ইংরেজি শিখতে, বলতে এবং লিখতে ইচ্ছুকদের জন্য এই বই

গ্রন্থালোচনা

 প্রকাশিত: ২০২০-০২-১১ ১৮:০৪:০০

 আপডেট: ২০২০-০২-১২ ০১:৩০:৫৯

আব্দুল করিম কিম:

[বই: ‘মিসটেক : ইংরেজিতে আমার যত ভুল', লেখক: জেসমিন চৌধুরী, প্রকাশক: শব্দশৈলী]

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যতিক্রমধর্মী প্রচ্ছদটা দেখার পর থেকেই জেসমিন চৌধুরীর নতুন বই Misstake হাতে পাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। একজন সুন্দরী আধুনিক নারী হা করে আছেন, তার মুখের সামনে রয়েছে এক টুকরা চিজ কেক। কেকের নিচের পরত মরুভূমির বালু, উপরে একটা উট বিস্মিত হয়ে রমণীর হা করা মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রচ্ছদটা একটু ব্যতিক্রমী বলেই মনে হচ্ছিল এর একটা বিশেষ কোনো অর্থ থাকবে। অবশেষে বইটা হাতে এলো, এবং সাথে সাথেই খুলে বসলাম। ‘ডেজার্ট খাবেন?’ শিরোনামের প্রথম অধ্যায়টা পড়েই প্রচ্ছদের অর্থ এবং বইয়ের বিষয়বস্তুর সাথে এর সামঞ্জস্যতা বোধগম্য হলো। নতুন কিছু শিখলাম। বিষয়টা আসলেই বেশ মজার। মজাটা কোথায়? জানতে হলে বইটা পড়তে হবে।

এই বইতে ইংরেজির শিক্ষক জেসমিন চৌধুরী গল্পের মাধ্যমে শিক্ষিত সমাজের মধ্যে প্রচলিত এবং প্রতিষ্ঠিত কিছু ভুলের আলোচনা করেছেন। নিজের আশেপাশে অনেককে যেসব ভুল করতে শোনেন, যেসব ভুলকে ভুলই ভাবা হয় না সেগুলো নিয়ে কিছু গল্প বলেছেন তিনি. গল্পগুলো কল্পিত নয়, প্রকৃতপক্ষেই তার জীবনে ঘটেছে। ‘ডেজার্ট খাবেন?’ ‘প্রেমিকের যত ভুল’, ‘আমার বাবার একটি মাত্র ভুল’, ‘লজেন্সের ধাক্কা’- এই শিরোনামগুলোও বেশ আকর্ষণীয় এবং বইটি পড়তে আগ্রহ জাগায়। বইটির প্রতিটি অধ্যায়ে আছে ইংরেজি ব্যাকরণ, অভিব্যক্তি অথবা উচ্চারণের ভুল নিয়ে একটি অথবা একাধিক গল্প এবং সেই সাথে ভুলের ব্যাখ্যা ও সঠিক উত্তর। গল্পের ছলে জটিল সব কথাও অনায়াসে মাথায় ঢুকে যায়।

বইটির প্রতি পাতায় পাতায় লেখক এমন সব ভুলের কথা তুলে ধরেছেন যেগুলোকে আমি নিজেও চিরদিন শুদ্ধ বলে ভেবে এসেছি, নিজের ভুলের এই আবিষ্কারকে মেনে নিতে আসলে বেশ কষ্টই হয়। যেমন শ্রমিককে আমরা সবসময় ‘লেবার’ বলে এসেছি, পরিপক্ব কে বলেছি ‘ম্যাচিউরড’। জেসমিন চৌধুরী দাবি করছেন এগুলো সঠিক নয়। তাহলে সঠিক শব্দগুলো কী হবে? বইতে তিনি ব্যাখ্যাসহ সঠিক উত্তরগুলো দিয়েছেন।

যে বিষয়টা সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে তা হলো লেখক অকপটভাবে বিভিন্ন সময়ে তার নিজের যে ভুলগুলো হয়েছে সেগুলোর কথাও গল্প করেছেন। বিলেতে যাওয়ার পর কীভাবে নিজের কিছু ভুল টের পেলেন এবং শুধরে নিলেন, এমনকি শিক্ষক হিসেবেও তার নিজের কিছু ভুলের কথা বিভিন্ন অধ্যায়ে উঠে এসেছে। ভুলের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে- ভুল করা দোষের নয়, ‘আমার ভুল হতে পারে না’ ধরে নিয়ে শোধরানোর চেষ্টা না করাটাই দোষের। লেখক নিজের জীবনে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সহজ ধারাবাহিক সুযোগ না পাওয়া সত্ত্বেও যেভাবে ইংরেজি ভাষা শেখার চেষ্টা করেছেন এবং তার প্রতিটা ভুল যেভাবে তাকে শিখতে আরও বেশি আগ্রহী করে তুলেছে তা আসলেই প্রশংসনীয়।

ইংরেজির অসংখ্য বই, বিশেষ করে কমন মিস্টেকের বই, বাজারে পাওয়া যায়। গুগল সার্চ করে যে কোনো শব্দের সঠিক অর্থ, উচ্চারণ অথবা ব্যবহার শিখে নেয়া যায়। তাহলে কেন জেসমিন চৌধুরীর এই বইটি কিনবেন?

প্রথমত, জেসমিন চৌধুরী বিশ বছর ধরে ইংরেজি শিখছেন এবং শেখাচ্ছেন। এই প্রক্রিয়ায় অসংখ্য বইয়ের সান্নিধ্যে এসেছেন তিনি। যারা ইংরেজি ভাষা শিক্ষার সাথে জড়িত নন তাদের পক্ষে এতোগুলো বই আলাদাভাবে পড়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশে বেড়ে ওঠা এবং বাংলাদেশী সমাজে বিচরণের ফলে লেখক জানেন এইসব বইয়ের ঠিক কোন অংশগুলো বাঙ্গালি পাঠকের জন্য প্রয়োজন এবং তিনি বেছে বেছে সেই বিষয়গুলোর মধ্যে কয়েকটিকে হাস্যরসের মাধ্যমে এই বইটিতে সংকলিত করেছেন। দ্বিতীয়ত, আমার ভুলটা কোথায় হচ্ছে তা যদি আমি না জানি তাহলে গুগলে কী সার্চ করব তা আমি জানব কী করে? দীর্ঘদিন ধরে আশেপাশের মানুষদের ইংরেজি কথাবার্তা পর্যবেক্ষণ করার ফলে লেখক জানেন আমাদের ভুলগুলো কোথায় এবং সেগুলোর মধ্য থেকে কিছু ভুল বইটিতে স্থান পেয়েছে। আগামীতে বইটির সিরিজ করবেন বলেও ভূমিকায় উল্লেখ করেছেন তিনি। সেদিক থেকে দেখলে এই বইটি নিজেই একটা ভূমিকার মতো যা আমাদেরকে নিজেদের ভুল সম্পর্কে সচেতন করে তুলবে। সচেতনতা সৃষ্টি হলে আমরা নিজেরাই ইংরেজিতে অন্যান্য ভুল চিহ্নিত করতে পারব এবং বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ভুলগুলো শুধরে নিতে পারব।

জেসমিন চৌধুরীকে বলা হয় একজন প্রথাবিরোধী লেখক। যা কিছু নিয়ে কথা বলা নিষেধ, তা নিয়ে লেখালেখি করেন তিনি। সেদিক থেকে বিচার করলে তার এই বইটি একেবারেই অন্যরকম। এতে ইংরেজি ভাষার বিভিন্ন সমস্যার কথা বলা হলেও আলোচনা করা হয়েছে বাংলায়, ফলে যারা ইংরেজিতে তেমন পটু নন, তাদের জন্যও বিষয়গুলো বোঝা কঠিন হবে না বলেই আমার বিশ্বাস। যারা শুদ্ধভাবে ইংরেজি শিখতে, বলতে এবং লিখতে ইচ্ছুক তাদেরকে আমি বইটি কিনতে উৎসাহিত করব। বইটি পড়ে সব না হলেও আপনার কিছু ভুল অবশ্যই শুধরে নিতে পারবেন।

আপনার মন্তব্য