আমার কবিতাকে আমি আমার জীবনভাবনার নির্যাস হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করি - কুমার দীপ

একুশে গ্রন্থমেলার লেখক-পাঠকের অপূর্ব মিলনমেলা। আমরা সিলেটটুডে২৪.কমের পক্ষ থেকে মুখোমুখি হয়েছি লেখক-প্রকাশকদের সাথে। এবারের পর্বে কথা বলছেন কবি ও প্রাবন্ধিক কুমার দীপ

 প্রকাশিত: ২০১৫-০১-২৫ ২২:৪৫:৩৬

কুমার দীপ

তথ্য-সূত্র : কুমার দীপ'র ফেসবুক প্রোফাইল

নিউজ ডেস্ক:

কুমার দীপ কবি ও প্রাবন্ধিক। লেখালেখির মাধ্যমে ইতোমধ্যেই বোদ্ধা-পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছেন। নিজের লেখালেখি সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন যেখানে লিখার জন্যে লিখা নয় তখন তাঁকে আলাদা করে ভাবতেই হয় এবং এই আলাদা ভাবনা তাঁকে তাঁর অবস্থানে বিশিষ্টতা দিয়েছে, সন্দেহ নেই।

মূলত কবি ও প্রাবন্ধিক হলেও গল্পও লিখেন, ২০১৪ একুশে গ্রন্থমেলায় তাঁর একটি গল্পগ্রন্থ বেরিয়েছিল। এই গল্পগ্রন্থসহ প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা পাঁচ। আসছে বইমেলায় আরও দুইটি বই প্রকাশ হতে যাচ্ছে যার মধ্যে রয়েছে কবিতা ও প্রবন্ধ। একজন কবি হিসেবে কবিতা নিয়েই তাঁর প্রকাশিতব্য প্রবন্ধের বই বলে কবিতার প্রতি স্বাভাবিক দরদ ফুটে ওঠে।

সিলেটটুডে২৪.কমের সাথে আলাপচারিতায় একুশে গ্রন্থমেলা, নিজের লেখালেখি এবং বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন দিক ওঠে এসেছে। বিস্তারিত পাঠকদের উদ্দেশে: 

সিলেটটুডে২৪: অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫-তে আপনার কী বই আসছে?
কুমার দীপ:  অমর একুশে বইমেলা ২০১৫ আমার দুটো বই আসছে। একটি কবিতার অপরটি প্রবন্ধের। কবিতার বইটির নাম : ঘৃণার পিরিচে মুখ। প্রবন্ধ : বাংলা কবিতায় ঐতিহ্য ও অন্যান্য অনুষঙ্গ। কবিতার বইয়ের প্রকাশক দেশ পাবলিকেশন; প্রবন্ধগ্রন্থের প্রকাশক জিনিয়াস প্রকাশনী।

সিলেটটুডে২৪: আপনার প্রকাশিত বই সংখ্যা কত?
কুমার দীপ: ২০১৫ বইমেলার পূর্ব পর্যন্ত আমার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫টি। কবিতা : কোথাও কোনো মানুষ নেই (২০১০) প্রবন্ধ : নান্দনিক শামসুর রাহমান (২০১২); আধুনিক বাংলা সাহিত্য : পাঠ ও প্রতিকৃতি (২০১২); অনন্য শামসুর রাহমান (২০১৫, কলকাতা) গল্প : ভালোবাসার উল্টোরথে (২০১৪)।

সিলেটটুডে২৪: অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আপনার প্রত্যাশা কী?
কুমার দীপ: প্রথম প্রত্যাশা মানুষ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে য্যানো মেলায় যেতে পারে, চলতে পারে, বই কিনতে পারে। রাজনৈতিক কারণে দেশের মধ্যে মানুষের নিরাপত্তা না থাকলে মেলাতেও মানুষের নিরাপত্তা থাকবে কীভাবে ? ভালো বই প্রকাশিত হোক, ভালো বই পাঠক কিনুন, ভালো বইয়ের ভালো মূল্যায়ন হোক; উপযুক্ত লেখকের মর্যাদা বাড়ুক, প্রতিভাবান তরুণের বই কিনতে পাঠক দ্বিধা না করুন... এসবই তো চাওয়া।

সিলেটটুডে২৪: অমর একুশে গ্রন্থমেলা কিভাবে আরো আকর্ষণীয় করা যায়?
কুমার দীপ: এটা ব্যবস্থাপনাগত ব্যাপার। আমার মনে হয় আমাদের একুশে মেলা একেবারে কম আকর্ষণীয় নয়। এই মেলাকে কেন্দ্র কেরই প্রবাস থেকে মানুষ আসেন; পাশের দেশ থেকেও লেখক আসেন। যারা মেলা নিয়ে ভাবেন, তারা যথেষ্ট পরিশ্রম করেন বলেই আমার মনে হয়। তবু মেলার সার্বিক কল্যাণের স্বার্থে সবচাইতে উপযুক্ত লোককে দিয়ে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি দেখাশোনা করা উচিত। শিশুদের বইয়ের নামে শিশুর মনকে অযৌক্তিক করে তুলতে পারে, ইতিবাচক কিছু দিতে পারে না এরকম কোনো বই; ভুল বানানে ভরা বই, য্যানো কেউ তুলে দিতে না পারে এদিকটা দ্যাখা জরুরি। তেমনি বড়োরাও অপাঠ্য বইয়ের শিকার না হোক, এটা দেখতে হবে।

সিলেটটুডে২৪: একুশে গ্রন্থমেলায় নিয়মিত যান? কী কারণে?
কুমার দীপ: না। একুশে বইমেলায় নিয়মিত তো দূরের কথা, কোনো কোনো বছর প্রায় যাওয়াই হয়ে ওঠেনা। এমনিতে আমি অলস প্রকৃতির মানুষ; বসে বসে পড়তে-লিখতে আর ভাবতে ভালোবাসি; তার উপর থাকি ঢাকা থেকে অনেক দূরে, বাগেরহাট নামক মফস্বলে। পেশাগত ব্যস্ততা আর যাত্রাপথের অশান্তি আমাকে রাজধানী থেকে দূরেই রাখে অধিকাংশ সময়। রাজধানীর সার্বিক পরিবেশও আমাকে কখনও স্বস্তি দ্যায় না। তবে মেলার প্রতিদিনকার খবর রাখবার চেষ্টা করি পত্র-পত্রিকাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে। এখন তো অনেক ইলেকট্রনিক মিডিয়া। ফেসবুকের কল্যাণে তো মেলার একটা বড়ো অংশই জানা হয়ে যায়।

সিলেটটুডে২৪: লেখালেখিতে কোন বিষয়টিকে আপনি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন? কী যুক্তি এর পেছনে?
কুমার দীপ: আমার লেখার মুল সুর মানবতা। মনুষ্যত্বের অস্তিত্বই আমাকে বুদ্ধি, জ্ঞান আর যুক্তির সমন্বয়ে শিল্পিত করতে উৎসাহ দ্যায়। আমি মনে করি, মানুষ সবচাইতে উৎকৃষ্ট আবার মানুষই সবচাইতে নিকৃষ্ট প্রাণি। মানুষের ইতিবাচকতা য্যামন আনন্দে অভিভূত করে, তেমনি মানুষের নেতিবাচক কর্ম বেদনাহত করে। আমি যে কেবল লেখার জন্যই লিখি না, মানুষের অন্ধকার দিকটাকে আঘাত করতে চাই, নিজের সামান্য সামর্থ্যে যেটুকু পারি, আলো জ্বালাতে চাই; শিল্পের ছলে জীবন দেখতে ও দ্যাখাতে চাই। মানুষের ক্ষমতা অসীম। তাকে কূপমুণ্ডুক করে তোলে, অন্ধত্বের মোড়কে বন্দি করে, এমন ভাবনা থেকে আমার পাঠককে সবসময়ই দূরে রাখতে চাই। মুক্তমন, মুক্তবুদ্ধি, ইতিহাস সচেতনতা, প্রকৃতি আর বিজ্ঞানমনস্কতা আমার শিল্প ও জীবনচেতনার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দিক।

সিলেটটুডে২৪: আপনার বই আর পাঠক এবং আপনি আর অন্যান্য বই এ সম্পর্কে আপনার কী মূল্যায়ন?
কুমার দীপ: আমি জনপ্রিয় ধারার কোনো লেখক নই; লিখি কবিতা, প্রবন্ধ; মাঝে-মধ্যে দু’একটা গল্প। লেখক হিসেবেও তরুণদের মধ্যেই পড়ি।  আমার বইএর পাঠক এখনও সীমিতই। যে ক’জন পড়েছেন বা পড়েন তাদের অনুভূতি আমার অজানাপ্রায়। তবে আমার প্রথম কবিতার বই ‘কোথাও কোনো মানুষ নেই’ বেশ ক’জন বোদ্ধা লেখক-পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছে।
অন্যের বই ? আমি প্রত্যেক মেলা থেকেই বেশকিছু বই কিনি। মেলায় না যেতে পারলে অন্যভাবে ক্রয় করি। আমার কাছে লেখক নয়, চিন্তাশীল লেখাই প্রাধান্য পায়। আমি প্রত্যেক বছরই বইমেলার সময়জুড়ে আমার ক্রয়যোগ্য বইয়ের তালিকা তৈরি করি।

সিলেটটুডে২৪: বই প্রকাশে আপনি কী ধরণের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছিলেন? কিভাবে উত্তরণ ঘটল?
কুমার দীপ: এদেশে তরুণ লেখকের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে প্রকাশক না পাওয়া। কবিতার বই হলে তো কথাই বলতে চান না কেউ। বাধ্য হয়ে তরুণ লেখক নিজের অর্থেই বের করেন তার প্রথম বই। আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। আমার প্রথম কবিতার বইটি রাজশাহী থেকে প্রকাশিত সাহিত্যের কাগজ চিহ্ন’র নিজস্ব প্রকাশনা থেকে বের হয়েছিলো। পরবর্তী বইগুলো ঢাকা থেকে বের হলেও প্রয়াসটা মোটেও মসৃণ নয়। রাজধানীর বাইরে থাকা তরুণরা ভালো লিখলেও প্রকাশক পেতে হলে কাউকে না কাউকে ভায়া করতেই হয়।

সিলেটটুডে২৪: প্রকাশিত, প্রকাশিতব্য বই আর প্রকাশক(দের) সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন
কুমার দীপ: নিজের বই সম্পর্কে নিজেই মূল্যায়ন করা কতটা স্বাভাবিক, আমি জানি না; তবে কখনও কখনও দু’এক কথা বলা দরকার হয়ে পড়ে। আমার কবিতাকে আমি আমার জীবনভাবনার নির্যাস হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করি।

সিলেটটুডে২৪: সিলেটটুডে২৪.কম’র পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
কুমার দীপ: সিলেটটুডে২৪.কম-কেও আন্তরিক ধন্যবাদ।



কুমার দীপ'র প্রকাশিতব্য কাব্যগ্রন্থ ঘৃণার পিরিচে মুখ থেকে একটি কবিতা:

ব্যজস্তুতি

যেদিকে তাকাই- পুড়ে যায় তৃণমন
বিশ্বাসে বঞ্চনা ঢোকে, নিঃশ্বাসে কার্বন
মুদ্রা ভিন্ন কোনো জ্ঞানদান নেই গুরুর চরণে নেই গৌরবের ধুলো
ছাত্র বিবাদের নাম ; ছাত্রী বিষাদের; লেখাপড়া চাকুরির মুলো।
চিকিৎসক কামোদ্ধত, অর্থের পশ্চাতে ধাবমান
ক্লিনিক রাঁঢ়ের বাড়ি, পরশেই নজরানা পান।
মুঠোবন্দি রাজনীতি ; সতত ফন্দিফিকিরে ব্যস্ত
ব্যবসা মানেই মুনাফার চাঁদ, ধর্মরাজেরা চাতুরিপণায় ন্যস্ত
যতবড় কর্মকর্তা, ততবড় খানেও’লা ; খেয়ে তবে কাজ
মনিব নির্যাতক ! কুকুরের চেয়ে বিশ্বাসী কোনো চর বেঁচে নেই পৃথিবীতে আজ !
শুদ্ধ কোনো কবি নেই, কবিতার কূহকী পাতায়
কে তবে কাঁদবে বলো ? কে-ইবা কাঁদায় ?




গ্রন্থনা: ক.য়া/ জানুয়ারি ২৫, ২০১৫





আপনার মন্তব্য