প্রকাশিত: ২০১৬-০৮-১৭ ০১:১৬:৪৪
সুমনকুমার দাশ:
ছোটোবেলায় মা-কাকীদের পদ্মপুরাণ পাঠ করতে দেখতাম। শ্রাবণ মাস এলেই হাওরাঞ্চলের হিন্দু ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত গ্রামে পদ্মপুরাণ পাঠের ধুম পড়ে যেত। বাদ যেত না আমাদের বাড়িও। শ্রাবণ মাসের শেষ দিন প্রতি ঘরে পূজিত হতেন নাগমাতা খ্যাত মনসাদেবী। ধনী-গরিব নির্বিশেষে প্রত্যেকের বাড়িতে মনসার পূজা হয়। পূজা উপলক্ষে কেউবা মনসার প্রতিমা বসাতেন আবার কেউবা মনসার ঘট বসিয়ে পূজা করতেন। মনসা দেবীর আরেক নাম পদ্মা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দেবীতুল্য পদ্মার জন্ম ও পূজিত হওয়ার ইতিহাসকে উপলক্ষ করেই রচিত হয়েছে মনসামঙ্গল বা পদ্মপুরাণ কাব্য।
মধ্যযুগের কবিদের প্রণীত বাংলা সাহিত্যের মঙ্গলকাব্য ধারার সবচেয়ে আলোচিত মনসামঙ্গল কাব্য। ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত মনসামঙ্গল কাব্য রচনার বিস্তৃতি হিসেবে গবেষকরা অভিমত দিয়েছেন। তবে এই মনসামঙ্গল কাব্যের উপাখ্যান ভারতের বিহার প্রদেশ হতে বাংলায় এসেছে বলে অভিমত বাংলা সাহিত্যের বিকাশের ধারা গ্রন্থের লেখক শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের। একই অভিমত ব্যক্ত করে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তাঁর বাংলা সাহিত্যের কথা গ্রন্থে লিখেছেন :
মনসামঙ্গল-এর উপাখ্যান সম্ভবত বিহার হইতে বাংলা দেশে আসিয়াছে। [...] মনসামঙ্গল-এর কাহিনী বিহারে প্রচলিত। বিহুলা কথা নামে বিহারী ভাষায় একখানি পুস্তক ছাপা হইয়াছে। সেখানে মনসা বা পদ্মা বিষহরি। মনসামঙ্গল-এর নায়ক-নায়িকা প্রভৃতির নাম বিদ্যাপতির ব্যাড়ীভক্তিরঙ্গিণী-তে এবং বিহুলা কথা-য় আছে।
[...] দোভাষী পুঁথিসাহিত্যে মনসার ভাসান আছে। এইরূপ একখানি পুথি বেহুলা লখিন্দর ও চাঁদ সওদাগরের কেচ্ছা। ইহার রচয়িতা মুনশি রহিমুদ্দিন আহমদ। ইহা অধুনা ঢাকার সিদ্দিকিয়া বুক ডিপো হইতে প্রকাশিত। গ্রন্থাকারের জন্মস্থান ও রচনার তারিখ অজ্ঞাত। উপাখ্যান সাধারণত মনসামঙ্গল-এর প্রচলিত কাহিনী।
মনসামঙ্গল কাব্যের উদ্ভব ও উৎপত্তি নিয়ে এখনো গবেষকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এমনকি সর্বপ্রাচীন হিসেবে স্বীকৃতি কানা হরিদত্ত রচিত পদ্মপুরাণ-এর পুরো কাব্যেরও এ পর্যন্ত কোনো প্রামাণ্য নিদর্শন পাওয়া যায়নি। গবেষকদের ধারণা, এটি ত্রয়োদশ শতাব্দীতে প্রণীত হয়েছিল। এটির পরে পঞ্চদশ শতকে রচিত হয়েছিল বিজয় গুপ্তের পদ্মপুরাণ অথবা মনসামঙ্গল। তিনি এতে কানা হরিদত্ত প্রসঙ্গে লিখেছিলেন, ‘মূর্খে রচিল গীত না জানে মাহাত্ম্য।/প্রথমে রচিল গীত কানা হরিদত্ত ॥’
বরিশাল জেলার গৈলা গ্রামের ফুল্লশ্রীর বাসিন্দা বিজয় গুপ্তের প্রণীত কাব্যের পরেই রচিত হয় বিপ্রদাসের মনসাবিজয় কাব্য। এটি ১৪৯৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে রচিত। বিপ্রদাসের বাড়ি ভারতের চব্বিশ পরগণার বসিরহাট মহকুমার বাদুড়িয়ার নিকটবর্তী বড়োগাঁ গ্রামে। এর বাইরে ষটকবি, কিশোরগঞ্জ জেলার পাতুয়ারী গ্রামের দ্বিজ বংশীদাস, চন্দ্রাবতী, দিনাজপুর জেলার কুচিয়ামারা গ্রামের জগজ্জীবন ঘোষাল, মৌলভীবাজার জেলার দত্ত গ্রামের ষষ্ঠীবর দত্ত, ঢাকা জেলার গঙ্গাদাস সেন, পশ্চিমবঙ্গের কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ, সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার রাধামাধব দত্ত, পাবনা জেলার লাহিড়ীপাড়া গ্রামের জীবনকৃষ্ণ মৈত্র, ভারতের মানভূম জেলার ক্ষেমানন্দ, চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর বাণী গ্রামের রামজীবন বিদ্যাভূষণ, ভারতের বীরভূম জেলার কোরগড় পরগণার বিষ্ণু পাল, ময়মনসিংহ জেলার বৈদ্য জগন্নাথ, পশ্চিমবঙ্গের আখড়াসালের দ্বিজ রসিক, পশ্চিমবঙ্গের কালীদাস, ময়মনসিংহ জেলার ব্রজপুর গ্রামের গোপালচন্দ্র মজুমদার, যশোর জেলার মল্লিকপুর গ্রামের দ্বিজ কালীপ্রসন্ন, ভারতের কুচবিহার এলাকার বৈদ্যনাথ প্রণীত পদ্মপুরাণ অথবা মনসামঙ্গল-সহ আরো কয়েকটি কাব্যের প্রচলন রয়েছে।
কানা হরিদত্তেরও আগে মনসা পুথি বা প্যাঁচালির প্রচলন ছিল বলে গবেষকদের ধারণা। তাঁদের মতানুযায়ী, আসাম তথা সিলেট অঞ্চলে দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে তৈরি মনসা মূর্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। এতে প্রমাণিত হয় সেই সময়টাতেও মনসার পুথি বা প্যাঁচালির প্রচলন ছিল। তবে এসব পুথি বা প্যাঁচালি পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে লিপিবদ্ধ হয়েছে বলে গবেষকদের প্রায় অভিন্ন অভিমত। মনসার অপর নাম বিষহরি। এই শব্দটির অস্তিত্ব শ্রীকৃষ্ণকীর্তন গ্রন্থেও পাওয়া যায়। তবে সেখানে শব্দটি ‘বিষপূর্ণ’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অপরদিকে চৈতন্যভাগবত ও ধর্মপূজা বিধান-এ মনসার আরেক নাম ‘বিষহরি’ হিসেবে শব্দটির উল্লেখ রয়েছে। মনসামঙ্গল কাব্য রচয়িতার নিবাস ও পদ্মপুরাণ-এর বিস্তৃতি প্রসঙ্গে গোপাল হালদার তাঁর বাঙলা সাহিত্যের রূপ-রেখা গ্রন্থে লিখেছেন-
[...] বরাবরই মনসামঙ্গল ও মনসার ভাসান গান পূর্ব ও উত্তর বঙ্গেই অধিক প্রচলিত ছিল। অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে তাই চট্টগ্রামে, শ্রীহট্টে ও উত্তরবঙ্গেই বেশি সংখ্যক মনসামঙ্গল-এর কবির সাক্ষাৎ পাওয়া যায়।’
গবেষক দীনেশচন্দ্র সেন মনসামঙ্গল কাব্যের ৬২ জন রচয়িতার নাম তাঁর প্রণীত বঙ্গভাষা ও সাহিত্য গ্রন্থে উল্লেখ করেছিলেন। এঁরা হচ্ছেন : কানা হরিদত্ত, কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল উপজেলার নারায়ণ দেব, বিজয় গুপ্ত, রঘুনাথ, যদুনাথ পণ্ডিত, বলরাম দাস, জগন্নাথ সেন, বংশীধর, দ্বিজ বংশী দাস, বল্লভ ঘোষ, বিপ্রহৃদয়, গোবিন্দ দাস, গোপীচন্দ্র, বিপ্র জানকীনাথ, দ্বিজ বলরাম, কেতকী দাস, ক্ষেমানন্দ, অনুপম চন্দ্র, রাধাকৃষ্ণ, হরিদাস, কমলনয়ন, সীতাপতি, রামনিধি, কবি চন্দ্রপতি, গোলোক চন্দ্র, কবি কর্ণপুর, জানকী নাথ, বর্ধমান দাস, ষষ্ঠীবর সেন, গঙ্গাদাস সেন, রাম বিনোদ, আদিত্য দাস, কমললোচন, কৃষ্ণানন্দ, পণ্ডিত গঙ্গাদাস, গুণানন্দ সেন, জগদ্বল্লভ, বিপ্র জগন্নাথ, জগমোহন মিত্র, জয়দেব দাস, দ্বিজ জয়রাম, নন্দলাল, বাণেশ্বর, মধুসূদন দেব, বিপ্র রতিদেব, রতিদেব সেন, রামাকান্ত, দ্বিজ রসিকচন্দ্র, রাজা রাজসিংহ, রামচন্দ্র, রামজীবন বিদ্যাভূষণ, বিপ্র রামদাস, রামদাস সেন, দ্বিজ বনমালী, বনমালী দাস, বিপ্র দাস, বিশ্বেশ্বর, বিষ্ণু পাল, সুকবি দাস, সুখ দাস, সুদাম দাস এবং দ্বিজ হরিরাম। কেবল সিলেট অঞ্চলেরই ২১ জন মনসামঙ্গল কাব্যের রচয়িতার সন্ধান জানিয়েছিলেন ইতিহাসবেত্তা অচ্যুতচরণ চৌধুরী। তাঁর রচিত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (১৯১০) গ্রন্থের পরিশিষ্ট বিভাগে তিনি মনসামঙ্গল রচয়িতার নামের তালিকাও মুদ্রণ করেছিলেন।
বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত মনসামঙ্গল কাব্য রচনা বহমান ছিল। লোকসাহিত্যের তাত্ত্বিক আশুতোষ ভট্টাচার্য বাংলা মঙ্গলকাব্যের ইতিহাস গ্রন্থে জানিয়েছিলেন, ‘সিলেটের রাধানাথ রায়চৌধুরী মনসামঙ্গল কাব্যের সর্বশেষ কবি। তিনি উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে মনসামঙ্গল কাব্য রচনা করেছিলেন।’ তবে গত কয়েক দশক আগেও কয়েকজন গ্রামীণ গীতিকার মনসামঙ্গল কাব্য রচনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন। সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার টাইলা গ্রামের গীতিকার প্রতাপরঞ্জন তালুকদার একটি মনসামঙ্গল কাব্য রচনাকালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর প্রণীতব্য অসমাপ্ত মনসামঙ্গল কাব্যের একটি পাণ্ডুলিপি প্রয়াত গীতিকারের বাড়িতে রক্ষিত আছে। মজার বিষয় হচ্ছে, সেই ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত প্রণীত প্রতিটি মনসামঙ্গল আখ্যানের অভিন্নতা লক্ষণীয়। দু-একটি অধ্যায়ে বর্ণিত কাহিনীর বিরল ব্যতিক্রম বাদে প্রত্যেকটি কাব্যের কাহিনী ও বিষয়বস্তুর তেমন কোনো হেরফের নেই বললেই চলে।
সিলেট তথা হাওর অঞ্চলের বাসিন্দারা দাবি করে আসছেন, সুনামগঞ্জসহ হাওরাঞ্চল একসময় কালীদহ সাগরের নিচে ছিল। পদ্মপুরাণ কাব্যে সেই কালীদহ সাগরের উল্লেখ রয়েছে। ফলে পদ্মপুরাণ এ অঞ্চলেরই কাহিনী। অন্যদিকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাসিন্দাদের দাবিও অনুরূপ। তাঁদেরও দাবি, বাইশকবি পদ্মপুরাণ রচয়িতার প্রায় প্রত্যেকেই চট্টগ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। এ নিয়ে এখনো গবেষকদের মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতান্তর রয়েছে। পদ্মপুরাণ-এর ‘নেতার জন্ম ও পদ্মার জন্ম বিবরণ’ পর্বে কালীদহ সাগরের উল্লেখ পাওয়া যায়। সে পর্বে বলা হচ্ছেÑ‘উপনীত হয়ে শিব কালীদহ তীরে।/বিল্ববৃক্ষ তলে বসে প্রফুল্ল অন্তরে ॥’ এর বাইরেও কয়েকবার কালীদহ সাগরের নাম উল্লেখ রয়েছে।
মধ্যযুগের অসংখ্য কবি মনসামঙ্গল বা পদ্মপুরাণ কাব্য রচনা করলেও বাংলাদেশের হাওরাঞ্চলে বাইশকবি প্রণীত পদ্মপুরাণ কাব্য সর্বত্রই পঠিত হয়। এ কাব্যকে কেউ প্যাঁচালি আবার কেউ পুথি হিসেবেও অভিহিত করে থাকেন। কাব্যগ্রন্থ, প্যাঁচালি আর পুথি যেটাই বলা হোক না কেন, সেটি এখন হাওরাঞ্চলের গ্রামীণ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মগ্রন্থ হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে।
মনসা দেবীকে বিষহরি দেবী নামেও আখ্যায়িত করা হয়। তিনি যেহেতু সর্পের দেবী, তাই সাপে কাটা মানুষকে তিনিই জীবিত করতে পারেন। এ কারণেই তাঁকে বলা হয়- বিষহরি অর্থাৎ যিনি বিষ হরণ করে নিতে পারেন। সেই বিষহরি আঞ্চলিক ভাষায় হাওরাঞ্চলে ‘বিষুরি’ হিসেবে উচ্চারিত হয়। হাওরাঞ্চলের মানুষেরা তাই মনসা পূজাকে ‘বিষুরি পূজা’ বলে থাকেন। কেউ কেউ আবার ‘শ্রাবণী পূজা’ও বলে থাকেন। প্রতি বাংলা বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাসের ৩২ তারিখ এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। তবে পূজা আয়োজনের কয়েকদিন আগে থেকেই প্রতিটি বাড়িতে চলে পদ্মপুরাণ পাঠের আয়োজন।
শৈশবে দেখেছি- বাড়ির উঠোনে কিংবা ঘরের দাওয়ায় বসে মা-জেঠি-কাকি-বৌদি-দাদিরা পদ্মপুরাণ পাঠ করতেন। তাঁদের আবেগঘন কণ্ঠে পদ্মপুরাণ পাঠ আমাকে চরমভাবে আকর্ষণ করত। আমি চুপচাপ তাঁদের সঙ্গে বসে বসে শুনতাম। সেই ছোটো বয়সেই মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল বাসর রাতে বিপুলার স্বামী লক্ষ্মীন্দরকে সাপে কাটা, চাঁদ সওদাগরের চৌদ্দ ডিঙ্গা ডুবে যাওয়া আর লক্ষ্মীন্দরকে ‘জিও রে জিও কানাই মায়ের লক্ষ্মীন্দর’ ধুয়ার সঙ্গে বাঁচানোর কাহিনী। প্যাঁচালির সুরে পঠিত হতো পদ্মপুরাণ কাব্য।
মনসা পূজার বিশেষ আয়োজন বলিদান পর্ব। পুরোহিত যখন পূজার আয়োজন সম্পন্ন করেন, তখন পূজার অংশ হিসেবেই যজ্ঞ ও বলিদান পর্ব সারতে হয়। বলিদান পর্বে ইক্ষু, শসা, কলা, কোমরসহ বিভিন্ন সবজি ও ফল বলিদান করা হয়। অবস্থা সম্পন্ন গৃহস্থের পরিবারে পাতিহাঁসও বলিদান করা হয়। সে সময় আমাদের ছোটোদের অন্যতম আকর্ষণ ছিল বলিদান পর্ব। বলিদান মানেই পূজার পরদিন বাড়িতে হাঁসের মাংস রান্না হবে। আর মাংস রান্না মানেই রুচি পরিবর্তন। পূজা উপলক্ষে প্রতিটি বাড়িতেই টানা কয়েকদিন চলে নিরামিষ রান্না। একটানা একঘেয়ে সেই রান্নার অবশেষে বলিদান পর্বের বদৌলতে রুচির পরিবর্তন!
বলিদান পর্বের মতন আকর্ষণীয় ছিল দেবী বিসর্জন পর্ব। সারা গ্রামের পূজারিরা নিজেদের নৌকায় দেবীকে তুলতেন। আমরাও বড়োদের সঙ্গী হতাম। ঢোল, করতাল ও ঝান বাজিয়ে দেবী বিসর্জনের গান গাইতে গাইতে পুরো গ্রাম চক্কর দেওয়া হতো। পরে গ্রামের পার্শ্ববর্তী দাড়াইন নদীতে গিয়ে একযোগে দেবী বিসর্জন দেওয়া হতো। বিসর্জনের সময় সকলেই নদীর ভাসান পানিতে লাফিয়ে পড়তেন। ছোটোদের যারা সাঁতার জানত না, কেবল তারাই নৌকায় ভিতু ভিতু চোখ নিয়ে বসে থাকত। বাকিরা পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাস করত।
আনন্দ-উচ্ছ্বাসের এক পর্যায়ে সবাই নৌকায় উঠে একে অপরের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করতেন। প্রসাদ বলতে ছিল ছোলা, মটর, নারকেল এবং কলা ও গুড় মিশ্রিত ভেজা আতপ চালের প্রসাদ। প্রসাদ বিতরণ শেষে শুরু হতো নৌকাবাইচ। একসঙ্গে অনেকগুলো নৌকা নদীতে জড়ো হয়ে বাইচ অনুষ্ঠিত হতো। বাইচে সারিগান ছিল অন্যতম অনুষঙ্গ। নৌকাবাইচ শেষে অধিকাংশ নৌকা গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির ঘাটে নৌকা ভিড়িয়ে নারকেল ভিক্ষা হিসেবে প্রার্থনা করতেন। সেই বাড়ির গৃহস্থ যদি তাঁর গাছ থেকে নারকেল পেড়ে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিতেন তাহলে বাইচে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা সমস্বরে গাইতেন, ‘... গ্রামের ... বাবু, নারকেল করলেন দান’।
মনসা পূজাকে উপলক্ষ করে কত কত আচার-সংস্কৃতি পালিত হয়ে আসছে যুগের পর যুগ। এসবের অনেক কিছুই এখন বর্ণিল রং হারিয়ে পাংশুটে আকার ধরেছে। কিন্তু পদ্মপুরাণ পাঠ ঠিক আগের মতন রয়ে গেছে। গ্রামীণ নারীরা এখনো পরম মমতায় ঘরের কাজকাম সেরে পূজার সময়টাতে পুথি পড়া শুরু করেন। দেবী বিসর্জনের আগে পদ্মপুরাণ পাঠ শেষ করার বাধ্যবাধকতা থাকায় রাতে কুপি বাতি জ্বালিয়েও চলে পদ্মপুরাণ পাঠ। সেই পদ্মপুরাণ-এর কাব্যিক আকর্ষণ নিছক কম নয়। এটির পরতে পরতে রয়েছে পদ্মার গুণগান, চাঁদ সদাগরের দাম্ভিক উচ্চারণ ও করুণ পরিণতির কাহিনী।
পদ্মপুরাণ-এর কাহিনী আবর্তিত হয় নাগমাতা পদ্মাকে উপলক্ষ করে। পদ্মার জন্ম ও বিবাহ পদ্মপুরাণ-এর কাহিনীর অন্যতম বিষয়বস্তু। তবে মনসা ও চাঁদ সদাগরের বিবাদ নিয়ে পদ্মপুরাণ-এর মূল কাহিনী আবর্তিত হয়েছে। মনসা সর্পদেবী আর চাঁদ সদাগর ছিলেন একজন বনেদি বণিক। পদ্মা ও চাঁদ সদাগরের বিবাদের ধারাক্রম তৈরি করতে পদ্মপুরাণ-এর কাহিনীকারেরা নানা অধ্যায় সন্নিবেশিত করেছেন। স্বর্গে দেবতাগণের নানা কাহিনী, পদ্মার ছোটো বোন নেতার জন্মকাহিনী, জরৎকারু মুনির সঙ্গে পদ্মার বিবাহ, হুতাশন মুনির সঙ্গে নেতার বিবাহ, চাঁদ সদাগরের সঙ্গে পদ্মার দ্বন্দ্ব-বিবাদ, পদ্মার প্রতি সদাগরের অবহেলা, পদ্মার ইশারায় চাঁদ সদাগরের চৌদ্দ ডিঙ্গা সমুদ্রের জলে তলিয়ে যাওয়া, বেহুলা-লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও বিবাহ বৃত্তান্ত, লক্ষ্মীন্দরকে সাপে দংশন, কলার ভোড়ায় মৃত লক্ষ্মীন্দরকে ভাসিয়ে দেওয়া এবং ভোড়ায় বিপুলার সঙ্গী হওয়া, বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে পদ্মার মুখোমুখি বিপুলা, পদ্মা কর্তৃক লক্ষ্মীন্দরকে বাঁচিয়ে তোলা, চাঁদ সদাগর কর্তৃক মনসা পূজা ও মর্ত্যে মনসা পূজার উৎপত্তি সম্পর্কিত নানা তথ্য রয়েছে।
লক্ষ্মীন্দর ও বিপুলার বিবাহ এবং লক্ষ্মীন্দরকে বাসর রাতে সাপে কাটার অংশটুকু মনসামঙ্গলসহ বাংলা মঙ্গলকাব্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় কাহিনী হিসেবে ইতোমধ্যে স্বীকৃতি পেয়েছে। কেবলমাত্র এ কাহিনীর উপর ভিত্তি করে একাধিক গান, কবিতা ও মঞ্চ নাটক পর্যন্ত রচিত হয়েছে। সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার জয়দূর্গা ঢপযাত্রা নাট্যসংঘের সদস্যরা এ কাহিনী নিয়ে একটি ঢপযাত্রা নিয়মিত মঞ্চায়নও করে থাকে।
মনসার নির্দেশে বাসর ঘরে লক্ষ্মীন্দরকে যখন কালীনাগ দংশন করে, তখন বিপুলা ছিলেন ঘুমে অচেতন। লক্ষ্মীন্দর শত চেষ্টা করেও বিপুলাকে জাগাতে পারেননি। বিষ-যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে লক্ষ্মীন্দর বলেন- ‘মরি গো তরাসে প্রিয়া মরি গো তরাসে।/টলমল করে প্রাণ নাগের নিঃশ্বাসে ॥’ ছোটোবেলায় মা-দাদিদের মুখে পদ্মপুরাণ কাব্যের এ-রকম ধুয়া শুনে মনটা খারাপ হয়ে যেত। আমরা তন্ময় হয়ে শুনতাম পদ্মপুরাণ-এর লাচাড়ির পরের পঙক্তিগুলো :
চমকিয়া লক্ষ্মীন্দর উঠিল সত্বরে
বিপুলা বিপুলা করি ডাকে উচ্চৈঃস্বরে॥
উঠো উঠো প্রাণেশ্বরী কত নিদ্রা যাও
কিসে কামড়ালো মোরে চক্ষু মেলি চাও॥
সত্বরে উঠো হে প্রিয়া কামড়ালো কিসে
সর্বাঙ্গ পুড়িয়া উঠে কালকূট বিষে॥
না-হইল মাস পক্ষ দিন অষ্ট চারি
কাল-রাত্রি পদ্মাবতী তোমা কৈল রাঁড়ী॥
নারী কূলে জন্ম তুমি বিফলে লভিলে
স্বামী সনে এক রাত্রি সুখে না রহিলে॥
আমার মরণে তুমি না জীবে পরাণে
তোমা হেন অভাগিনী নাহি ত্রিভুবনে॥
লক্ষ্মীন্দরের আক্ষেপ পাঠকের মনে বিরহ-দহন জাগায়। বিপুলা ঘুম থেকে জেগে যখন বুঝতে পারেন- তাঁর স্বামীকে সাপে দংশন করেছে। তখন বিপুলার বিলাপ আর আর্তি আরো করুণ পরিবেশের সৃষ্টি করে। ঘটনার ধারাবাহিকতায় কলার ভোড়ায় ভাসিয়ে দেওয়া সাপে-কাটা লক্ষ্মীন্দরের সঙ্গী হয়ে বিপুলা নদী-সাগর পেরিয়ে অজানা গন্তব্যে ভাসতে থাকেন। ভাসতে ভাসতে বিপুলা একসময় পৌঁছে যান স্বর্গে। সেখানে নৃত্য প্রদর্শন করে বিপুলা দেবতাদের মনতুষ্টি অর্জন করেন। পরে নেতা এবং দেবতাদের সহায়তায় পদ্মার দ্বারস্থ হয়ে নানা কৌশল ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে বিপুলা পদ্মার কৃপা লাভ করতে সমর্থ হন। পদ্মা বিপুলার স্বামী লক্ষ্মীন্দরকে জীবিত করেন এবং বিপুলার শ্বশুরের হারানো ধন-সম্পদ ফিরিয়ে দেন।
ছোটোবেলায় পদ্মপুরাণ পাঠকের দরদী বর্ণনায় বিপুলা-লক্ষ্মীন্দরের জন্য মন খারাপ করত। বড়ো হয়ে যখন উচ্চশিক্ষার্থে সিলেট আসি তখন প্রায় ভুলেই গেলাম ‘বিষুরি’ পূজার কথা। কখন যে শ্রাবণ মাস আসে আবার কখন যে শ্রাবণ মাস চলে যায়- সে খবর যেন অজানাই থেকে যায়। বছর দশেক আগে প্রথমবারের মতো শুনি সুমন চট্টোপাধ্যায়ের (কবীর সুমন) বিখ্যাত সেই গান-‘কাল কেউটের ফণায় নাচছে লক্ষ্মীন্দরের স্মৃতি/বেহুলা কখনো বিধবা হয় না/এটা বাংলার রীতি’। এ গানটি যতবার শুনতাম ততবারই মনে পড়ত ছোটোবেলার শোনা পদ্মপুরাণ-এর সুর।
বেলা-অবেলায় কবীর সুমনের সেই গানটি কতই না গেয়েছি! তবে ব্যস্ততার কারণে গ্রামের বাড়ি তেমন একটা যাওয়া হয় না, পদ্মপুরাণও আর সেভাবে শোনা হয় না। এক বর্ষায় (১৪১৯ বঙ্গাব্দ) কলকাতার প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী মৌসুমী ভৌমিক ও শব্দধারক সুকান্ত মজুমদার লোকগানের খোঁজে সিলেটে আসেন। সে সময় পদ্মপুরাণ-এর সুর-বৈচিত্র্য স্বচক্ষে দেখতে আমাদের গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন। সঙ্গত কারণে আমিও ছিলাম তাঁদের সার্বক্ষণিক সঙ্গী। সে সময় সুনামগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত শাল্লা উপজেলার বাহাড়া, নাইন্দা, হরিপুর, ঘুঙ্গিয়ারগাঁও, খল্লি ও ডুমরা গ্রামে নারী এবং পুরুষ উভয়ের কণ্ঠে পদ্মপুরাণ পাঠ শুনেছিলাম। প্রত্যক্ষ করলাম- আমাদের শৈশবের শোনা পদ্মপুরাণ পাঠের সঙ্গে এখনকার পাঠের কোনো হেরফের হয়নি। মনসা পূজার বৈচিত্র্যেও তেমন ফারাক নেই। সেই উৎসবের মেজাজ, রং ও বৈচিত্র্যতা এখনো যেন অবিকল রয়ে গেছে।
শাল্লা উপজেলার এ গ্রাম-ও গ্রাম ঘুরে ঘুরে মৌসুমীদি আর সুকান্তদা পদ্মপুরাণ গান রেকর্ডিং করতে থাকেন। এই ফাঁকে আমি সেসব গ্রামীণ গায়কদের সঙ্গে নানা আলাপ সেরে নিই। জেনে নিই তাঁদের গান শেখার উৎস এবং পেশাগত অবস্থান। প্রায় সবাই গ্রামের নিরক্ষর ও খেটে-খাওয়া লোক। পড়াশোনায় হয়তো কেউ কেউ প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোননি, কিন্তু কী অবলীলায় চোখের ঠাহরে আঙুল ধরে ধরে পাঠ করে নিতে পারেন পুরো পদ্মপুরাণ। হাওরাঞ্চলের প্রায় গ্রামের ঘরে ঘরে এ উদাহরণ পাওয়াটা কোনো অবিশ্বাস্য তথ্যও নয়। উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁদের রক্তে গান বইছে, ছোটোবেলায় মা-কাকী-দাদী আর বাবা-কাকা-জেঠাদের মুখে পদ্মপুরাণ পাঠ শুনতে শুনতে তাঁরা নিজেও এখন ডাকসাইটে শিল্পীতে পরিণত হয়েছেন। এটাই মূলত গ্রামীণ মানুষের গান শেখা ও চর্চার শেকড় বা উৎসভূমি।
শাল্লা উপজেলার ডুমরা গ্রামের ঝন্টু দাশ, যিনি স্বশিক্ষিত ইঞ্জিন মেকানিক ও কাঠমিস্ত্রি বলে আমাদের জানিয়েছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, তবুও নৌকার নষ্ট ইঞ্জিন সারিয়ে নিতে কিংবা কাঠের আসবাবপত্র তৈরিতে পুরো উপজেলায় তাঁর বিকল্প নেই। সেই স্বশিক্ষিত ইঞ্জিন মেকানিক/কাঠমিস্ত্রি ঝন্টু পদ্মপুরাণ-এর ডাকসাইটে গায়ক। তাঁর গান শুনে মুগ্ধ গ্রামের মানুষ। নাইন্দা গ্রামের অলিরানি তালুকদার একজন পুরোদস্তর গৃহিণী। অভাব-অনটনে যাঁর সংসার চলাতে হিমশিম খেতে হয়। দরিদ্রতার কারণেই দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে আর এগুতে পারেননি। চার বছর আগে বিয়ে হওয়ার পর নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার কদমশ্রী গ্রামের বাপের বাড়ি ছেড়ে স্বামীর বাড়িতে আসেন। তিনিও একজন প্রভাবশালী পদ্মপুরাণ গায়িকা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াও কেবল চোখের আন্দাজে অক্ষর গুণে গুণে কীভাবে পদ্মপুরাণ পাঠ সম্ভব? এ প্রশ্নে তাঁর নির্বিকার উত্তর, ‘এটি এখানকার সবাই পারে। এটা আর এমন কী কঠিন কাজ?’
টানা কয়েকদিন পদ্মপুরাণ পাঠ শুনতে হাওরের কত কত গ্রাম ঘুরেছি। প্রতিটি গ্রামেই নারীরা সুর করে পদ্মপুরাণ-এর বেহুলা-লক্ষ্মীন্দরের কাহিনী বৈঠকি গানের সুরে গাইছিলেন। আমাদের আড্ডা-গল্প-গান চলে সমানতালে। এরই ফাঁকে এক রাতে আমাদের বাসার ছাদে পাটি বিছিয়ে বসল গানের আসর। ওইদিন আকাশ ছিল অন্ধকারে ঢাকা। চাঁদের আলোর ছিটেফোঁটাও নেই। অন্ধকারে আমরা কেবল একে-অপরের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ টের পাচ্ছিলাম! তবে সে রাতে ঢের বাতাস ছিল। সেই বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল বিচ্ছেদী গান। একে একে রাধারমণ, উকিল মুনশি ও শাহ আবদুল করিমের লেখা গান গাইলেন স্থানীয় দুই সংগীতশিল্পী ধরণী দাস ও লিংকন দাশ। সবশেষে গান ধরলেন মৌসুমী ভৌমিক। গলায় সে কী টান! যেন আবেগ উপচে পড়েছে! গভীর রাতে শেষ হয় গানের আসর।
পরদিন মনসা দেবীর বিসর্জন। আমরা একটা নৌকা করে ডুমড়া গ্রামের পাশের হাওরে বিসর্জন দেখতে যাই। বিকেলের দিকে দেবী বিসর্জন শুরু হয়। চারিদিকে খোল-করতাল-ঢোলের আওয়াজ। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। ডুমরা গ্রামের পাশে দাড়াইন নদীর কাছে এসে দেবীকে বিসর্জন দেওয়ার সঙ্গে নৌকায় আগতরা লাফিয়ে লাফিয়ে পানিতে পড়তে থাকেন। এ দৃশ্য দেখে আমরাও উৎসাহিত হয়ে পানিতে ঝাঁপ দিই। আমরা মানে সুকান্তদা, প্রশান্তদাসহ কয়েকজনের সঙ্গে আমিও। দেবী বোধনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা হাওরের অবারিত জলে মেতে উঠি জলখেলায়। আর এ দৃশ্য নৌকায় বসে ক্যামেরায় ধারণ করছিলেন মৌসুমীদি।
ঘণ্টা খানেক পর জলখেলা শেষে আমরা নৌকায় উঠি। এবারের বিদায়ের পালা। মৌসুমীদিদের বিদায় জানিয়ে বাড়ি ফিরি। মৌসুমীদি কলকাতায় ফিরে গিয়ে ই-মেইল মারফত আমাকে একটা চিঠি লিখেছিলেন। তাঁর চিঠির কয়েকটি পঙক্তি ছিল এ রকম :
‘সুমন, কেবলই ভাবছি তোমাকে চিঠি লিখব, কিন্তু হয়ে উঠছে না কিছুতেই। শাল্লার রেকর্ডিং শুনি, তোমাদের দ্বীপের মতন গ্রামের ছবি দেখি। ডুমরার সুভাষ; যে নাকি যে কোনো যন্ত্র খুলে সারিয়ে ফেলতে পারে, তার কণ্ঠস্বর আমাদের মজিয়ে রাখে। তোমাদের বাড়ির ছাদে রাতের গান, ধরণীর গলায় বিচ্ছেদ উপচে পড়ে। এ বাড়ি-ও বাড়ি থেকে ভেসে আসা প্যাঁচালি, মুঠো ভরা নারকেল প্রসাদ। নৌকার উপর লিংকনের বাবার মনসার প্রতিমাকে দু-হাত দিয়ে ধরে থাকা, তোমার-সুকান্তর-প্রশান্তর ঝপ করে জলে ঝাঁপ দেওয়া- এমন একটা ছুটি সহজে মেলে না। এইসব ভাবি, কিন্তু চিঠি লিখতে অনেকটা দেরি হয়ে যায়।’
মৌসুমীদির চিঠিতে আরও ছিল হাওরপারের মানুষের পদ্মপুরাণ পাঠ শুনে তাঁর ব্যক্তিগত ভালোলাগার বর্ণনা। তাঁদের গানের বৈচিত্র্যময় সুর ও গায়কীর নিখাদ প্রশংসা। পদ্মপুরাণ-এর প্রসঙ্গ উঠলেই এখন আমার কানে বাজে মৌসুমীদির চিঠির বাক্যগুলো।
আমার কেবল অবাক লাগে এটিই ভেবে যে- সেই মধ্যযুগ হয়ে একবিংশ শতাব্দীর মানুষের কাছে এখনও কীভাবে সমান জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে মনসামঙ্গল কাব্য? মধ্যযুগে রচিত এসব কাব্যের কী এমন আকর্ষণ? যার জন্য গ্রামীণ মানুষ থেকে শুরু করে শহুরে নাগরিকেরা পর্যন্ত মুগ্ধ!
আপনার মন্তব্য