কবি ও প্রাবন্ধিক মুহম্মদ আবদুল হান্নান আর নেই!

সিলেটটুডে পরিবার কবি মুহম্মদ আবদুল হান্নানের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করছে

 প্রকাশিত: ২০১৫-০১-১৩ ২২:৪৮:৫৮

 আপডেট: ২০১৫-০২-০৩ ০০:৫৭:৪৭

নিউজ ডেস্ক:

কবি, প্রাবন্ধিক ও সংগঠক মুহম্মদ আবদুল হান্নান আর নেই। তাঁর মৃত্যুতে সিলেটের সাহিত্য অঙ্গনে নেমে এসেছে তীব্র শোকের ছায়া। ৬৯ বছর বয়সী জীবনে তিনি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রন্থের পাশাপাশি তিনি স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
 
১৩ জানুয়ারি মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ১২ মিনিটে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তাঁর ফাজিলচিশতস্থ বাসভবনে। জানাজা নামাজ বুধবার বাদ জোহর ঢাকাদক্ষিণ মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। 
 
লেখালেখির পাশাপাশি কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশ কৃষিব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক ছিলেন। ২০০৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যান। তিনি ছিলেন সিলেট সাহিত্য পরিষদের উপদেষ্টা এবং বৃন্দস্বরের অন্যতম সভ্য। 
 
১৯৪৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকাদক্ষিণের দত্তরাইলে জন্মগ্রহণ করেন। অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতকত্তোর ডিগ্রিধারী মুহম্মদ আবদুল হান্নান একজন নির্ভৃতচারী কবি। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হচ্ছে- কাতুকুত (লিমেরিক-১৯৮৭); গণমানুষের কবিতা (১৯৯৩); মেঘে মেঘে রোদ্দুর (কবিতা-১৯৯৯); ভালোবাসার লিমেরিক (২০০০); অন্তরে অন্তরা (গীতিকবিতা-২০০২); বিহিতা আর ফিরে আসবে না (ছোটোগল্প-২০০৪); মাছের মায়ের মুখে সোনার চামচ (কবিতা-২০০৮); চোখের মণি সোনার খনি দীপন সোনা (২০১০); আড্ডার নির্যাস (কবিতা-২০১৪)।
 
কবি মুহম্মদ আবদুল হান্নানের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে স্বজন এবং সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের সুহৃদদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। শোকবিহ্বল হয়ে বাসায় ছুটে যান মদনমোহন কলেজের অধ্যক্ষ ডক্টর আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শামসুল আলম সেলিম, ছড়াশিল্পী সুফিয়ান আহমদ চৌধুরী, কবি মোহাম্মদ হোসাইন, কবি পুলিন রায়, কবি আবিদ ফায়সাল, কবি জাফর ওবায়েদ, ফখরুল ইসলাম, সংগীতশিল্পী খোকন ফকির, ইকবাল সাঁই, শিল্পী নিখিল দাস প্রমুখ। 
 
কবি মুহম্মদ আবদুল হান্নানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাজনীন হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম সেলিম, বৃন্দস্বর কবিগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে কবি নৃপেন্দ্রলাল দাশ, কবি এ কে শেরাম, কবি মিলু কাশেম, কবি এনায়েত হাসান মানিক, সিলেট সাহিত্য পরিষদের সভাপতি কবি পুলিন রায় ও সাধারণ সম্পাদক কবি জাফর ওবায়েদ।
 
 
কবি মুহম্মদ আবদুল হান্নান'র মৃত্যুতে শোকপংক্তি
 
মোহাম্মদ হোসাইন
বন্ধু হাড় কালিয়া
(তরুণ বন্ধু হান্নান ভাই’র মৃত্যুতে)
 
যাওয়াটা কি খুব বাহাদুরি ? বলা নেই কওয়া নেই—এভাবে কেউ যায় ?
কি এমন অশুদ্ধ হত আর ক’টা দিন থেকে গেলে ? চা খেতে খেতে সেদিন 
বলি নি –এত যাই যাই করেন কেন? আরে বাবা, কি অমন সাত রাজার ধন 
রেখে এসেছেন ওপারে ? সেইতো শূন্য, সেইতো খালি হাত ! কত করে বলেছি--
 
দিনমান এত শব্দ জড়ো করে করে কি লাভ ? কেন—কেন এত পক্ষপাত কবিতার প্রতি? সুরশ্রীর প্রতি ? কি লাভ হল শেষমেষ—বলুন ? শব্দ বড় বাজে জিনিষ বুঝলেন - বড় খতরনাক। যাকে ধরে তাকে ধরে—মজ্জাঘিলুঘাড় মটকিয়ে তবে ছাড়ে।
 
কি এমন তাড়া ছিল যে এখনই যেতে হবে ?
এখনই পাততাড়ি গুটাতে হবে? দেখুনতো মজনু, মনজুর, মেকদাদের মুখের দিকে চেয়ে ? সেই কখন থেকে বসে আছে তারা। আর আপনি ? এত দেরি করছেন- কেন ? তাদের মুখমণ্ডলগুলোর দিকে —চাওয়া যায় বলুন ? তাদের চোখ ফেটে, বুক ফেটে রক্ত বেরুচ্ছে—অথচ বলতেও পারছে না-- যেন এখনই ঝড় এসে সবকিছু তছনছ করে দেবে। আর এই যে বৃন্দস্বরের প্রতিটি ধুলিকণা ? হাওয়া ? দেখুন, সেই কখন থেকে আপনার চিনি ছাড়া রঙ চা ঠান্ডা হয়ে - একটানা ফুঁপাচ্ছে । নিজে নিজে সেলফি হয়ে যাচ্ছে আড্ডার বিবর্ণ সময়। মানিক ভাই এই সব কি ধরণের মন খারাপ করা গান ধরেছেন আজ ? কি হয়েছে বলুন তো ? ‘সখি বয়ে গেল বেলা...’ ? আর ইকবাল, মুক্তদা, তোমরাও—শেষ পর্যন্ত ছেলে মানুষ হয়ে গেলে ? 
 
আমি বাপু এত পুতুপুতু করতে পারব না। সেই যে একদিন বলেছিলাম –ভালোবাসি না -- এই লোকটাকে. আজও বলছি ভালোবাসি না। আর কোনদিনও বলব না—মাইরি সত্যি বলছি, বলব না - তুমি বড় মিথ্যেবাদী—গো বন্ধু, বড় হাড় কালিয়া...
 
১৩/০১/২০১৫
 
 

আপনার মন্তব্য