মাধবীলতা

 প্রকাশিত: ২০১৭-০৮-১৫ ২৩:২১:০৯

 আপডেট: ২০১৭-০৮-১৬ ০১:২০:৪১

হোমায়রা আহমেদ:

মাধবীলতা
কাল সন্ধ্যেটা যেমন স্বপ্নের মতো বন্ধুতা আর কাজের শেকলে মুক্তো গাঁথল, আজকের সকালটা তেমনি অভব্য অশালীনতা দেখাল। জীবন এমনই, কোথাও রংধনুকে বৃষ্টি বরণ জলকেলি; কোথাও আবার ক্লেদে বন্দি কূপমণ্ডূকের তার স্বরে নিনাদ কর্ণপটহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা পরীক্ষা করে। তা করুক।

করতে আর করাতে ব্যাখ্যাতীত অপারগতা থাকলে যখন তা নিষ্ফল আক্রোশে ফুঁসে উঠে অসুন্দরের প্রতিমা গড়ে, তখনই দায়িত্ব বাড়ে সুন্দরের; আরো সুন্দর হয়ে ওঠার, করে তোলার আর অসুন্দর না দেখবার। ঐ একটা সাধনায় কেটে যায় বেলা, অবেলার আবাহন শুনতে হয় কম; শোনাবার দায় তো থাকেই না। কক্ষনো ছিলনা।

জলের আগুন, মনে-দেহে দগ্ধ করে আচম্বিতে মনের দেয়ালে শৈশবের রঙে গ্রাফাইটের দাগ কাটে— ‘কাদম্বিনী পাকা লোক, ঠিক জানিতেন--ভাঙ্গা হাঁড়ি জোড়া লাগেনা’- বা না খোলা লেফাফায় শিউলিগন্ধী শরত কখন কমলা থেকে হলদেটে হয়ে যায়। ও পাত্রে জল জমে না মোটে, কেবলই জঞ্জাল!

জঞ্জালে জংগুলে আইন চলে— মারো নয়তো মরো। আইনজ্ঞরা তখন আনন্দিত হন।‘বকরী ঈদে’ পাঁঠা বলির বদলে, আড়াই বছরের দাবনা আর দাঁতের তাগড়া ষাঁড়-হতে-পারত এঁড়ে বাছুর কেনার বাজেট করেন।

বাজেট ফেল করে কখনো, কখনো পাশ; নির্ভর করে পাশের দেশের ট্রানজিট কখন ‘লিগ্যাল ইম্পোর্ট’, আর কখন ‘ব্ল্যাক মার্কেট’-এর তকমা কোথায় উৎকোচ দিয়ে পায়, তার ওপর। গরুরা মোটাতাজাকৃত হলেও বিফ চিলি হয়ে মাইক্রোওয়েভে উঠবে, তার নিশ্চয়তা নেই মোটে।

নিশ্চয়তা আছে কেবল একটা মানুষের। যে মানুষ ‘মন-মানুষ’ হতে গিয়ে ‘ফানুস’ হয়ে যাবার সস্তা তর্কে মাতে না। সে মানুষ পড়শি না সুজন মাঝি না মায়াবন বিহারিনী, জানেনা কেউ। জানতে নেইও।

কেবল অপরাজিতার ঝোপের পাশে মাধবীলতারা আলোর মুখে উচ্ছ্বসিত হয়ে বেড়ে ওঠে; সাঁঝের আলোতেই তার ভোর। রাতের আঁধারও তার না বর্ণ কাড়ে, না গন্ধ।

ও ফুল নয় যে, তারা-ঝরা স্বপ্নেরা রক্ত ঝরিয়ে যখন বেদনা জমিয়ে ফেলে; আর তাতে পড়ে পথের ধুলোর আদুরে প্রলেপ তখন বেগুনি হয় ও প্রস্ফুটন।

পুষ্প নয় পদ্য! জীবনের। মানুষের।

কখনো কখনো মানুষীরও।

আপনার মন্তব্য