গোপীচাঁদ সিংহের হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপিসহ ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ গ্রন্থ প্রকাশ

 প্রকাশিত: ২০২০-০২-১৫ ২১:৩৫:২৪

সিলেটটুডে ডেস্ক:

জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উপলক্ষে দ্বিভাষী গীতিকবি গোপীচাঁদ সিংহের হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপিসহ ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ গ্রন্থের পুন:প্রকাশ হয়েছে।

শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার কালারায়বিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে গোপীচাঁদ-নেম্বী মেমোরিয়াল একাডেমি আয়োজিত এ উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভা শুরুর আগে মঞ্চে স্থাপিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও প্রয়াত গীতিকবি গোপীচাঁদ সিংহের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন গোপীচাঁদ-নেম্বী মেমোরিয়াল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও প্রয়াত গীতিকবি গোপীচাঁদ সিংহের সহধর্মিণী নেম্বী দেবী ও তার পরিবারবর্গ।

১৯৭১ সালে প্রথম প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ গ্রন্থের সম্পাদক ও প্রকাশক শিক্ষাবিদ সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন গবেষক ও লেখক ড. সেলু বাসিত, মুখ্য আলোচক ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আলমগীর স্বপন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে গবেষক ও লেখক ড. সেলু বাসিত বলেন, গোপীচাঁদ সিংহের মত দেশপ্রেমী মুজিবভক্তরা মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছেন বলেই মণিপুরী, চাশ্রমিকসহ সর্বস্তরের মানুষ সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ, জীবন উৎসর্গেও পিছিয়ে থাকেননি। শহীদ হয়েছেন গিরিন্দ্র সিংহ, সার্বভৌম শর্ম্মা, ভুবেন সিংহসহ আরও অনেকে। একাত্তরের অগ্নিঝরা দিনে গণসংগীত রচনা ও নিজ সংগীত দল নিয়ে প্রত্যন্ত এলাকার সর্বস্তরের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করতে দ্বিভাষী গীতিকবি গোপীচাঁদ সিংহের রয়েছে বিরাট অবদান। তাঁর ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ গ্রন্থটি মহান মুক্তিসংগ্রামে নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ভূমিকার এক অকাট্য দলিল। পুস্তিকাটি পৌঁছে দেয়ার পর বঙ্গবন্ধু তাঁকে সম্মাননা ও জানিয়েছিলেন।

আলোচনা সভার মুখ্য আলোচক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আলমগীর স্বপন বলেন, একাত্তরের অগ্নিঝরা দিনে প্রত্যন্ত এলাকার জন্ম নেয়া গীতিকবি গোপীচাঁদ সিংহ গণসংগীত রচনা, সংগীতদল নিয়ে পরিবেশন, মুক্তিযুদ্ধে নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীসহ সর্বসাধারণকে উদ্বুদ্ধকরণ ইতিহাস হয়ে থাকবে। তাঁর এমন কর্মকাণ্ড দেশ-জাতির জন্য নিবেদিত হতে শেখাবে আগামী প্রজন্মকে।

মুক্তিযোদ্ধাসহ বক্তারা তাদের বক্তব্যে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করতে গীতিকবি গোপীচাঁদ সিংহের এমন সাহসী ভূমিকার কথা এখনও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণে উঠে আসে। এমন ত্যাগী, দেশপ্রেমী, মুজিবপ্রেমীদের স্মৃতি রক্ষায় উদ্যোগ নেয়ার মুজিব বর্ষই মুখ্য সময়।

আলোচনা সভায় ঘোষণা দেয়া হয় মুজিববর্ষ থেকে দেশপ্রেমী, মুজিবপ্রেমী গীতিকবি গোপীচাঁদ সিংহের জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী জাতীয়ভাবে পালনের। মণিপুরীদের জাতীয় সংগঠন মণিপুরী সমাজকল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনন্দ মোহন সিংহ এ ঘোষণা দেন।

প্রয়াত গৗতিকবি গোপীচাঁদ সিংহের দুই পুত্র ধীরেন্দ্র কুমার সিংহ ও সংগ্রাম সিংহের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, লেখক ও গবেষক ড. রণজিত সিংহ, কবি ও নাট্যকার, মণিপুরী থিয়েটার’র সভাপতি শুভাশিস সিনহা, লেখক ও গবেষক আহমদ সিরাজ, মণিপুরী সমাজকল্যাণ সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনন্দ মোহন সিংহ, মণিপুরী আদিবাসী ফোরাম’র সাধারণ সম্পাদক সমরজিত সিংহ, বাংলাদেশ মণিপুরী যুবকল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ সিংহ, মণিপুরী তথ্য ও গবেষণা সংস্থা পৌরির সাধারণ সম্পাদক সুশীল কুমার সিংহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী সিংহ, বিশ্বেশ্বর সিংহ, প্রয়াত গীতিকবি গোপীচাঁদ সিংহের অন্যতম সহচর ওস্তাদ গীতশ্রী চন্দ্র মোহন সিংহ, নিরঞ্জন দেব, রাজনীতিক ও সমাজসেবী হাবিবুর রহমান চৌধুরী, সাংবাদিক শাব্বির এলাহী, হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ, কমলগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নিরঞ্জন দেব। আলোচনা সভায় মণিপুরী ভাষার প্রখ্যাত কবি ব্রজেন্দ্র কুমার সিংহ, সাংবাদিক ইসহাক কাজলসহ প্রয়াতদের স্মরণে নীরবতা পালন করা হয়।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করতে ও স্বাধীনতা অর্জনের প্রারম্ভে প্রত্যন্ত এলাকায় সংগীতদলের পরিবেশিত ও গোপীচাঁদ সিংহের রচিত গণসংগীত নিয়ে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ পুস্তিকাটি সম্পাদনা করেছেন লেখক ও গবেষক ড. সেলু বাসিত। ঢাকা বইমেলার ৩২৯ ও ৩৩০ শব্দকোষ প্রকাশনীর স্টলে বইটি পাওয়া যাচ্ছে। মূল্য, ১২০ টাকা।

আপনার মন্তব্য