প্রকাশিত: ২০১৫-০৭-১৯ ২০:৪২:৫১
আপডেট: ২০১৫-০৭-২০ ১৫:৫৫:৩০
মারূফ অমিত:
জীবদ্দশায় তিনি ছিলেন তিনি ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। বলা চলে, বাংলা সাহিত্যে তাঁর মতো কেউ নেই আর। মৃত্যুর পরও তিনি সমান জনপ্রিয়। তিনি বেঁচে আছেন পাঠক-ভক্তদের হৃদয়ে। তিনি হুমায়ূন আহমদ। বাংলা সাহিত্যের এই বিরলপ্রজ প্রতিভার ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মৃত্যুদিনে হুমায়ূন ভক্তরা তাকে স্মরণ করেছেন গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়। ফেসবুকের টাইমলাইন হয়ে উঠেছে হুমায়ূনময়। যেনো শারিরীকভাবে না থেকেও তিনি আরোও প্রবলভাবে আছেন। তিনি আছেন তাঁর পাঠরে সমস্ত সত্ত্বাজুড়ে। আজ অনেকেই ফেসবুকে প্রিয় এই লেখককে স্মরণ করেছেন।
তার কিছুটা তুলে ধরা হলো-
অদ্ভূত সেই হিমুটি তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, "স্যার আপনাকে খুব মিস্ করি। আপনাকে নিয়ে লেখার ক্ষমতা আজ আমার নেই। আজকের এই দিনে আপনার লেখা চিরতরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। স্যার, আপনাকে অনেক স্যালুট। আসিফ আহমেদ অমি লিখেছেন, "এই দুনিয়াতে মানুষ আসবে আবার চলেও যাবে। এটাই স্বাভাবিক, এটাই দুনিয়ার নিয়ম। তবে কিছু পছন্দের মানুষ চলে গেলেও তাদের মনে থাকে আজীবন। এরকম ই সারাজীবন মনে রাখার মত একজন মানুষ হলো হুমায়ুন আহমেদ।"
মুমতাহিনা তিশা আহমেদ লিখেছে, "তিন বছর আগের ঘটনা ।রাত প্রায় সাড়ে এগারোটার মতো বাজে।খাবার নিয়ে টিভির সামনে আসতেই খবরে দেখলাম হুমায়ূন আহমেদ স্যার আর নেই ।এখনও মনে পড়ে রাতে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলাম।আপুর ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। ক্লাস টু থেকে তার বই পড়ি,তার প্রভাব সবসময়ই থাকবে। এখনও গভীর রাতে চোখের পানিতে বালিশের কোণা ভিজাই, হয়তো এখনও কেউ খালি পায়ে হিমু হয়ে হেঁটে বেড়ায় জোছনা রাতে ।হোক কোনও অঝোর বৃষ্টির দিনে কিংবা জোছনা রাতে হুমায়ূন ভক্তরা তাঁকে খুঁজে বেড়াবে তাঁর সৃষ্টির মাঝে ।যেখানেই থাকুন স্যার ভালো থাকুন ।"
ইরা তার স্ট্যটাসে লিখেছেন, "সেইদিন ও বৃষ্টি ছিল ! প্রকৃতি নিয়ম করে দিলো ? বৃষ্টি পাগল মানুষটির চলে যাওয়ার দিন বৃষ্টি পড়বেই ! হিমুর আর নতুন পাগলামো পাবো না! পাবো না মিসির আলীর নতুন কোন রহস্য উন্মোচনের ঝোক! মিস ইউ স্যার!
সজীব আলম লিখেছেন, "ঠিকই স্যার আপনি সব রঙ মুছে দিয়ে অচিনপুরে চলে গেছেন। কিন্তু স্যার আপনি যেই অচিনপুরেই যান,আমরা দুই দিন আগে পরে সবাই সেই অচিনপুরে আসছি।শেষে দোয়া করি আপনি যেখানে যে অবস্থায় থাকেন ভাল থেকেন।"
নীল রূপার হলুদ হিমু লিখেছেন, "হুমায়ূন স্যার নাই তবু ১৯শে জুলাই আজও বৃষ্টি ঝরায়। হুমায়ূন স্যার নাই-তবু সোনার কদম আজও কিশোরীর ভেজা হাতে সোদাঁ গন্ধ নির্ভুল ছড়ায়। হুমায়ূন স্যার নাই-বড় ব্যথা বাজে ঈদে তার নিজ হাতে লেখা নাটকগুলোকে খুব মিস করি। হুমায়ূন স্যার নাই-তবুও তো কোজাগরি জোছনায় একদিন ভেসে যাবে পুরো চরাচর, কত না সিদ্ধার্থ ঠিক বেরিয়ে পড়বেন একা, পিছে ফেলে সন্তান সংসার। মন তো কাঁদেই খুব- মন তো কাঁদবে, তবু যাব কই-যাব কই এই বরষায়।
কৃষ্ণচূড়ার শেষ বেলার উপন্যাস লিখেছেন, "আজ হিমু হাটাহাটি করে না ঘুমন্ত ঘড়ে একাকিত্ব ঘুড়াঘুড়ি করি। মিসির আলি রহস্য উদঘাটন করে না পাছে প্রেমে পড়ে যায় তার ভয়ে। ঝুম ছন্দপতনে জল মেঘের আন্দোলণ ঘটে শুভ্র চাবৃষ্টি খায় না। থমকে গেলো কেনো তিনটি বছর ধরে, তোমার লেখা কিভাবে পারছো না লিখে?
কবি শুভাশিষ সিনহা লিখেছেন, হুমায়ূন অাহমেদ জ্ঞানি লোক ছিলেন, কিন্তু 'জ্ঞানি লেখক' ছিলেন না। লেখককে 'জ্ঞানী' হতে নেই। তাহলে তিনি পাঠকের উপরিতলায় উঠে যান। পাঠক লেখকের ওপর অগাধ বিশ্বাস রাখতে চায়, তাকে অাপনার করে নিতে চায়, তার লেখার ভিতর নিজের সবকিছুকে হাতড়িয়ে বেড়াতে চায়; কারণ লেখক পাঠকের অভিজ্ঞতার সামান্য-অসামান্য সব ব্যাপারকে হাজির করার জ্ঞান নিয়ে তার সামনে হাজির হন না, হন সহমর্মি হৃদয় নিয়ে, অাত্মার অাত্মীয় হয়ে। তখন অার ব্যবধান থাকে না পাঠকে লেখকে। সেই জায়গায় পৌঁছানোর জন্য লেখককে জ্ঞানী হতে হয়। কিন্তু জ্ঞান-প্রাপ্ত হবার পর তার শরীরে কোথাও সে-দাগ রাখতে নাই। মহৎ লেখকের অাসল লড়াই সেই দাগ মোছার জন্যই। অনেক বড় লেখক শেষতক তা পেরে ওঠেন না; হুমায়ূন অাহমেদ পেরেছিলেন। সে-পথ খুব সিধা, কিন্তু তার দেখা মেলা কঠিন। সহজকঠিন সেই পথের একদার যাত্রী হুমায়ূন অাহমেদ। প্রয়াণের সপ্রেম স্মরণ।
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন, "আজ যদি তিনি বেঁচে থাকতেন, এই ঈদের দিনে নামায পড়ে এসেই ঘুমাতেন। হয়তো নখ কাটতেন অথবা চুলে কালার করে দিতে বলতেন... তার মহাশূণত্যার ৩ বছর। হুমায়ূন আহমেদ, আপনি কেমন আছেন?"
জিয়া উদ্দিন বাবলু লিখেছেন, আপনিই তো আমাদের বলতে শিখিয়েছেন "যদি মন কাদেঁ তুমি চলে এসো, চলে এসো এক বরষায়"। আপনার কি একটি বার মন কাদেঁনা আমাদের সকলের জন্য !! এখন তো ঘোর বরষা । আকাশটা ও বৈরী । কদম গুচ্ছ হাতে কোটি মানুষ গুলো যে প্রিয় মুখটা দেখার অপেক্ষায় আছে সেটা কি আপনি দেখতে পাচ্ছেন না ! দূর থেকে তো সবই দেখছেন শুধু আমাদের ই বঞ্চিত করছেন এক অনাবিল সুখ থেকে ! তবুও হাজার ও পাঠকরা আজ দোয়া করব আপনি যেন সর্বচ্চ সুখে থাকুন । কারণ আপনিই তো আমাকে বুঝতে শিখে গেছেন প্রিয় মানুষটার সুখ দেখে কীভাবে নিজে সুখে থাকা যায় ।
সুজন সাহিদ লিখেছেন, আমার বই পড়া অভ্যেস মূলত গড়ে উঠে স্যারের বইগুলো দিয়ে। সাহিত্যে চলিত রীতির মাধ্যমে নিজেকে অনন্য এক জায়গায় মেলে ধরেছেন। হয়েছেন পাঠকপ্রিয়তা ঠিক দিয়ে অনন্য এবং জনপ্রিয়। হিমু, মিসির আলি এবং শুভ্রের মত কিছু কালজয়ী চরিত্র তাকে বাঁচিয়ে রাখবে পাঠকমনন ও সাহিত্যপাড়া।"
রুনা রোকসানা লিখেছেন, " যদি মন কাঁদে, তুমি চলে এসো-চলে এসো,এক বরষায় "। হুমায়ূন আহমেদ স্যারের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। কিন্তু স্যার তো আছেন - এই বরষায়, এই কদম ফুলে, জোছনার। তাঁর সকল সৃষ্টি জীবন্ত। উনি আছেন। স্যার যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন। শুধু আক্ষেপ বই মেলায় নতুন বই পাই না।
মাহমুদুল হক মুন্সি তাঁর স্ট্যাটাসে লিখেছেন- আজ একজন লেখকের চলে যাবার দিন, যিনি ঘোর অমানিশা কালে আমাদের শিখিয়েছিলেন, "তুই রাজাকার!" মনে পড়ে প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ। আজ একজন লেখকের পৃথিবীতে আসার দিন, যিনি আমাদের শিখিয়েছিলেন দেশপ্রেম কি। শুভ জন্মদিন কাজী আনোয়ার হোসেন। আমি ব্যাক্তিগতভাবে কৃতজ্ঞ আপনাদের দুজনের কাছেই। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
আপনার মন্তব্য