‘মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক’ : রবীন্দ্র প্রয়াণ দিবস আজ

 প্রকাশিত: ২০১৫-০৮-০৬ ১০:৫৩:১৪

 আপডেট: ২০১৫-০৮-০৬ ১২:০১:৩৭

সিলেটটুডে ডেস্ক:

‘আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে দুয়ার কাঁপে/ ক্ষণে ক্ষণে ঘরের বাঁধন যায় বুঝি আজ টুটে/ ধরিত্রী তাঁর অঙ্গনেতে নাচের তালে ওঠেন মেতে/ চঞ্চল তাঁর অঞ্চল যায় লুটে/ প্রথম যুগের বচন শুনি মনে/ নবশ্যামল প্রাণের নিকেতনে।’

শ্রাবণ ধারায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চলে গেছেন জাগতিক মায়া ত্যা করে কিন্তু তার আগে যা কিছু রেখে গেছেন তা তাঁকে অমর করেছে, নিঃসন্দেহে। কবি, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, সঙ্গীতস্রষ্টা, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক ও দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৪১ সালের ০৭ আগস্ট (২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) জোড়াসাঁকোর নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

রবীন্দ্রনাথ কি মারা গেছেন- এ প্রশ্নে ভিন্ন ভিন্ন উত্তর আছে কারণ সৃষ্টিই যে এই নশ্বর জীবনকে অবিনশ্বরতা দেয়, সে কথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন বলেই তিনি বলেছিলেন, ‘মৃত্যু দিয়ে যে প্রাণের মূল্য দিতে হয়/ সে প্রাণ অমৃতলোকে / মৃত্যুকে করে জয়।’

তিনিই আবার জীবনসায়াহ্নে লিখেছিলেন- ‘মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক।’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ যখন ইহধাম ত্যাগ করেন সেদিন শোকার্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম শ্রদ্ধা নিবেদন করে লিখেছিলেন, ‘দুপুরের রবি পড়িয়াছে ঢলে অস্তপারে কোলে/ বাংলার কবি শ্যাম বাংলার হৃদয়ের ছবি তুমি চলে যাবে বলে/ শ্রাবণের মেঘ ছুটে এলো দলে দলে।’

বাংলা গদ্যের আধুনিকায়নের পথিকৃৎ রবিঠাকুর ছোটগল্পেরও জনক। গল্পে, উপন্যাসে, কবিতায়, প্রবন্ধে, নতুন নতুন সুরে ও বিচিত্র গানের বাণীতে, অসাধারণ সব দার্শনিক চিন্তাসমৃদ্ধ প্রবন্ধে, সমাজ ও রাষ্ট্রনীতিসংলগ্ন গভীর জীবনবাদী চিন্তাজাগানিয়া নিবন্ধে, এমনকি চিত্রকলায়ও রবীন্দ্রনাথ চিরনবীন-চির অমর।

তাঁর কবিতা, গান, সাহিত্যের অন্যান্য শাখার লেখনী মানুষকে আজও নতুনের অন্বেষণ পথে, উপলব্ধির পথে আকর্ষণ করে। রবীন্দ্রনাথ আজও আমাদের মনমানসিকতা গঠনের, চেতনার উন্মেষের প্রধান অবলম্বন। আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি ‘বাংলাদেশ’ নামের বানানটিও আমরা রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে পেয়েছি।

বাঙালি তথা বাংলাদেশীদের যাপিত জীবনাচরণের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে। এখনও প্রতি বছর রমনা বটমূলে রবীন্দ্রনাথের গানে গানে পহেলা বৈশাখ উদযাপন আমাদের জাতীয় জীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ। আমাদের জীবনের এমন কোনো বিষয় নেই, যেখানে আমরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে পাই না। তার রচনাবলী আমাদের প্রেরণার শিখা হয়ে পথ দেখায়।

বাংলা সাহিত্যকে তিনি বিশ্বের দরবারে বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন। ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে তিনি প্রথম এশীয় হিসেবে ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনিই একমাত্র কবি, যিনি বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা। শ্রীলংকার জাতীয় সঙ্গীত তাঁর লেখা একটি কবিতার মূল সুর থেকেও উৎসারিত।

জীবনের শেষ পর্যায়ে চিত্রকর হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। আশি বছরের জীবন সাধনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার জন্ম এবং মৃত্যুকে একাকার করে তুলেছিলেন অজস অমরতার শাশ্বত বার্তায়। সত্যি বলতে বাঙালির চেতনার রঙ স্পষ্ট হয়েছে রবিঠাকুরের আলোয়। তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী।

বাংলা সন ১২৬৮ সনের ২৫ বৈশাখ (১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ৮ মে) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি একাধারের কবি, নাট্যকার, কথাশিল্পী, চিত্রশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, ছোট গল্পকার ও ভাষাবিদ।

দীর্ঘ ৮০ বছরের জীবনে বাংলা সাহিত্যের সবক্ষেত্রে তিনি বিচরণ করেছেন। বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসঙ্কলন প্রকাশিত হয়েছে। তার সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সঙ্কলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে।

জীবনসায়াহ্নে এসে কবি লিখেছিলেন- ‘মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক।’ হ্যাঁ, রবীন্দ্রনাথ আমাদেরই লোক!

আপনার মন্তব্য