মনোজিৎকুমার দাস-এর ৫ কবিতা

 প্রকাশিত: ২০১৬-০৫-২৩ ১১:৪৯:২০

নিউজ ডেস্ক:

সুরঞ্জনা, তুমি কথা রাখোনি
(কবি জীবনানন্দের উদ্দেশে নিবেদিত)
        
সুরঞ্জনা, তুমি  কথা রাখোনি!
তারা ভরা রাতে তুমি কি ওই যুবকের সাথে
কথা বলো নি ,কী কথা ছিল তার সাথে?

সুরঞ্জনা, তুমি আজ মৃত!
তুমি কথা না রেখে
ওই যুবকের সাথে গিয়ে কি ভাল করেছিলে?

সুরঞ্জনা, আজ তুমি মৃত!
কত শত সুরঞ্জনা
তোমারই মতো আজ মৃত।

সে  বাংলার এক মেয়ে
অধর কামরাঙার রঙে রাঙা
ওষ্ঠ করমোচার রঙে লাল
সে  বাংলার  এক মেয়ে;
অলকগুচ্ছে শ্রাবণ মেঘের ঘটা
আঁখি পল্লব গোধূলির রঙে রাঙা
সে বাংলার এক মেয়ে;
দেহবল্লরী সুষমায় সুষমামণ্ডিত
হাসিতে শরত মেঘের শুভ্রতা
সে বাংলার এক মেয়ে;

ছন্দের দোলায় হেমন্ত- জোসনা
লাস্যময় চলনবলনে গতিময়তা
সে বাংলার এক মেয়ে।


                 জীবনানন্দ দাশ
                 খয়েরী ডানার শালিকের চোখ
                 মরা মাছের মতো ঘোলাটে
                 শঙ্খচিলেরা নিষাদের তীরে
                 মরে গেছে সেই সে কবে
                 ধবল বকের দলের ওড়াওড়ি নেই আজ
                 কির্তনখোলার জল ছুঁয়ে গাঙ শালিকেরা
                 যায় না ওড়ে আজ সকাল কিংবা বিকেলে
                 জলসিড়ি, ধানসিড়ি মরে গেছে সেই সে কবে
                 বেহুলা ভাসিয়েছিল ভেলা গাগুড়ের যে জলে
                 সে জল শুকায়ে গিয়েছে সেই সে কবে
                 আবার আসিতে চেয়েছিল এই বাংলায়
                 মানুষ নয়, শালিখ, কাক কিংবা হাঁস হয়ে
                 কিশোরীর পায়ের ঘুঘুরের রুনুঝুন
                 শুনতে পাবে কি হাঁস হয়ে কলমির
                 গন্ধ ভরা জলে ভেসে ভেসে।
                 হায়! যে বেশেই তুমি আসো না কেন
                 কোথায়ও খুঁজে পাবে নাকে তারে
                 দেখিবে,
                 অদ্ভুত আঁধার গাঢ় থেকে গাঢ়তর
                 হয়েছে আরো আরো;
                 অন্ধ যারা অনেক অনেক চোখে দেখে তারা,
                 তাদের ছাড়া সব কিছুই অচল আজ বেশি বেশি।
                 দেখিবে,
                 চোখে দেখে যারা
                 শিয়াল শকুনের খাদ্য নয় তারা,
                 তারা আজ অন্ধদেরই খাদ্য বেশি বেশি।

 

চাঁদের রোদ ও মালবিকা
আকাশে যুবতী চাঁদ
দোতলার ছাদে চাঁদের রোদ
অলিন্দে চাঁদের লুকোচুরি খেলা
দোতলায় বন্ধ প্রকোষ্টে মালবিকা একা,
বাতায়নের বন্ধ কপাটে যুবতী রোদ--
ভিতরে প্রবেশ নিষেধ।

রুদ্ধ বাতায়নের পাশে মালবিকা-
যুবতী চাঁদের রোদ
যেন এক নিষিদ্ধ ফল।
প্রকোষ্টে বন্ধ নারীর হৃদয়-অলিন্দে
এখনো ফোটেনি গোলাপ কলি।

যুবতী নারীর রোদ ভরা আঙিনা
যেন এক আঁধারপুরী মালবিকার হৃদয়পুরে।

 

                     কোথায় হারিয়ে গেলে
                     লাল আবিরে রাঙানো দিনটাতে
                     তুমি হারিয়ে গেলে মনের আকাশ থেকে,
                     তোমার কি মনে পড়ে না লাল আবির,
                     আর রক্ত রাঙা শিমুলের কথা!

                     আঠারোটা বসন্ত পেরিয়ে গেছে
                     আজ আর তুমি সেদিনের বালিকাটি নও
                     কেমন করে ভুলতে পারলে সেই বসন্তের
                     লাল আবিরকে তুমি!

                     তোমার সেই চিরচেনা আঙ্গিনায় আজও
                     বাসন্তিক সন্ধ্যায় লাল আবির রঙ ছড়ায়,
                     বসন্ত বাতাসে আজও এ আঙ্গিনা
                     শিমুলের পুষ্পরেণু লাল আবিরে মিশে যায়।

                     কোথায় হারিয়ে গেলে রঙ্গিন এ সন্ধ্যায়
                     লাবণ্য!

আপনার মন্তব্য