বাংলাদেশের প্রচ্ছদশিল্পের ক্রমবিকাশ

 প্রকাশিত: ২০১৫-০১-১৬ ০৩:২৪:১১

 আপডেট: ২০১৫-০১-২৭ ১০:২০:৩২

অঞ্জন আচার্য : এককথায় প্রচ্ছদকে বলা যায় একটি বইয়ের আয়না। কারণ, বইয়ে লিপিবদ্ধ বৃহৎ লেখাকে চিত্রের মাধ্যমে ছোট পরিসরে উপস্থাপিত হয় প্রচ্ছদে। একটি বইয়ের প্রচ্ছদ মূলত সম্পন্ন করে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। প্রথমত, এটি বইকে করে তোলে আকর্ষণীয়, দ্বিতীয়ত এর মধ্য দিয়ে বইয়ের নাম, লেখকের নাম প্রভৃতি তথ্য মেলে ধরে পাঠকের চোখে। আর এ অপরিহার্য কাজটি সম্পন্ন করেন প্রচ্ছদশিল্পীরা। প্রকৃতপক্ষে বই বিক্রির ক্ষেত্রে মানসম্মত লেখা যেমন জরুরি, তেমনি সেটিকে নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করাও প্রয়োজন।
নির্ভুল লেখা, পরিচ্ছন্ন ছাপা ও বাঁধাইয়ের পাশাপাশি রুচিশীল প্রচ্ছদই পারে পাঠকের কাছে তা গ্রহণযোগ্য করে তুলতে। বাংলাদেশে প্রচ্ছদশিল্পের রয়েছে এক দীর্ঘ ধারাবাহিক ইতিহাস। একসময় বইয়ের প্রচ্ছদ তৈরি হতো কাঠের ব্লকে। এরপর এলো জিংক, তারপর লাইনোর পথ অতিক্রম করে সাম্প্রতিক প্রচ্ছদ নির্মাণে যুক্ত হয়েছে আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তি।
আঙ্গিক ও অঙ্কন কৌশগত দিক থেকে প্রচ্ছদ চার ধরনের : ১. টাইপোগ্রাফিক বা ক্যালিগ্রাফিক, ২. ইলাস্ট্রেটিভ, ৩. ফটোগ্রাফিক, ৪. মিশ্র। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়- আবদুল হকের ‘বাঙালী জাতীয়তাবাদ এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ’ ও বদরুদ্দীন উমরের ‘পূর্ব বাঙালার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ বইটি টাইপোগ্রাফিক বা ক্যালিগ্রাফিকে করা প্রচ্ছদ। এখানে লেখনির কারুকাজের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বইয়ের মর্মার্থ। একইভাবে আহসান হাবীবের ‘মেঘ বলে চৈত্রে যাবো’ এবং জ্যোতির্ময় গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ত্রিসীমানা’ বইটি করা হয়েছে ইলাস্ট্রেটিভ মাধ্যমে, যেখানে অলঙ্করণের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে বই দুটির প্রচ্ছদ।
শামসুর রাহমানের ‘ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা’ বইটিতে ব্যবহার করা হয়েছে কবির নিজস্ব প্রতিকৃতি। বর্তমান বিশ্বে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এককালের এই ফটোগ্রাফিক প্রচ্ছদের। এছাড়া সেলিম আল দীনের ‘হাত হদাই’ এবং হুমায়ূন আহমেদের ‘মন্দ্রসপ্তক’ বই দুটি করা হয়েছে মিশ্র মাধ্যমে।
ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলার রাজধানী তখন কলকাতায়। সেখানেই বাংলা বইয়ের মুদ্রণ ও ছাপার কাজের শুরু। আর বইয়ের প্রচ্ছদের আদি যুগ বলতে বোঝানো হয় সেখানকার কাজকেই। একেবারে প্রথম দিকে চিত্রশিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নন্দলাল বসু, শ্রী আশু, ফণীভূষণ গুপ্ত, পূর্ণচন্দ্র চক্রবর্তী, সমর দে, অন্নদা মুনসী, কাজী আবুল কাশেম প্রমুখ ব্যক্তি কাজ করেন প্রচ্ছদ নিয়ে। এরপর সত্যজিৎ রায়, মাখন দত্ত গুপ্ত, জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, খালেদ চৌধুরীরা কাজ করেন এ জগতে। পরবর্তী সময়ে রণেন আয়ান দত্ত, অজিত গুপ্ত, সমীর সরকার, পূর্ণেন্দু পত্রী প্রমুখ শিল্পীরা প্রচ্ছদশিল্পকে করে তোলেন সমৃদ্ধ। এছাড়া বিশ্বভারতী প্রকাশিত বইয়ের প্রচ্ছদের একটি বিশেষ ধারাও রয়েছে রবীন্দ্রনাথের পরিকল্পনায় গড়া।
এদেশে প্রচ্ছদের প্রাথমিক যুগে শিল্পীর সংখ্যা ছিল হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র। এঁদের মধ্যে ছিলেন নন্দলাল বসু, জয়নুল আবেদিন, কাজী আবুল কাশেম, কামরুল হাসান, খালেদ চৌধুরী, ইমদাদ হোসেন, আবদুর রউফ, মোস্তফা মনোয়ার, কাইয়ুম চৌধুরী। পরের দিকে যুক্ত হন আমিনুল ইসলাম, আশীষ চৌধুরী, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, হাশেম খান, মুর্তজা বশীর, প্রাণেশ মণ্ডল, কালাম মাহমুদ, সিরাজুল হক, কাজী মোহাম্মদ ইদরিস, মুকতাদির, গোপেশ মালাকার, হারাধন বর্মণ, নিতুন কুণ্ডু প্রমুখ শিল্পী।
ষাটের দশকের শেষে ও সত্তর দশকের শুরুর দিকে আরও কয়েকজন কাজ করেন এ শিল্প নিয়ে। তাঁরা হলেন- সবিহ-উল-আলম, রফিকুন নবী, আবুল বারক আলভী, কাজী হাসান হাবিব, হামিদুল ইসলাম, বীরেন সোম, সৈয়দ লুৎফুল হক।
 
সত্তর দশকের মাঝামাঝি থেকে আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ হলেন- শওকাতুজ্জামান, সৈয়দ ইকবাল, মাহবুব আকন্দ, ফখরুল ইসলাম রচি, মাহবুব কামরান, আফজাল হোসেন, শেখ আফজাল, খালিদ আহসান, আইনুল হক মুন্না, মামুন কায়সার, মাসুক হেলাল, সমর মজুমদার।
পরবর্তী সময়ে ধ্রুব এষ, অশোক কর্মকার, রফি হক, জাফর ইকবাল জুয়েল, পঙ্কজ পাঠক, উত্তম সেন, মোবারক হোসেন লিটন, শিশির ভট্টাচার্য, ইউসুফ হাসান, আনওয়ার ফারুকসহ অনেকে নব্বই দশকে নিজেদের নাম প্রতিষ্ঠিত করেন।
সাম্প্রতিককালে প্রচ্ছদশিল্পীদের মধ্যে গুপু ত্রিবেদী, নাজিব তারেক, সব্যসাচী হাজরা, নিয়াজ মোরশেদ তুলি, গৌতম ঘোষ, আমজাদ আকাশ, শিবু কুমার শীল, তৌহিন হাসান, চারু পিন্টু, আবু হাসান, মোস্তাফিজ কারিগর, সব্যসাচী মিস্ত্রী, রাজিব রায়, মামুন হুসাইন, নাসিম আহমেদ, রাজীব রাজু, কাজল চৌধুরী প্রমুখ শিল্পী বিশেষ কৃতিত্ব দেখিয়ে আসছেন, ছাপ রাখছেন স্বাতন্ত্র্য প্রতিভার। এমনকি চিত্রশিল্পী না হওয়া সত্ত্বেও সৈয়দ শামসুল হক, নির্মলেন্দু গুণ, রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্, ফজলুর আলম, বিলু কবীর প্রমুখ লেখক করেছেন তাঁদের নিজেদের বইয়ের প্রচ্ছদ।
বাংলাদেশের বাংলা বইয়ের প্রচ্ছদের প্রবীণতম ব্যক্তিত্ব হলেন কাজী আবুল কাশেম। কলকাতা থেকে এসে প্রথম তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে নিয়োজিত হন প্রচ্ছদ শিল্পী হিসেবে। তিনিই প্রথম অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলমান প্রচ্ছদ-কারিগর। তাঁর অসামান্য শিল্প-প্রতিভায় নিজের অবস্থান তৈরি করতে সমর্থ হন তিনি। ’৪৭-এর দেশভাগের আগ পর্যন্ত তিনি তাঁর অবস্থানকে করে তুলেছিলেন সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁর প্রচ্ছদ এবং অলঙ্করণ স্পর্শ করে মানুষের অন্তর। শিশুদের বইয়ের অলঙ্করণে তিনি ঘটাতেন গ্রামীণ জীবনের নানা বৈচিত্র্যময় উপাদানের উপস্থিতি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্থান পেয়েছে নিঃসর্গের চালচিত্র। শিশুদের জন্য তিনি পরম যত্নে আঁকতেন কার্টুনও।
কলকাতার স্কুল অব আর্টের অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নন্দলাল বুস, পূর্ণ চক্রবর্তী, ধীরেন বল, যতীন সাহা প্রমুখ প্রতিভাধর শিল্পীর সহচার্যে থাকা আবুল কাশেম এদেশের প্রচ্ছদেও ঘটালেন সেই রীতিরই প্রতিফলন; অর্থাৎ প্রাচ্য দেশীয় তুলিতে রেখাঙ্কন চিত্র। কবি গোলাম মোস্তফার ‘সাহারা’, ‘রক্তরাগ’, ‘হাস্নুহেনা’, ‘আলোক মালা’; আবদুল কাদির ও রেজাউল করীমের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘কাব্য মালঞ্চ’; আবুল ফজলের ‘সাহিত্য ও সংস্কৃতি’; অলোক গুহের ‘অগ্নি-বীণা বাজান যিনি’; রেজাউল করীমের ‘সাধক দারাশিকোহ’; শেখ মোছলেম আহমদের ‘শারাবান তহুরা’; নীলিমা ইব্রাহিমের ‘শাহী এলাকার পথে’; আবদুল হকের ‘দিলরুবা’; শামসুল হকের ‘চম্পা চামেলী’ প্রভৃতি বইয়ের কাজ করেছেন শিল্পী কাশেম। তাঁর সূক্ষ্ম রেখা ও মোলায়েম তুলির পরশে আঁকা ফিগারে প্রতিভাত হয়ে ওঠে অনবদ্য রূপে।
বাংলাদেশের প্রচ্ছদশিল্পের আরেক পথ-প্রদর্শক ছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। কলকাতা আর্ট স্কুলে অধ্যায়নকালে জয়নুল আবেদিন হানাফি পত্রিকায় কার্টুন, টেবিল ল্যাম্পের শেডচিত্রণ, বুলবুল পত্রিকায় স্কেচ অঙ্কন করে বেশ সমাদৃত হন। ছোটদের ‘সচিত্র কৃত্তিবাস’-এর সংকলক অধ্যাপিকা কল্যাণী দত্তের অগ্রজ বিনয়কৃষ্ণ দত্ত ছিলেন জয়নুলের বন্ধু। তাঁর মাধ্যমে প্রকাশক দেবকুমার বসু অনুরোধ জানালে ছোটদের ‘সচিত্র কৃত্তিবাস’ বইটির প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ করে দেন জয়নুল আবেদিন। জয়নুলের আঁকা ছবির মধ্য দিয়ে ওই বইটিতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে রামায়ণের বর্ণিল কাহিনী। পরবর্তীকালে তিনি কবি জসীম উদ্দীনের ‘রঙিলা নায়ের মাঝি’, ‘পদ্মাপার’, ‘বেদের মেয়ে’, ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’, ‘মাটির কান্না’, ‘গাঙের পার’; ‘পল্লীবধূ’; গোলাম সোলায়মানের ‘পরীবানু’; আহসান হাবীবের কাব্যগ্রন্থ ‘রাত্রি শেষ’; শামসুদ্দীন আবুল কালামের ‘কাঁশবনের কন্যা’ প্রভৃতি বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকেন।
কাজী নজরুল ইসলাম ও জসীম উদ্দীনের একাধিক বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন জয়নুল আবেদিন। তবে পরবর্তী সময়ে তিনি আর প্রচ্ছদ অঙ্কনে তেমন একটা আগ্রহ দেখাননি। জয়নুলের মতো করে পটুয়া কামরুল হাসানও স্বচেষ্ট ছিলেন প্রচ্ছদে দেশ ও মাটির গন্ধ মেশানো দিকে। সাধারণ মানুষের জীবনঘনিষ্ঠ এই শিল্পীর রেখার বর্ণবিন্যাস এবং অফুরন্ত উদ্ভাবন অবাক করে দেয় সবাইকে। ঐতিহ্যকে বইয়ের প্রচ্ছদে দৃশ্যমান করে শিল্পী কামরুল অনুধাবন করতেন বাস্তবের নতুন সত্য। গ্রামে গ্রামে ব্রতচারী আন্দোলনে যোগ দিয়ে তিনি আঁকতেন নানামাত্রিক ছবি। তাঁর স্কেচগুলো ছিল জীবন্ত এবং গতিচঞ্চল। জসীম উদ্দীনের ‘হলুদ বরনী’, ফররুখ আহমদের ‘নয়া জামাত’ ও ‘সাতসাগরের মাঝি’, মুনীর চৌধুরীর ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’, তৈয়ব উদ্দীনের ‘নকশা’, আবদুল গনি হাজারীর ‘সামান্য ধন’, সানাউল হকের ‘প্রবাসে যখন’, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘খোঁয়ারি’ ইত্যাদি বইয়ের প্রচ্ছদ তাঁরই গড়া।
এছাড়া খালেদ চৌধুরীর আঁকা সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘চাচা কাহিনী’ এবং ‘শবনম’; আবদুর রউফের করা সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ’র ‘লালসালু’, আবদুল কাদিরের ‘উত্তরবসন্ত’ আবু ইসহাকের ‘সূর্য-দীঘল বাড়ী’; মোস্তফা মনোয়ারের গড়া জসীম উদ্দীনের ‘বালুচর’ ও ‘ধান খেত’, গোলাম মোস্তফার ‘গীতি সঞ্চয়ন’, মালাকারের ‘পান্থ’ প্রচ্ছদশিল্পে যে অনন্য ভূমিকা রেখেছে, তা আজও অম্লান। এ শিল্প নিয়ে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। তাঁর আঁকা জসীম উদ্দীনের ‘বাঙ্গালীর হাসির গল্প (দ্বিতীয় খণ্ড)’, শামসুল হকের ‘নদীর নাম তিসতা’, শামসুর রাহমানের ‘রৌদ্র করোটিতে’ ও ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ’, হাসান হাফিজুর রহমানের ‘শোকার্ত তরবারি’, সৈয়দ আলী আহসানের ‘শিল্পবোধ ও শিল্পচৈতন্য’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘নীলদংশন/ নিষিদ্ধ লোবান’, হাসান আজিজুল হকের ‘নামহীন গোত্রহীন’, সাইয়িদ আতীকুল্লাহ’র ‘অদম্য পথিকের গান’, হুমায়ূন আহমেদের ‘নন্দিত নরকে’, বুলবন ওসমানের ‘সংস্কৃতি ও সংস্কৃতিতত্ত্ব’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের ‘চিত্রশিল্প : বাংলাদেশের’ প্রভৃতি শিল্পকর্মগুলো উজ্জ্বল স্বাক্ষর হয়ে আছে বাংলাদেশের প্রচ্ছদশিল্পের ইতিহাসে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রচ্ছদে বৈপ্লবিক পরিবর্তনটি ঘটিয়েছেন শিল্পী ধ্রুব এষ। প্রচ্ছদের বহুমাত্রিক মাধ্যমকে সংমিশ্রণ ঘটিয়ে তিনি এ শিল্পকে নিয়ে গেছেন এক ভিন্নমাত্রায়।
প্রচ্ছদশিল্প প্রসঙ্গে শিল্পী রফিকুন নবী বলেন, ‘আমার সবসময় মনে হয়েছে, একটি চিত্র আঁকতে যতখানি সময় লাগে কিংবা শ্রমের প্রয়োজন হয়, ঠিক তেমনি প্রচ্ছদ আঁকতে একই সময় লাগে। অথচ একটি ছবি সর্বজনের কাছে পৌঁছাতে দেরি লাগে। অনেকেই ছবি বোঝেন না। অন্যদিকে একটি গ্রন্থ খুব দ্রুত পাঠকের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়। প্রযুক্তির ব্যবহার অবশ্যই কাজ সহজ করেছে, তবে শৈল্পিক ব্যবহার শিল্পীর হাতে সীমাবদ্ধ। শিল্পিত কাজ করার মানসিকতা থাকলে তবেই ভাল কাজ সম্ভব।’
এ শিল্প সম্পর্কে শিল্পী ধ্রুব এষ বলেন, ‘কেবল বইয়ের প্রতি ঝোঁক থাকলে কিংবা আঁকাআঁকির হাত থাকলেই একজন ভাল প্রচ্ছদশিল্পী হওয়া যায় না। এর জন্য দরকার বইয়ে বৃহৎ পরিসরে লেখা বলা কথাকে ছোট একটু জায়গার মধ্যে এমনভাবে উপস্থাপন করা, যাতে পাঠক বইয়ের অন্তর্নিহিত ভাবকে সহজে বুঝতে পারেন। সেই সঙ্গে বইটি হয়ে উঠবে আকর্ষণীয়। তাই প্রথমেই নিজের মধ্যে ধারণ করতে হবে এই দুটি বিষয়। তারপর আঁকতে হবে প্রচ্ছদ।’
চিত্রশিল্পী ও চিত্রম পত্রিকার সম্পাদক আমজাদ আকাশ বলেন, ‘এককালে প্রচ্ছদ কোনো বিষয় ছিল না; বরং অলংকরণের বর্ধিত রূপ ছিল সেটি। মোঘল আমলে তৎকালীন আরবি-ফার্সি বইয়ের লেখকদের বই দেখলে তেমনই প্রমাণ পাওয়া যায়। বইটির অলংকরণ ছিল প্রতিটি পাতায় পাতায়।’
তরুণ শিল্পী চারু পিন্টু বলেন, ‘বইয়ের লেখার সামষ্টিক চিত্র ফুটে ওঠে প্রচ্ছদে, যা মলাটবন্দী হয় বইয়ের ওপরে। তবে কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহারের আগে প্রচ্ছদের কাজটিকে কিছুটা হাতের মাধ্যমে গড়ে নেয়া প্রয়োজন। নয়ত শৈল্পিক দিকটি পুরোপুরি তুলে ধরা যায় না; প্রাণ হারায় শিল্পের।’
শিল্পী গৌতম ঘোষ বলেন, ‘আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রচ্ছদশিল্পীরা ভূষিত হচ্ছেন আন্তর্জাতিক সম্মানে। প্রতি বছর শ্রেষ্ঠ প্রচ্ছদশিল্পীকে পুরস্কৃত করছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। যার ফলে প্রচ্ছদশিল্পে কাজ করতে উৎসাহী হয়ে উঠছেন নবীন প্রতিভাবান অনেক চিত্রশিল্পী। ভাল কাজও করছেন অনেকেই। এমনকি এ শিল্প-মাধ্যমকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করছেন অনেকে, যা নিঃসন্দেহে একটি ভাল দিক।’


আপনার মন্তব্য