে যায় শোক।

শতায়ু গাছের মতো সহনশীল এই সভ্যতা-
শরীরে এখনো স্থির মরা নদীর নাব্যতা।
শরবিদ্ধ হৃদয় জমিন, দেখার চোখে পর্দাটানা-
শরদিন্দু রাত্রিকালে জাগায় না আর দ্যোতনা।

শয়ন মানেই ঘুম নয় এখন, ক্লান্তির ছাপ,
শয্যাতলে নীরবে ঘুমায়, দিনের মনস্তাপ।
শব্দশাস্ত্র জানে না মন, জানে শুধু ভাষা-
শব্দার্থ না মানলেও, মানে ভাবমূলক আশা।

শস্য মজুদ ভাবনা তবুও, খাদ্যের খোঁজ-
শয্যা সাজাও এই শরতে জীবন্ত হও রোজ।
 

ষড়যন্ত্র চলছে ভীষণ গভীর চাল চলে-
ষষ্টিকান্ন সবাই মিলে ভাগে খাবে বলে।
ষষ্ঠীতলায় বসে আছো কার তালাশে?
ষষ্ঠাংশ মনের দান- মগ্ন অচিন বেশে।

ষড়জ সাধো, সাধন হোক লব্ধ প্রেমের-
ষষ্ঠইন্দ্র যোগ করো, প্রত্যাশা হোক ফের।
ষড়ৈশ্বর্য পাবে, যাবে ভ্রান্তি বিলাস কেটে,
ষড়দর্শন রেখো তোমার প্রাত্যহিক পাঠে।

ষষ্ঠীর কৃপা পৃথিবী ক্ষ্যাপা শুধুই মানুষ,
ষষ্ঠদুর্গ হামলে পড়ে, লাভ লোভের দোষ।
ষড়গুণে গুণান্বিত সেই মানুষের সাধন-
ষড়রিপু ধ্বংস করে নিটোল আয়োজন।

ষড়ঋতুর সোনার দেশে, কোন ষড়যন্ত্র নয়-
ষড়পদে আগুন জ্বালো, বোধের না হোক ক্ষয়।

প্রাণের বর্ণমালা সম্পর্কে-
প্রাণের বর্ণমালা নিয়ে লেখা মূলত বাংলা বর্ণের খেলা। প্রতিটি বর্ণের প্রতি আলাদা মমত্ববোধ লালন করেই কালের লিখন কর্তৃক রচিত হয়েছে এ ধারাবাহিক লেখাগুলো।

মূল বর্ণকে উপজীব্য করে এক একটি কবিতার শরীর গড়ে উঠেছে। ১৪ লাইনের প্রতিটি কবিতার প্রতিটি লাইন শুরু হয়েছে একটি নির্দিষ্ট বর্ণকে কেন্দ্র করে। প্রতিটি লাইনের শুরুর শব্দ গঠিত হয়েছে মূলবর্ণকে কেন্দ্র করে।

কিছু কবিতা অক্ষরবৃত্ত ছন্দে লেখা, কিছু কবিতায় কবির নিজস্ব নির্মাণশৈলী বিদ্যমান। প্রতিটি কবিতায় আ কার, ই কার, ঈ কার, ও কার সহ সকল কার বর্জন করা হয়েছে মূলবর্ণকে প্রাধান্য দিয়ে। এজন্য সৃষ্টি হয়েছে- মূলবর্ণ কেন্দ্রিক শব্দসংকট এবং কিছু অপ্রচলিত শব্দের বাধ্যতামূলক ব্যাবহার।

শব্দের আদিতে বসে শব্দ গঠন করতে না পারায়, কিছু কিছু বর্ণ বাদ দিতে হয়েছে। যেমন- ঋ ঙ, ঞ ইত্যাদি। শব্দের আদিতে বসে অর্থপূর্ণ শব্দ গঠনে সক্ষম এরকম ৩৮ টা বর্ণ দিয়ে ৩৮ টা কবিতার সমন্বয়ে রচিত হয়েছে প্রাণের বর্ণমালার লেখার ধারাক্রম। সবগুলো কবিতার জন্মকাল সেপ্টেম্বর- ২০১৫।

কবিতাগুলো শিশুপাঠ্য হিসেবে লেখা হয়নি। সকল বাংলা ভাষাভাষী মানুষকে বর্ণপ্রেমে উজ্জীবিত করতেই এই প্রয়াস। তাছাড়া শব্দপ্রেমী কবির অক্ষরের দায়শোধও আছে কিছুটা। শুধুমাত্র বর্ণের দিকে দৃষ্টি না দিলেও প্রতিটি কবিতা আলাদা আলাদা সময়, ঘটনা, ভাব, বিষয় আর অনুভব ধারণ করেছে, যা পাঠকের মনে কাব্যিক দোলা দিতে সক্ষম বলে কবির আশাবাদ।

আপনার মন্তব্য