এবার কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার ছিনতাই করলো প্রথম আলো!

প্রথম আলো একটি প্রবর্তিত পুরস্কারকে দিনদুপুরে ছিনতাই করেছে। জেনে শুনে বুঝেই ছিনতাই করেছে। তার মানে তিনগুণ বেশি অপরাধ করেছে। তিনগুণ বেশি পাপ করেছে। যা একটি জঘন্য অন্যায়। এই অন্যায়কে প্রকৃত লেখক সমাজ মানতে পারে না। আমিও মানতে পারলাম না

 প্রকাশিত: ২০১৫-০১-২৮ ২৩:৫৫:০৫

 আপডেট: ২০১৭-০৮-১৬ ১৮:৪১:০৮

রেজা ঘটক:

যতদূর মনে পড়ে, বাংলাদেশে রূপসী বাংলার কবি 'জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার' নামে একটি পুরস্কার ২০০৭ সাল থেকে চালু আছে। আর এই পুরস্কার প্রদানের দ্বিতীয় অনুষ্ঠানে ২০০৮ সালে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরে আমি নিজে উপস্থিত ছিলাম। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কারটি যৌথভাবে তিনটি সংগঠন প্রদান করে। সংগঠন তিনটি হল 'ধানসিড়ি সাহিত্য সৈকত', 'ছোটকাগজ দূর্বা' ও 'আড্ডা ধানসিড়ি'। আর প্রতি বছর দুইজন সাহিত্যিককে (গদ্য ও পদ্য) এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। এখন পর্যন্ত কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার মোট চারবার প্রদান করা হয়েছে। 
 
২০০৭ সালে প্রথমবার এই পুরস্কার পেয়েছিলেন কাব্যসাহিত্যে কবি আসাদ মান্নান এবং গদ্যসাহিত্যে কথাসাহিত্যিক সালমা বাণী। ২০০৮ সালে এই পুরস্কার পেয়েছিলেন কাব্যসাহিত্যে কবি কামাল চৌধুরী ও গদ্যসাহিত্যে কথাসাহিত্যিক সুশান্ত মজুমদার। তারপর নানান জটিলতায় এই পুরস্কার প্রদান কয়েক বছর বন্ধ ছিল। ২০১৩ সালে এই পুরস্কার পেয়েছিলেন কাব্যসাহিত্যে কবি খোন্দকার আশরাফ হোসেন ও গদ্যসাহিত্যে কথাসাহিত্যিক শান্তনু কায়সার। আর গত বছর মানে ২০১৪ সালে এই পুরস্কার পেয়েছেন কাব্যসাহিত্যে কবি খালেদ হোসাইন ও গদ্যসাহিত্যে কথাসাহিত্যিক ইমতিয়ার শামীম। ২০১৪ সাল থেকে তিনটি সংগঠনের সাথে আরেকটি সংগঠন যুক্ত হয়, যার নাম রাইট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। প্রতি বছর পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি ও কথাসাহিত্যিককে পুরস্কার বাবদ মানপত্র, ক্রেস্ট আর নগদ টাকা প্রদান করা হয়।
 
কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার বরিশাল থেকে পরিচালিত কয়েকটি সংগঠন প্রথম প্রবর্তন করেছিল। আর যে চারবার এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে সেখানে দেশের প্রতিথযশা কবি ও কথাসাহিত্যিকগণ প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি ও কথাসাহিত্যিককে পুরস্কার প্রদান করেছেন। প্রতিবছর জীবনানন্দ দাশের জন্মমাস ফেব্রুয়ারিতে পুরষ্কারপ্রাপ্ত সাহিত্যিকদের নাম ঘোষণা করে থাকে আয়োজকরা। আর পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় জীবনানন্দ দাশের মহাপ্রয়ানের মাস অক্টোবর মাসে।
 
কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ব্লগে দেখলাম দেশের একটি প্রথম শ্রেণীর দৈনিক প্রথম আলো নতুন করে আরেকটি কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার প্রবর্তন করেছে। আর এ বছর সেই পুরস্কার পেয়েছেন তরুণ কবি সাইয়েদ জামিল। প্রথম আলোর বক্তব্য হল, একজন বিদেশি গবেষক যার নাম ক্লিনটন বি সিলি, যিনি কবি জীবনানন্দ দাশের উপর গবেষণা করেছেন। তিনি এই পুরস্কারের জন্য বাংলাদেশে একটি প্লাটফরম খুঁজেছিলেন। আর তার নাকি প্লাটফরম হিসেবে পছন্দ প্রথম আলো। সত্য মিথ্যা জানি না। প্রথম আলো ও ক্লিনটন বি সিলি প্রবর্তিত কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কারের নতুনত্ব হল, আগের পুরস্কারটি দেওয়া হচ্ছে প্রকাশিত রচনার উপর। আর প্রথম আলো দিচ্ছে প্রকাশিতব্য পাণ্ডুলিপির উপর। যিনি পুরস্কার পাবেন তার পাণ্ডুলিপি বই আকারে প্রকাশ করবে প্রথম আলোর সিস্টার কনসার্ন প্রকাশনা প্রথমা।
 
স্পষ্টত এখানে প্রথম আলো বাংলাদেশে প্রবর্তিত একটি পুরস্কারকে দিনদুপুরে ছিনতাই করেছে। প্রথম আলো'র ঘটে বুদ্ধি আছে বটে!!! তাই তারা পুরস্কারটি সরাসরি না দিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট এসাইনমেন্ট অনুযায়ী দিচ্ছে। মানে প্রকাশিত গ্রন্থের উপর না দিয়ে নিজেদের পছন্দসই ব্যক্তিকে বলছে তুমি পাণ্ডুলিপি জমা দাও, তোমাকেই পুরস্কার দেওয়া হবে। যা দিয়ে কৌশলে প্রথম আলো মিস্টার ক্লিনটন বি সিলি সাহেব-এর টাকাটা হালাল করার একটা উপায় বের করেছে।
 
প্রথম আলো বাংলাদেশে এখন একটি বিশাল মিডিয়া ম্যাগনেট। গায়ের জোরে প্রথম আলো অনেক কিছুই করার ক্ষমতা রাখে বা সেই ক্ষমতা এতোদিন প্রদর্শন করে আসছে। কিন্তু সাহিত্য নিয়ে প্রথম আলো যে ছিনতাই ব্যবসায় নেমেছে, এটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে সাহিত্যের। আরো সুস্পষ্ট করে বললে বলতে হয়, বাংলা সাহিত্যের।
 
সবচেয়ে মজার বিষয় হল, আগের আয়োজকরা যে কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কারগুলো দিয়েছেন, সেই পুরস্কার নিয়ে প্রথম আলো কিন্তু সংবাদ ও প্রকাশ করেছিল। তাহলে ধরেই নেওয়া যায়, বাংলাদেশে যে কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার নামে একটি সাহিত্য পুরস্কার রয়েছে, সেই বিষয়টি প্রথম আলো আগে থেকেই অবগত। মতিউর রহমান, সাজ্জাত শরিফ, আনিসুল হক গংরা সেই পুরস্কারের খবরটি আগে থেকেই জানতেন। বেশ ভালো করেই জানতেন। নইলে সেই পুরস্কারের ঘটনাগুলো তাদের পত্রিকায় সংবাদ হয়ে ছাপা হয়েছিল কিভাবে?
 
প্রথম আলো কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কারটি ছিনতাই করতে একটি কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। সেই কৌশলটি দিনের বেলায় কারো ঘরে শিদ কাঁটার মত। প্রথম আলো যেটি দিচ্ছে সেটি প্রকাশিত বইয়ের উপর নয়, তারা দিচ্ছে প্রকাশিতব্য পাণ্ডুলিপির উপর। বাহ বাহ। ঘটে বুদ্ধি আছে বটে।
 
আমরা যারা টুকটাক সাহিত্য চর্চা করি, আমরা এখন কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার হিসেবে কোনটি কাউন্ট করব? যদি আগামী বছর বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এডমিশ টেস্টে প্রশ্ন আসে, ২০১৫ সালে কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার কে পেয়েছেন? তখন ছাত্রছাত্রীরা কিন্তু আমাদের মত বিভ্রান্ত হবেন। কারণ, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই আসল আয়োজকরা কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কারটি যখন ঘোষণা করবেন স্বয়ং কবি জীবনানন্দ দাশের জন্মমাসে। তখন আপনি পাঠক বোদ্ধা এই প্রশ্নের কি জবাব দিবেন?
 
প্রথম আলো বাংলাদেশে ভারতের আনন্দবাজার স্টাইলে যা কিছু করছে সবই কারো কাছ থেকে চুরি করা মালের নতুন করে প্রচার। অনেকটা পুরানো বাসি নষ্ট পচা মদ নতুন বোতলে ঢেলে বিক্রি করার মত। কারণ তাদের নিজেদের রয়েছে একটি শক্তিশালী দৈনিক পত্রিকা। সারা দেশে যার কয়েক লক্ষ পাঠক। প্রচারণায় প্রথম আলোর সাথে পাল্লা দেওয়া যে কোনো ছোটখাটো সংগঠন বা ব্যক্তির পক্ষে সত্যি সত্যিই কঠিন। প্রথম আলো সেই শক্তি বা বল প্রয়োগ করে সাহিত্য নিয়ে যে জুয়াচুরি শুরু করেছে, এটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করবে বর্তমানে দেশের সাহিত্যচর্চায় থাকা তরুণ প্রজন্মের কবি সাহিত্যিকদের।
 
এখন কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার প্রর্বতনকারী আসল আয়োজকদের একটা সহজ পথ খোলা আছে, সরাসরি আইনের আশ্রয় নেওয়া। বরিশালের সংগঠন তিনটি (এখন চারটি) যদি কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার প্রবর্তন নিয়ে আদালতের স্মরণাপন্ন হয়, তাহলে বিষয়টি হয়তো আদালত রায় না দেওয়া পর্যন্ত হ্যাং হয়ে যাবে। কিন্তু বিষয় হল, প্রথম আলোর মত একটি বুর্জোয়া শক্তিশালী সংগঠনের বিরুদ্ধে কয় টাকার জোর নিয়ে মামলায় লড়াই করতে চাইবে পুচকা ছোটকাগজের ওই সংগঠনগুলো? সুস্পষ্টভাবেই তাদের তো সেই শক্তি নেই।
 
তাছাড়া প্রথম আলোর রয়েছে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেবার মত ইংরেজি ব্রাদারবর্গ দ্য ডেইলি স্টার। যার খবর পড়ে মিস্টার ক্লিনটন বি সিলি সাহেব জানবেন যে, প্রথম আলো তার টাকার যথার্থ শ্রাদ্ধ করছে। তাদের রয়েছে এবিসি রেডিও। প্রয়োজনে তারা অন্য সংবাদ প্রচার বন্ধ করে এই পুরস্কারের ব্যাপারটি সারা বছর প্রচার করে শ্রোতাদের কান ঝালাপালা করে তুলবে। শুনবি না, তোর বাপ শুনবে। শুনবি না তোর মা শুনবে। শুনবি না তোর চৌদ্দ গোষ্ঠি শুনবে। তোর চৌদ্দ গোষ্ঠি শুনবে, পড়বে, জানবে, এবং শেষ পর্যন্ত মানতে বাধ্য হবে। এই হল প্রথম আলোর কৌশল। 
 
কিন্তু প্রথম আলোর উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাতে পারতাম। প্রবর্তিত পুরস্কারের নামটি হুবহু আগে থেকে প্রবর্তিত একটি পুরস্কারকে ছিনতাই না করে যদি এটার জন্য নতুন কোনো চমক থাকতো, যথাযথ নিয়মাবলি অনুসরণ করে থাকতো। শিষ্টাচার পালন করে থাকতো। ভদ্রতা রক্ষা করে থাকতো। শুধু প্রকাশিতকে প্রকাশিতব্য করায় প্রথম আলো যে কৌশলটি নিয়েছে, এটি সেই পুরাতন জঘন্য কৌশল। প্রথম আলো যাকে খুশি তাদের পছন্দ মত পুরস্কার দিক। আপত্তিটা মোটেও সেখানে নয়। আপত্তিটা হল প্রথম আলো একটি প্রবর্তিত পুরস্কারকে দিনদুপুরে ছিনতাই করেছে। জেনে শুনে বুঝেই ছিনতাই করেছে। তার মানে তিনগুণ বেশি অপরাধ করেছে। তিনগুণ বেশি পাপ করেছে। যা একটি জঘন্য অন্যায়। এই অন্যায়কে প্রকৃত লেখক সমাজ মানতে পারে না। আমিও মানতে পারলাম না।
 
যারা প্রথম আলোর চামচামি করবে, যাদের প্রথম আলো প্রবর্তিত আরো দুটি পুরস্কার (প্রথম আলো বর্ষসেরা পুরস্কার, মননশীল ও সৃজনশীল) পাবার এখনো লোভ রয়েছে, কিংম্বা যারা প্রথম আলোর অন্ধ সমর্থক, তাদের কথা আলাদা। কিন্তু গোটা দেশের তরুণ কবি সাহিত্যিক প্রথম আলোর এই শয়তানিতে যে ঝুঁকির মধ্যে পড়লো, তার বিচার কে করবে? জাতি হিসেবে আমরা আসলে কোথায় যাচ্ছি? আমাদের রাজনৈতিক শয়তানি দেখে আমরা বিগত ৪৩ বছর এক কঠিন সময় পার করছি। এখন নিরীহ সাহিত্যের ক্ষেত্রেও যদি এমন শয়তানি নিয়ে প্রথম আলোর মত একটি অশ্বশক্তি উঠে পড়ে লাগে, তখন দেশের মত্যিকারের সাহিত্যচর্চা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে??? তরুণ প্রজন্ম কি একবারও ভাবছে বিষয়টা???
 
আসলে প্রথম আলো প্রতিটি বিষয়কে বিতর্কিত করে সেখান থেকে মুনাফা লোটার কৌশলেই সব সময় বিশ্বাস করে। এর আগে তারা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে প্রথমে তাদের দৈনিকে মিথ্যাচার করেছে। কবি শামসুর রাহমান ও বিচারপতি হাবিবুর রহমানকে দিয়ে কৌশলে লিখিয়েছে যে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে বক্তৃতা শেষ করেছেন 'জিও পাকিস্তান' বা 'জয় পাকিস্তান' বলে। যে বিষয়ে কবি শামসুর রাহমান পরে বিবৃতি দিয়ে জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছিলেন। তারপর প্রথম আলোর প্রকাশনা প্রথমা মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক একে খন্দকারকে দিয়ে তাঁর বই '১৯৭১: ভেতরে বাহিরে'-তে আবার 'জয় পাকিস্তান' লিখিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে, সেই বই বিক্রি থেকে মুনাফা লুটেছেন। যে কোনো বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে সেখান থেকে মুনাফা ঘরে তোলাই প্রথম আলোর আসল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।
 
এমন কি একে খন্দকার সাহেবের সেই বইটি গুদামজাত করে তিনগুণ দামেও বিক্রি করেছে প্রথম আলো। পরে জনমনে আস্থা অর্জন করতে সেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে আবার লোকদেখানো চাকরি থেকে বরখাস্ত করে আবার নিজেদের স্বচ্ছ প্রমাণ করার খেলা খেলেছেন। সেদিন একজন লেখক (নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক) আমাকে বললেন, 'বিজয় সরণি মোড় থেকে রাস্তার হকার থেকে একে খন্দকারের বইটি মাত্র দেড়শো টাকায় কিনলাম'। এখনো রাস্তার হকারদের কাছে বইটি পাওয়া যাচ্ছে আসল দামের অন্তত তিনভাগের এক ভাগ দামে। তাহলে বুঝুন অবস্থা। এই হল প্রথম আলো। বদলে যাও বদলে দাও। কি বদলে দিচ্ছে প্রথম আলো? মানুষের সত্যিকারের বিবেক? মানুষের শিষ্টাচার? মানুষের নৈতিকতা? মানুষের আস্থা? বদলে দিয়ে প্রথম আলো সেখানে কি ঢুকিয়ে দিচ্ছে? মিথ্যাচার, মিথ্যাচার এবং মিথ্যাচার!!!
 
বাটপারিতে বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বড় সংগঠনের নাম প্রথম আলো। বাটপারিতে একক চ্যাম্পিয়ন এখন প্রথম আলো। মাঝে তারা হে ফ্যাস্টিভালের নামে চালু করেছে বৃটিশ কলোনিয়াল চামচামি। দুইশো বছর বৃটিশদের অধীনে থেকে চামচামি করে পোশায়নি। নতুন করে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার গং সেই বৃটিশদের চামচামি করছে। এখন হে ফ্যাস্টিভাল তারা স্বয়ং বাংলা একাডেমিতে আয়োজন করছে। যেখানে বাংলা সাহিত্য ইংরেজিতে অনুবাদ করে প্রচার করলে বাংলা সাহিত্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পরায় অবদান রাখা যায়। সেখানে প্রথম আলো গং বরং ইংরেজি সাহিত্যের প্রচারে নেমেছে বাংলাদেশে। মানে প্রথম আলো গং শুরু থেকেই বাংলা সাহিত্যের পেছনে উঠেপড়ে লেগেছে। আর এবার ছিনতাই করল একটি প্রবর্তিত পুরস্কারের নাম। এখন শুধু সংবাদের বাটপারিতে তাদের মুনাফায় পোশাচ্ছে না। ইতিহাস বিকৃতি করে মুনাফা লুটছে। পোশাচ্ছে না। এখন আবার প্রবর্তিত একটি পুরস্কারের নাম ছিনতাই করে প্রথম আলো তাদের ছিনতাই করার মনোবৃত্তিকে আবারো সগৌরবে জানান দিচ্ছে।
 
প্রথম আলো প্রবর্তিত কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার কে পেল, তার কবিতা কেমন, সেই কবিতা কতো সেক্সি, তা মোটেও আমার এই লেখার আলোচ্য বিষয় নয়। আমার লেখার সারকথা হল, প্রথম আলো একটি প্রবর্তিত পুরস্কারের নাম ছিনতাই করেছে। একজন কথাসাহিত্যিক হিসেবে প্রথম আলোর এমন গর্হিত কাজকে আমি চরম ধিক্কার জানাই। চরম নিন্দা জানাই। কাজটি মোটেও কোনো শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। অতএব, সাধু সাবধান।
 
প্রথম আলো যে কাজটি করেছে, এটি যে ছিনতাই, এই কথাটি অন্তত দেশবাসি জানুক। বিশ্বের সকল বাঙালি জানুক। বিশ্ববাসি জানুক। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কবি সাহিত্যিকরা জানুক। সভ্যতা যতদিন থাকবে ততদিন মানুষ অন্তত সত্যকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করতে শিখুক। প্রথম আলোর সঙ্গে যাবেন, দয়া করে জেনে শুনে বুঝে যাবেন। যতদিন বাঁচবো ছিনতাইকে ছিনতাই বলবো। চুরিকে চুরি বলবো। ইতিহাস বিকৃতিকে ইতিহাস বিকৃতি বলবো। চামচামিকে চামচামি বলবো। তবু প্রথম আলোর মত বিকৃত রুচিকে সাধুবাদ জানাবো না। বাংলায় রুচি-পছন্দ বলে একটা কথা আছে। প্রথম আলোর রুচি আছে বটে, তবে সেই রুচির মধ্যে দুবৃত্তায়নে আগাগোড়া মোড়া। 
 
এই লেখা শেষ করার আগে আরেকবার বলি, প্রথম আলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাটপার।
 
 
২৮ জানুয়ারি ২০১৫, ঢাকা
 
 
 

আপনার মন্তব্য