প্রকাশিত: ২০১৫-০৬-২০ ০০:০৩:৫৫
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ওই তো লক্ষ ছেলেমেয়ে/ নাতিনাতনি দামাল/ সবুজ দ্বীপের মতো মাঝখানে/ সুফিয়া কামাল’—উপমহাদেশের বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী সুমন চট্টোপাধ্যায় নিজের গানে কবি সুফিয়া কামালকে এভাবেই বর্ণনা করেছেন। দেশে নারী আন্দোলনের অন্যতম অগ্রদূত কবি সুফিয়া কামালের আজ ১০৫তম জন্মদিন।
১৯১১ সালের আজকের এই দিনে বরিশাল জেলার শায়েস্তাবাদে জন্মগ্রহণ করেণ তিনি। ২০ জুন, শুক্রবার আজ কবির ১০৫ তম জন্মদিন। পিতা সৈয়দ আব্দুল বারী ও মা সাবেরা বেগম দম্পতির ঘরে ১৯১১ সালের ২০ জুন জন্মগ্রহণ করেন নারী জাগরণের এই কবি। তার প্রথম কবিতা প্রকাশ ১৯২৬ সালে সাহিত্য সাময়িকী সওগাত-এ। সে সময় কলকাতায় অবস্থান করার কারণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও শরৎচন্দ্রের দেখা পান তিনি। এর আগে ১৯১৮ সালে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হবার সুযোগ পান শিশু সুফিয়া কামাল। পরবর্তীতে তাঁর সাহিত্য দর্শনেও বেগম রোকেয়ার প্রভাব স্পষ্ট হয়।
১৯৩৭ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর গল্প সংকলন ‘কেয়ার কাঁটা’। পরের বছর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সাঁঝের মায়া’র ভূমিকা লিখে দেন কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৪২ সাল পর্যন্ত কলকাতা করপোরেশন স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি দেশভাগের আগ পর্যন্ত বেগম পত্রিকার সম্পাদক পদে নিযুক্ত ছিলেন তিনি। ৪৭-এর দেশভাগে সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৫৬ সালে শিশুদের সংগঠন কচি কাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে রবীন্দ্র সঙ্গীত নিষিদ্ধ করলে প্রতিবাদ আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। একই বছর সুফিয়া কামাল ছায়ানটের এবং ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি নিবার্চিত হন। গণ অভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে পাকিস্তানের তমঘা-ই-ইমতিয়াজ পদক বর্জন করেন।
১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন মহিলা পরিষদ। ১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের হয়ে মিছিলে নেতৃত্ব দেন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশে নারীজাগরণ ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা রাখেন। ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে জরুরি অবস্থা ভেঙে নীরব শোভাযাত্রা বের করেন কবি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিপক্ষে আমৃত্যু সংগ্রামকারী কবি সুফিয়া কামাল ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাকে দিয়েই বাংলাদেশে প্রথম কোনো নারীকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।
সুফিয়া কামালের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে আছে মায়া কাজল, মন ও জীবন, শান্তি ও প্রার্থনা, উদাত্ত পৃথিবী, দিওয়ান, মোর জাদুদের সমাধি পরে ইত্যাদি। এছাড়াও আছে গল্পগ্রন্থ কেয়ার কাঁটা। ভ্রমণকাহিনী সোভিয়েত দিনগুলি ও স্মৃতিকথা একাত্তরের ডায়েরি। স্বাধীনতা দিবস পদক, একুশে পদক, বাংলা একাডেমী, সোভিয়েত লেনিন, বেগম রোকেয়া পদক ও জাতীয় কবিতা পুরস্কারসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
আপনার মন্তব্য