মা

 প্রকাশিত: ২০১৬-০৫-০৮ ০২:১৮:৫৭

 আপডেট: ২০১৬-০৫-০৮ ০২:৪৪:৪৮

অঞ্জন আচার্য:

মা,
তুমি না থাকলে কে বলতো আমায়
হে রে, দুপুরে ঠিকঠাক খেয়েছিস?
পেট ভরেছিল তো? ঝাল-নুন সব ঠিক ছিল তো?

রাতের টেবিলে ভাত সাজিয়ে অভুক্ত পেটে কে প্রতীক্ষায় থাকতো?
কে বলতো আমায়- এত রাত করে বাড়ি ফিরিস, বড়ো ভয় করে!
দরজার ফাঁক গলে আলোর চিলতে দেখে
সকালের জলখাবার সাজানোর বেলায় কে বলতো শুনি-
এত রাত অবধি জেগে থাকিস কেন?
চোখের নীচে তো কালি জমে স্তর পড়ে গেছে।
[তুমিও অনিদ্রায় কাটিয়েছো রাত
নইলে কী করে জানলে রাত-জাগা আমি?]

প্রেমিকা শুনতে চায়- ভালোবাসি, স্ত্রী জানতে চায়- পাশে আছি
বিনিময় চায়। নইলে সাক্ষ্য কী প্রেম-ভালোবাসার?
সম্পর্কের প্রমাণাদি তুলে ধরতে হয় দলিল-দস্তাবেজসহ।
অথচ মা, তোমার কাছে নেই আমার কোনো ভালোবাসার চিরকুটও

মা,
তোমাকে কখনো বলিনি- ‘ভালোবাসি’
তবু কী অনায়াসেই টের পাও আমার ভেতরের সব
গোপন করতে চাইলেও ধরা পড়ে যাই
কী করে জানো- ‘আমি ভালো নেই?’
চায়ের আগে এক গ্লাস ঠাণ্ডা জল খেতে পারলে ভালো হতো
এমন গোপন ইচ্ছের কথাটাও কে জানালো তোমায়?

তুমি পড়তে জানো না বর্ণমালা
অথচ কী অবলীলায় পাঠ করে নাও আমাকে।
আমার প্রেম ভেঙে গেছে কবে,
চাকরির জন্যে হন্যে হয়ে ঘুরছি এদিক-ওদিক;
আজ বৃষ্টিতে ভিজেছি সারাদিন
হাত বাড়িয়ে শুকনো গামছাখানি তুলে দিয়ে বললে সেদিন-
শরীরটা তো ভিজে একসার। মুছে নে শিগগির! ঠাণ্ডা লেগে যাবে।

শাড়ির আঁচলটা ছেঁড়া ছিল, টেরই পাইনি
পাবোই-বা কেমন করে? ওটা তো কোমরে গুজে রাখো সব সময়
আমার ঘামে ভেজা মুখখানি মুছতে গিয়েই না লজ্জায় পড়লে!
মনে আছে মা?
যেই বার বাবা চলে গেল, বড় দা আমাদের সবাইকে জড়িয়ে সে কি কান্না!
ছোটটি তখন অনেক ছোট। নির্বাক চোখে তাকিয়ে দেখছিল।
অভাবের সেই দিনগুলোর কথা বড়ো মনে পড়ে আজকাল
রাত্তিরে এক থালা ভাত নিয়ে বসে আছি আমরা চার ভাই
তুমি হাত-পাখা দিয়ে বাতাস করতে করতে বলেছিলে-
পেট ভরেছে তোদের? আর একটু ভাত দিই?
জানি, ঘরে আর এক দানাও ভাত ছিল না সেদিন।
চাইলেও পারতে না দিতে। আমি বলেছিলাম- তুমি খাবে না?
মৃদু হেসে বলেছিলে, পরে খাবো- তোরা খেয়ে নে।
জল খেয়েও বহু রাত পার করা যায়, শেখাওনি কোনোদিন।

কেবলই দিয়ে গেলে সারাটা জীবন, বিনিময়ে চাওনি কিছুই
সন্ধ্যায় ঠাকুরের আসনে বসে তোমাকে কাঁদতে দেখেছি একদিন
বলতে শুনেছি- ‘ওরা যেন ভালো থাকে।’
সংস্কৃত শ্লোকগুলো পড়ে থাকে নির্বিকার, পড়তে পারো না। কেবল জেনেছো-
ওখানে কেবলই মঙ্গল-কথা।
ঈশ্বর তোমার কথা রেখেছেন। আমরা ভালো আছি।
তবু কেন কাঁদছো তুমি?

মাগো,
আমি ভেতর-কান্না মানুষ। প্রকাশ্যে শিখিনি অনুভূতি জানাতে।
তবে এইবার আমি কাঁদবো, চিৎকার করে কাঁদবো-
বলো, কী এমন লেখা আছে মঙ্গল-ব্রতে?
কী এমন মন্ত্র আছে- যাতে কান্না ভেসে আসে?

আপনার মন্তব্য