প্রকাশকদের আগেভাগেই ‘সবক’ দিয়ে রাখল বাংলা একাডেমি

 প্রকাশিত: ২০১৬-০১-৩১ ০০:৩৮:০৭

 আপডেট: ২০১৬-০১-৩১ ১৪:২৬:৩৪

সিলেটটুডে ডেস্ক:

গত বছর মেলার মাঝপথে হেফাজতের হুমকির মুখে কানকথার ওপর ভিত্তি করেই প্রকাশনা সংস্থা রোদেলাকে নিষিদ্ধ করেছিল বাংলা একাডেমি। এবার আগেভাগেই অনেকটা হুশিয়ারির সুরে প্রকাশকদের 'উস্কানিমূলক লেখা' প্রকাশ না করতে 'সবক' দিলেন  বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. শামসুজ্জামান খান। একই সঙ্গে তিনি অমর একুশে গ্রন্থমেলা চলার সময় লেখকদের মেলার আশেপাশের এলাকায় সাবধানে চলাচলের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

শনিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

গত বছরের একুশে গ্রন্থমেলা চলাকালীন সময়ে (১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫) হেফাজতে ইসলামের হুমকির মুখে রোদেলা প্রকাশনীর স্টল বাতিলের পর এবার মেলা শুরুর আগেই বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক প্রকাশকদের উদ্দেশ করে এসব কথা বললেন।  

উল্লেখ্য, ইরানি লেখক আলি দস্তি’র ‘বিশতো সেহ সাল’ নামে একটি বইয়ের অনুবাদ ‘নবি মুহাম্মদের ২৩ বছর’ নামে প্রকাশ করে রোদেলা প্রকাশনী। বইটি ভাষান্তর করেছেন আবুল কাশেম ও সৈকত চৌধুরী। বইটি ইংরেজিতে ‘২৩ ইয়ার্স, এ স্টাডি অব প্রোফেটিক ক্যারিয়ার অব মুহাম্মদ’ নামে প্রকাশিত হয়।  বইটি প্রকাশের পর হেফাজত ইসলাম সহ কতিপয় ধর্মাশ্রিত রাজনৈতিক দলের নেতারা ধর্মের অবমাননা হচ্ছে এ অভিযোগ এনে বইমেলা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার পর বাংলা একাডেমি প্রথমে তড়িঘড়ি করে বইমেলা থেকে সে বই প্রত্যাহারের জন্যে প্রকাশককে নির্দেশ দেয়। এবং এরপর কোনরূপ আলোচনা ব্যতিরেকে রোদেলা প্রকাশনীর স্টল বন্ধ করে দেয়।

তখন বাংলা একাডেমির শামসুজ্জামান খান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন- ওদের (রোদেলা প্রকাশনী) একটা বই নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। আমরা ওদের স্টলটা আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। তবে তিনি স্বীকার করেন যে বাংলা একাডেমির কেউ বইটি পড়েননি তবে শুনেছেন মহানবীর ওপর কিছু বিরূপ মন্তব্য রয়েছে বইটিতে।

এর বাইরে, গত বছরের অমর একুশে গ্রন্থমেলা চলাকালীন ২৬ ফেব্রুয়ারি টিএসসি এলাকায় ধর্মীয় সন্ত্রাসীদের চাপাতির আঘাতে খুন হন বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়। একই বছরের ১২ মে সিলেটে খুন হন বিজ্ঞান লেখক ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ।

৩১ অক্টোবর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় নিজ প্রতিষ্ঠানে খুন হন অভিজিতের বইয়ের প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন। তিনি তার জাগৃতি প্রকাশনী থেকে অভিজিতের জনপ্রিয় বই ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ প্রকাশ করেছিলেন। একই দিনে চাপাতির আঘাতে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন অভিজিৎ রায়ে বইয়ের প্রকাশক শুদ্ধস্বরের আহমেদুর রশিদ টুটুল।
 
এই তিন হত্যাকাণ্ডের পর আবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাঙালির প্রাণের উৎসব বইমেলা। মেলা উপলক্ষে গতবারের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে নেয়া হচ্ছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। শনিবার এ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আয়োজন করে সেই সংবাদ সম্মেলন।

বই মেলায় এ দুই লেখক ও প্রকাশকের স্মৃতি নিয়ে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে কি আয়োজন থাকছে এমন প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে কোনো কিছু করছি না। তাদের প্রকাশনার জন্য স্টল নির্ধারণ করে দিয়েছি। তারা চাইলে সেখানে তাদের ছবি রাখতে পারে।’
 
মেলার উদ্বোধনের দিন তাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা যায় কি না সাংবাদিকদের এমন প্রস্তাবের জবাবে শামসুজ্জামান খান প্রধানমন্ত্রী আসবেন এ অজুহাত দেখিয়ে বলেন, ‘উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আসবেন। ওইদিনের সব বিষয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী এসএসএফ দেখবে।’

শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘গত বছর বই মেলার অদূরে ও পরবর্তী সময়ে দু’টি দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। একজন লেখক ও একজন প্রকাশক নিহত হয়েছেন। আমরা চাইনা এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক। আমরা এবারের বইমেলায় নিরাপত্তার দিকটা বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখছি। আমরা গত বছরের জুন মাস থেকে এসব বিষয় নিয়ে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো, মন্ত্রণালয়, আন্তঃমন্ত্রণালয়, ফায়ার ব্রিগেড সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করেছি। আশা করি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্ছিদ্র হবে।’

তিনি বলেন, ‘এবারের মেলায় টিএসসির উল্টো দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটের পাশে এবং দোয়েল চত্বর এলাকায় র‌্যাবের ক্যাম্প থাকবে। এছাড়া থাকবে পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। সমগ্র মেলা জুড়ে থাকবে দুই শতাধিক ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা এবং পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিটিউট, শিশু একাডেমি, তিন নেতার মাজার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ এলাকায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হবে।’

 

আপনার মন্তব্য