সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মদিন আজ

 প্রকাশিত: ২০১৫-০৯-০৭ ০০:০২:৫৪

ডেস্ক রিপোর্ট:

দুই বাংলার জনপ্রিয় কবি ও ঔপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ৮১তম জন্মদিন আজ। ১৯৩৪ সালের আজকের এই দিনে বাংলাদেশের মাদারিপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

১৯৫৩ সালে সুনীল ‘কৃত্তিবাস’ নামে একটি ম্যাগাজিন বের করেন। সেটি ধীরে ধীরে সেসময়ের নতুন প্রজন্মের কবিদের জন্য প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। এই কবিরা সবাই মিলে নতুন ছন্দ, নতুন ধারার কবিতা সৃষ্টি শুরু করেন। এরপর তিনি কলকাতার স্বনামধন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আনন্দবাজার গ্রুপের বিভিন্ন প্রকাশনার সঙ্গে কাজ করেন। বহু বছর তিনি আনন্দবাজার গ্রুপের সঙ্গে কাজ করেছেন।

তার বইয়ের সংখ্যা দু’শোরও বেশি। সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার সাবলীল বিচরণ থাকলেও কবিতার প্রতিই ছিল তার বেশি টান। কবিতাকে তিনি বর্ণনা করেছেন তার ‘প্রথম ভালোবাসা’ হিসেবে। কবিতাতে কাহিনী বর্ণনার ক্ষেত্রে তার একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ছিল।

তার উল্লেখযোগ্য কবিতার মাঝে রয়েছে- একা এবং কয়েকজন, হঠাৎ নীরার জন্য, ভোর বেলার উপহার, সাদা পৃষ্ঠা তোমার সঙ্গে, সেই মূহুর্তে নীরা, আমার স্বপ্ন ,জাগরণ হেমবর্ণ, আমি কিরকম ভাবে বেঁচে আছি, ভালোবাসা খণ্ডকাব্য ইত্যাদি।

সুনীলকে বেশিরভাগ পাঠক চেনেন একজন ঔপন্যাসিক হিসেবে। তার প্রথম উপন্যাসের নাম ‘আত্মপ্রকাশ’। ১৯৬৫ সালে স্বনামধন্য ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়া এই উপন্যাস একই সঙ্গে আরেকটি কারণেও উল্লেখযোগ্য। কারণ, দেশ পত্রিকায় এই উপন্যাসের আগে কখনোই কোনো নবীণ লেখকের লেখা প্রকাশিত হয়নি।

লেখাটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সুনীল সমালোচকদের প্রশংসা যেমন পান, একইভাবে তার সদ্য প্রকাশিত উপন্যাসের আগ্রাসী ও ‘অগ্রহণযোগ্য’ (অনেকের কাছে) ভাষার কারণে তীব্র বিতর্কের সূত্রপাত হয়।

সুনীল ভীত হয়ে পড়েন এবং কিছুদিনের জন্য কলকাতা থেকে দূরে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। অস্কারবিজয়ী চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় এই উপন্যাস নিয়ে একটি সিনেমা নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নানা কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি।

তার আরও কয়েকটি উপন্যাস হচ্ছে- যমজ কাহিনী, অচেনা মানুষ, ছায়া দর্শন, মধু কাহিনী, আমার স্বপ্ন, আঁধার রাতের অতিথি, অন্য জীবনের সাধ, স্বপ্ন সম্ভব, সুনীলের সাত দিন, রাণী ও অবিনাশ ইত্যাদি।

এরপরই প্রকাশিত হয় তার ইতিহাস নির্ভর উপন্যাস ‘সেই সময়’। পলাশীর যুদ্ধ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত ইতিহাসের সব বিখ্যাত চরিত্র আর ঘটনা জীবন্ত হয়ে ওঠে এই উপন্যাসে। এটা দুই দশক ধরে সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের একটি ছিল।

১৯৮৫ সালে এই উপন্যাসের জন্য তিনি ‘সাহিত্য আকাদেমি’ পুরস্কার লাভ করেন। একইভাবে তার অন্য দুই উপন্যাস ‘প্রথম আলো’ ও ‘পূর্ব-পশ্চিম’ সর্বাধিক পাঠকপ্রিয়তা পায়।

‘পূর্ব-পশ্চিম’ উপন্যাসের বিষয় ছিল দেশভাগের পর বাংলাদেশ, পশ্চিম বাংলা ও অন্যান্য স্থানের বাঙালিদের অবস্থা। এই উপন্যাসে সুনীল নিজের চোখে যা দেখেছেন, সেটিই বর্ণনা করেছেন তার সাবলীল সাহিত্যিক ভাষায়। তিনি ১৯৮২ সালে পান ‘বঙ্কিম পুরস্কার’, আর ১৯৭২ও ১৯৮৯- এই দু’বছর ভূষিত হন ‘আনন্দ পুরস্কার’ এ।

উপন্যাস ছাড়াও সুনীল ভ্রমণ কাহিনী, শিশুতোষ গল্প, প্রবন্ধ লিখেছিলেন। তার সাহিত্যিক ছদ্মনাম ছিল নীল লোহিত, সনাতন পাঠক আর নীল উপাধ্যায়। শিশুতোষ গল্পগুলোর মধ্যে তার ‘কাকাবাবু’ সিরিজ সর্বাধিক জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৭৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হবার পর থেকে ‘কাকাবাবু’ সিরিজের ৩৫টি গল্প প্রকাশিত হয়েছে।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখে গিয়েছেন বেশ কয়েকটি নাটক- মালঞ্চমালা, প্রাণের প্রহরী, রাজা-রাণী ও রাজসভায় মাধবী, স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজী।

সুনীলের সাহিত্যকর্ম থেকে তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র। সত্যজিৎ রায় নির্মাণ করেছিলেন ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ ও ‘অরণ্যের দিন রাত্রি’ নামে দুটি চলচ্চিত্র। ‘কাকাবাবু’ সিরিজের গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে চারটি ছবি- সবুজ দ্বীপের রাজা, কাকাবাবু হেরে গেলেন?, এক টুকরো চাঁদ, মিশর রহস্য।

এছাড়া ২০০৪ সালে তার ‘রাণী ও অবিনাশ’ ছোট গল্প নিয়ে মুক্তি পায় ‘হঠাৎ নীরার জন্য’। এছাড়া অপর্ণা সেন পরিচালিত ‘ইতি মৃণালিনী’ তে তার কবিতা ‘স্মৃতির শহর’ ব্যবহার করা হয়।

২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর সুনীল আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন না ফেরার দেশে। জন্মদিনে বাংলা সাহিত্যের এই প্রথিতযশা সাহিত্যিকের জন্য রইলো অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

আপনার মন্তব্য