অনুভব আহমেদের ৩ কবিতা

 প্রকাশিত: ২০১৭-০৬-২৬ ০১:৪২:২৮

চিত্রকর: সালভাদর দালি

অনুভব আহমেদ :

হেম

আমাকে ভুলে গেছো ভেবে
হেমের কপালে চুমু খাও
তোমার ঠোঁটের ডগায় উঠে আসে পুরনো ত্বকের স্বাদ, আমি
বিশ্রী এক ব্যথায় ব্যাকুল চেপে ধরো
আস্তিনের মতো লেপ্টে থাকে হেম
পৌঁছাতে পারে না গভীরে।

ভুলে গেছো ভেবে পা বাড়াতেই
ভূমধ্য সাগর থেকে তোমার দিকে ধেই ধেই করে ধেয়ে আসে শিশির
স্মৃতির নিঃসঙ্গ করিডোরে
আরও নিবিষ্ট হয়ে ওঠো হেমের শরীরে
কাকে খুঁজো তুমি ওভাবে?
আষাঢ়ের মিহি সুতো নিপুণ আর্দ্রতায় তোমাকে নিয়ে আসে আমার দিকে
তোমার টানেলে প্রবাহিত প্রতিটা স্রোত আজও আমার কাছেই এসে থামে।

ভাবছো পেরিয়ে গেছো, যাবে
রোজ উল্টাচ্ছো পাতা তার
তুলে রাখছো অবসন্ন বুকসেলফে
অথচ ফিরে যাচ্ছ সেই বইয়ে, পড়ছ তাকে
যাকে পড়া হয়না বহুকাল
যে নেই তোমার সাজানো বুকসেলফে
আওড়াচ্ছ তাকেই, উল্টাচ্ছ পাতা হেমের।

হেম
তোমার নিজস্ব নারী
এ পরিচয়ের পর বধির হয়েছে আমাদের মধ্যকার শব্দের সমস্ত মাত্রা
উচ্চারণশৈলী লতিয়ে ওঠা ত্রোস্ত দ্বিধায়
দুটি বিন্দুর দূরত্ব একই সরলরেখায় বহুদূর।

শব্দের যেকোনো পার্বণে আমাদের দেখা হয়ে যায়
কবিতার নিখাদ বুননে জানাও
তুমি সে, যাকে আমি মনে রাখিনি আর।
হেমের উজ্জ্বল চোখের তারায় পাক খাওয়া বিষন্নতা
নখের ডগায় লেগে থাকা তীব্র নীরবতার
দিকে তাকিয়ে ভাবি
এই যে এতোসব উৎসব, আলো, কবিতা, রাত
এই এতো আয়োজনের ভেতরে হেম কোথায়?


মুখ

কাঁটাতারে ঝুলে থাকা মৃত চড়ুইটাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ময়নাতদন্তে
আসলে এর পরই মীমাংসীত হবে আরও একটা হত্যা অথবা আত্মহত্যা।

ময়নাতদন্তের পর ফরেনসিক রিপোর্টে ডাক্তার লিখলেন- কোথাও কোনো আঘাত নেই, ক্ষত নেই, বিষক্রিয়া নেই
মৃত্যুর কারণ- হৃদপিণ্ডের গভীরে একটি বেকসুর মুখ।


কাঠঠোকরা

আমাকে তুমি বলে দিতে পারো বলে থামিয়ে দিলে কোলাহল
ওভাবে বহুদিন কেউ স্পর্শ করেনি আমায়
যেভাবে তোমার পাঁচটা আঙুল কিনে নিলো অবলীলায়
কেউ বললো অন্যায় করছিস, করছিস অযাচার
শুধু এইটুকু জানতাম
কাঠঠোকরার মতো পাঁচটি আঙুল খুঁড়ে চলেছে হৃদয় আমার
ভালোবাসছি আবার
শুধুমাত্র সেই পাঁচটা আঙুলকে তোমার
যেখানে আমি রাখতে চেয়েছি এতোকাল
একটা নির্জন রাতের অনাহার
একটা বিচ্ছিন্ন সমুদ্রতট
অনাহূত প্রবল ঝড়, গুড়ো কান্নার দমক
একটা ঝরা পলাশের দলিত জীবন
একটা আস্ত আমাকে
তোমাকে নয়, চাইছি আবার
শুধু মাত্র পাঁচটা আঙুলকে তোমার ভালোবেসে আমার।

আপনার মন্তব্য