সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই লেখককে কলম হাতে নিতে হয়- সোলায়মান সুমন

একুশে গ্রন্থমেলার লেখক-পাঠকের অপূর্ব মিলনমেলা। আমরা সিলেটটুডে২৪.কমের পক্ষ থেকে মুখোমুখি হয়েছি লেখক-প্রকাশকদের সাথে। এবারের পর্বে কথা বলছেন গল্পকার, সম্পাদক সোলায়মান সুমন

 প্রকাশিত: ২০১৫-০১-১৩ ০০:১৮:৫০

 আপডেট: ২০১৫-০১-১৪ ০৪:১৬:০৫

নিউজ ডেস্ক:

সোলায়মান সুমন লেখালেখি জীবনে গল্পকার। ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা অনুপ্রাণন'র সহকারি সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন।  পেশায় শিক্ষক, আছেন মতিঝিল আইডিয়েল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে। লেখালেখি করছেন দীর্ঘদিন ধরে। ছোটগল্পের পাশাপাশি কাজ করছেন কথাসাহিত্য নিয়ে। জন্মস্থান চাপাই নবাবগঞ্জ, থাকেন ঢাকার বনশ্রীতে। এখন পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা চার, আগামি বইমেলায় প্রকাশিত হবে সম্পাদিত গ্রন্থ বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ট গল্পের সংকলন নিয়ে "বাংলা সাহিত্যের সেরা গল্প" । বইটি প্রকাশ করছে অনুপ্রাণন প্রকাশন, ঢাকা। 


সিলেটটুডে২৪ পাঠকদের উদ্দেশে তাঁর নিজের লেখালেখি, বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয় এবং বইমেলা নিয়ে কথা বলেছেন খোলাখুলিভাবে। বিস্তারিত পাঠকদের উদ্দেশে:


সিলেট টুডে২৪: অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫-তে আপনার কী বই আসছে?

সোলায়মান সুমন: একুশের বই মেলায় দুটো বই আসছে।  তবে একটি ডিসেম্বরেই বেরিয়ে গেছে- সম্পাদনা গল্পগ্রন্থ:  ভগ্ন সময়ের কোলাজ, আরেকটি যেটা ফেব্রুয়ারিতে বেরুবে সেটি হচ্ছে- বাংলা সাহিত্যের সেরা গল্প। এটিও সম্পাদনা গ্রন্থ। রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত লেখা বাংলা ছোটগল্প থেকে গল্পগুলো নির্বাচন করা হয়েছে। তবে গল্পগুলো নির্বাচন করেছি আমি আমার দৃষ্টিকোণ থেকে। এছাড়া গত ফেব্রুয়ারির (২০১৪) মেলায় আমার গল্পগ্রন্থ ‘ছায়াগুলো জেগে থাকে’ প্রকাশিত হয়েছে।


সিলেট টুডে২৪: আপনার প্রকাশিত বই সংখ্যা কত?
সোলায়মান সুমন: চারটি। মুই তোরে কোচ পাং (২০০৯), পঞ্চায়ুধ (২০১১), ছায়াগুলো জেগে থাকে (২০১৪), ভগ্ন সময়ের কোলাজ (২০১৪)।


সিলেট টুডে২৪: অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আপনার প্রত্যাশা কী?
সোলায়মান সুমন: দেখুন, আমি মনে করি সারা বছর ধরে বই প্রকাশিত হওয়া উচিত। আমাদের প্রকাশনা ফেব্রুয়ারির বইমেলাকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। এটার খারাপ দিক রয়েছে- ফ্রেব্রুয়ারিতে বই প্রকাশের হিড়িক পড়ে যায়। অল্প সময়ে ভুলভাল বইয়ে ভরে ওঠে মেলাপ্রাঙ্গণ। কারণ বইয়ের  প্রকাশ একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়। তার জন্য যতটা সময় দরকার তা না থাকার কারণে বইগুলো সুসম্পাদিত হয় না। 

তবে অনেক প্রকাশনা আছে তারা সারা বছর বই বের করে। বই প্রকাশের কাজটা তারা সারা বছর চালিয়ে যায়। এবং তাদের নির্দিষ্ট, অভিজ্ঞ সম্পাদনা পরিষদ থাকে। যারা নির্ভুল বই প্রকাশে সহায়তা করে । তবে এমনটি খুব কম প্রকাশনার ক্ষেত্রে দেখা যায়। আমি আশা করি, ফেব্রুয়ারির বই মেলায় মানসম্পন্ন বই প্রকাশিত হোক। তা বিষয়, লেখা, ছাপা, বাঁধাই, প্রচ্ছদ সব দিক থেকেই যেন আন্তর্জাতিক মানের হয়। আজে-বাজে বইয়ের ভিড়ে পড়ে পাঠক যেন বিভ্রান্ত না হয়।


সিলেট টুডে২৪: অমর একুশে গ্রন্থমেলা কিভাবে আরো আকর্ষণীয় করা যায়?
সোলায়মান সুমন: একুশে বইমেলার সব চেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় বই। তাই মান সম্পন্ন বই প্রকাশের জন্য প্রকাশকদের কিছু নিয়ম-নীতির আওতায় আনতে হবে। যথার্থ প্রকাশকরাই যেন মেলায় স্টল পায়। মেলা প্রাঙ্গনের খাবার দোকানগুলো মনিটরিং-এর ব্যবস্থা রাখতে হবে। শৌচাগারের ব্যবস্থাটা আরো উন্নত করতে হবে।



সিলেট টুডে২৪: একুশে গ্রন্থমেলায় নিয়মিত যান? কী কারণে?
সোলায়মান সুমন: নিয়মিত যাই কারণ সারা বছর সবার সাথে সেভাবে যোগাযোগ থাকে না। মেলাতেই সারা দেশ থেকে লেখকেরা আসেন। তাদের সাথে দেখা হয়, আড্ডা হয়, মত বিনিময় হয়। আর বইয়ের গন্ধে লেখকদের প্রাণ লুকিয়ে থাকে। সে গন্ধের টানে প্রতিদিন মেলায় যাই।



সিলেট টুডে২৪: লেখালেখিতে কোন বিষয়টিকে আপনি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন? কী যুক্তি এর পেছনে?
সোলায়মান সুমন: আসলে একজন লেখকের কাজ সত্য নির্মাণ। এখানে কোনো ধরনের সমঝোতা চলে না। কারণ আমরা জানি- সত্যই সুন্দর, সত্যই শিব। লেখকে সত্য প্রকাশের মত সাহস অর্জন করতে হয়। এবং এই সাহস অর্জনের পথেই আমার লেখক জীবনের পথ চলা। 


সিলেট টুডে২৪: আপনার বই আর পাঠক এবং আপনি আর অন্যান্য বই সম্পর্কে আপনার কী মূল্যায়ন?
সোলায়মান সুমন: আমি আমার পাঠকদের আমার উপলব্ধি ও লেখক হিসেবে আমার দায়বদ্ধতার কাছাকাছি আনতে চাই। যে উপলব্ধি আমাকে লেখতে বাধ্য করে, তা আমি পাঠকদের মাঝে সঞ্চারিত করতে চাই। আবার আমি যখন পাঠক তখনো আমি আমার লেখকের কাছে তেমনি প্রত্যাশা করি। সাহিত্যকে আমি শুধু মনোরঞ্জনের বিষয় মনে করি না। একটা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই লেখককে কলম হাতে নিতে হয়।


সিলেট টুডে২৪: বই প্রকাশে আপনি কী ধরণের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছিলেন? কিভাবে উত্তরণ ঘটল?
সোলায়মান সুমন: আসলে আমি বয়সে তরুণ। সাহিত্যের পথে কেবল পথ চলা শুরু হয়েছে। আমি মনে করি একজন লেখকের দীর্ঘ ও ভাল প্রস্তুতির পর বই প্রকাশের কথা ভাবা উচিত। 

আমাদের দেশে বেশির ভাগ প্রকাশক তরুণ লেখকের পয়সায় বই ছেপে ব্যবসা করেন। আবার প্রতিষ্ঠিত লেখকরাও নানা ভাবে প্রকাশকদের দ্বারা প্রতারিত হন। যেমন বই বিক্রির সঠিক স্টেটমেন্ট লেখকদের কাছে দেয়া হয় না। কত কপি ছাপা হল সেটাও লেখক জানতে পারেন না। ফলে আমাদের দেশে লেখালেখিতে পেশাদারিত্ব তৈরি হচ্ছে না। এর জন্য দেশে শক্তিশালী একটি রাইটার্স গিল্ড জরুরি হয়ে পড়েছে। যারা লেখকদের অধিরারের জন্য লড়বে। 

আমি এ ক্ষেত্রে সৌভাগ্যবান। আমার প্রথম বই ‘মুই তোরে কোচ পাং’ ২০০৯এ বিশাকা প্রকাশনীর শাহজাহান বাচ্চু ভাই নিজ দায়িত্বে প্রকাশ করেছিলেন। তবে বই প্রকাশ নিয়ে আমারও কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে সেটা আরেকদিন বলব।


সিলেট টুডে২৪: প্রকাশিত, প্রকাশিতব্য বই আর প্রকাশক(দের) সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন
সোলায়মান সুমন: এবারের দুটি বই ‘ভগ্ন সময়ের কোলাজ’ ও ‘বাংলা সাহিত্যের সেরা গল্প’ প্রকাশ করছে অনুপ্রাণন প্রকাশন। প্রথম বইটি যারা গল্প ভালবাসেন ও গল্প লেখার চেষ্টা করেন তাদের জন্য অবশ্য পাঠ্য। কারণ এখানে ৯০, শূন্য ও দ্বিতীয় দশকের গল্পকারদের গল্প থেকে আমি কিছু ভাল গল্প বাছাই করেছি। যা পাঠ করে আমাদের এসময়ের ছোটগল্পের সম্ভাবনার ইঙ্গিত পাবেন পাঠক সমাজ। 

‘বাংলা সাহিত্যের সেরা গল্প’ বইটি সবার জন্য সংগ্রহ করা জরুরি। সমগ্র বাংলা সাহিত্য থেকে সেরা সেরা গল্পগুলো নিয়ে এ সঙ্কলন। এই গল্পগুলো একসাথে একটি গ্রন্থের মধ্যে পাওয়া প্রত্যেক পাঠকের জন্য সৌভাগ্যের বিষয়।


সিলেট টুডে২৪: সিলেটটুডে২৪.কম পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ
সোলায়মান সুমন: আপনাদেরও ধন্যবাদ। আপনাদের পথচলা দীর্ঘ হোক।



গ্রন্থনা: ক.য়া/জানুয়ারি ১৩, ২০১৫

আপনার মন্তব্য