শ্রদ্ধা: প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ

 প্রকাশিত: ২০১৮-১০-২২ ১৮:৪৯:৫৪

লিটন দেব জয়:

বরিশালের ছেলে মিলু’র প্রকৃতি খুব প্রিয় ছিল। এই বয়সী অন্য ছেলেদের মতো না সে। অনেকটা ভাবুক আর লাজুক প্রকৃতির বলা যায়। খেলাধুলা আর প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতেই তাঁর যতো সুখ! স্কুল জীবনে পড়ালেখার পাশাপাশি লেখালেখি আর ছবি আঁকার অভ্যাস গড়ে উঠে তাঁর। এভাবেই সময় বয়ে চলে।

ছেলেটি মেট্রিকেলুশন আর ইন্টারমিডিয়েটে প্রথম বিভাগসহ পাস করে। চোখে স্বপ্ন নিয়ে বরিশাল ছেড়ে ভর্তি হয় কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। পড়ালেখার পাশাপাশি লেখালেখিও চলে সমান তালে। ১৯১৯ সালে ইংরেজিতে অনার্সসহ বি.এ. পাশ করে মিলু। (পরবর্তীতে ১৯২১ মাস্টার্স শেষ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে)।

গোপনে গোপনে অনেক কবিতা রচনা করলেও কোথাও তা ছাপা হয়নি তখন পর্যন্ত। মনের মধ্যে একটা চাপা ক্ষোভ বাসা বাঁধে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে একটি কবিতা ছাপার জন্য দেয়া হলো পত্রিকায় ‘বর্ষা আবাহন’ নামে। এক সকালে হাতে আসলো চির কাঙ্ক্ষিত পত্রিকার ছাপা একটি কপি। প্রথম লেখা প্রকাশ বলে কথা। আনন্দের আর সীমা নেই মিলু’র মনে। খেয়াল করে দেখা গেলো কবির নামের জায়গায় শুধু ‘শ্রী’ শব্দটা লেখা। এটা কোন কথা হলো!

পুরো নাম লিখলে এমন কী ক্ষতি হতো পত্রিকাওয়ালাদের!

বেশ ক’দিন পর কবিতা আলোচিত হওয়ায় পত্রিকার বর্ষশেষের নির্ঘণ্ট সূচিতে তাঁর পূর্ণ নাম ছাপা হয়। শ্রী জীবনানন্দ দাশগুপ্ত, বিএ। তিনি আর কেউ নন; রূপসী বাংলার মহাপ্রেমিক কবি ‘জীবনানন্দ দাশ’। বাংলা ভাষার আধুনিক কবিতার পথপ্রদর্শক বলা হয় তাঁকে। তাঁর রচিত অসংখ্য কবিতা দুই বাংলার মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ‘বনলতা সেন’, ‘রূপসী বাংলা’, ‘ঝরা পালক’, ‘মহাপৃথিবী’, ‘সুদর্শনা’ তাঁর রচিত বিখ্যাত সব কাব্যগ্রন্থ।

কবির ‘আবার আসিব ফিরে’ কিংবদন্তিতুল্য কবিতার একটি। কবির মাতা কুসুমকুমারী দাশ ও কবি ছিলেন। তাঁর রচিত ‘আদর্শ ছেলে’ পাঠ্যবইয়ে স্থান পেয়েছে।

তবে, খ্যাতি-জনপ্রিয়তা সবই জুটেছে মৃত্যুর পর। এজন্য তাঁর প্রচার বিমুখতাকে দায়ী করেন অনেকে! ব্যক্তি জীবনের বেশিরভাগ সময় কবির কেটেছে অভাব অনটনে। সামান্য একটা চাকরীর জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে এই অসামান্য প্রতিভাবান মানুষটিকে। ।

কলকাতায় গত এক’শ বছরের ট্রাম দুর্ঘটনায় একমাত্র মৃত্যুটিও ছিল কবি জীবনানন্দ দাশের। অবাক ব্যাপার হলো, মৃত্যুর আগে তিনি নাকি প্রায়ই ট্রাম দুর্ঘটনার কথা ভাবতেন!

আজ তাঁর প্রয়াণ দিবস (২২ অক্টোবর ১৯৫৪)। গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করছি প্রিয় কবিকে।

আপনার মন্তব্য