বেঁচে থাকার দুঃসহ নির্ভারতা: (প্রথম পর্ব : নির্ভারতা এবং ভার-৪ এবং ৫ )

 প্রকাশিত: ২০১৫-১২-০৪ ১১:১৪:১৮

 আপডেট: ২০১৫-১২-১২ ১১:২৪:১৩

কাজী মাহবুব হাসান:

বেঁচে থাকার দুঃসহ নির্ভারতা: (প্রথম পর্ব : নির্ভারতা এবং ভার - ১,২ এবং ৩)

 এর পর...


কিন্ত তারপর একদিন হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করার মধ্যবর্তী বিরতিতে একজন নার্স টমাসকে টেলিফোন ধরতে বলে, রিসিভারের ভিতর থেকে আসা তেরেজার কণ্ঠস্বর সে শুনতে পায়। তেরেজা তাকে ট্রেন স্টেশন থেকে ফোন করেছিল। সুতীব্র একটি আনন্দ অনুভব করেছিল টমাস। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই সন্ধ্যায় তার কিছু ব্যস্ততা ছিল, তাই পরের দিন ছাড়া তেরেজাকে তার বাসায় আসতে আমন্ত্রণ জানাতে পারেনি টমাস। কিন্তু টেলিফোন ছাড়ার পরপরই নিজেকে ভৎর্সনা করলো টমাস, তেরেজাকে সে  সরাসরি তার বাসায় যাওয়ার কথা না বলবার জন্য। আর যাইহোক, সন্ধ্যার পরিকল্পনাটা বাতিল করার জন্য যথেষ্ট সময়ও তো তার হাতে ছিল! টমাস কল্পনা করার চেষ্টা করলো তার সাথে দেখা হবার আগের এই ছত্রিশ ঘণ্টায় প্রাহাতে তেরেজা একা একা কি করতে পারে এবং টমাস প্রায় অর্ধেক মনস্থির করেই ফেলেছিল, এক্ষুনি সে গাড়ীতে উঠে বের হবে আর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে তেরেজাকে খুঁজতে।

পরের দিন সন্ধ্যায় তেরেজা এলো, কাঁধে ঝোলানো একটা হাতব্যাগ নিয়ে, আগের চেয়েও আরো অনেক বেশী সুন্দর লাগছিল তাকে দেখতে। তার বগলের নীচে বেশ মোটা একটা বই, বইটা ছিল আনা কারেনিনা। বেশ ভালো মেজাজে ছিলো তেরেজা, বরং মনে হয়েছিল যেন একটু বেশী উচ্ছ্বসিত এবং চেষ্টা ছিল টমাসকে বোঝাতে, হঠাৎ করেই যেন তার সাথে দেখা করতে এসেছে সে, যেন ব্যাপারটা ঘটেছে কোনো একটা সুযোগের কারণেই : প্রাহাতে সে একটা কাজে এসেছিল, হয়তো (এই পর্যায়ে তার সেই কাজ সম্বন্ধে তেরেজা বক্তব্য খানিকটা অস্পষ্ট হয়ে যায়) কোন একটা কাজ খুঁজে পাবার আশায়।

পরে, তারা যখন নগ্ন হয়ে পাশাপাশি বিছানায় শুয়ে খানিকটা সময় কাটাচ্ছিল, টমাস তাকে জিজ্ঞাসা করে, সে  থাকার জন্য কোথায় উঠেছে। তখন বেশ রাত  এবং গাড়ী দিয়ে সেখানে তাকে পৌঁছে দেবার প্রস্তাব করে টমাস। বিব্রত, তেরেজা উত্তর দেয়, সে থাকার জন্য এখনও কোন হোটেল ঠিক করেনি এবং তার সুটকেসটি সে রেখে এসেছে ট্রেন স্টেশনে।
মাত্র দুই দিন আগেই, টমাস ভয় পেয়েছিল, যদি তেরেজাকে সে প্রাহাতে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানায়, তবে সে তাকে তার জীবনটাই নিবেদন করতে পারে। যখনই তেরেজা তাকে বলে, তার সুটকেসটি আছে স্টেশনে, তাৎক্ষনিক ভাবে সে বুঝতে পারে, তেরেজার সারা জীবন ধারণ করে আছে সেই সুটকেসটাই এবং স্টেশনে সে এটি রেখে এসেছে শুধুমাত্র ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার জীবনটা টমাসের কাছে নিবেদন করতে না পারে।

বাসার সামনে পার্ক করে রাখা টমাসের গাড়ীতে তারা দুজন এসে ওঠে এবং স্টেশনের দিকে রওনা দেয়। সেখানে  রক্ষিত সুটকেসটি দাবী করে টমাস ( আকারে বিশাল আর অত্যন্ত ভারী) এবং সুটকেস আর তেরেজা দুজনকেই নিয়ে আসে তার ফ্ল্যাটে।

কেমন করে এত দ্রুত এই সিদ্ধান্তে সে আসতে পেরেছিলো, যখন কিনা প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সে এত বেশী দ্বিধান্বিত ছিল যে, এমন কি তেরেজা কেমন আছে সেটা জানতে চেয়ে একটা পোষ্ট কার্ড পর্যন্ত পাঠাতেও সে নিজেকে রাজী করতে পারেনি ?

সে নিজেও বিস্মিত হয়েছিল। তার মেনে চলা মূলনীতিগুলোর বিরুদ্ধে সে কাজটি করেছে। দশ বছর আগে যখন তার স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছিল, সেই ঘটনাকে, অন্যরা যেভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান উদযাপন করে, ঠিক সেভাবে উদযাপন করেছিল টমাস। সে বুঝতে পেরেছিল, কোনো নারীর পাশাপাশি বসবাস করার জন্য তার জন্ম হয়নি, শুধুমাত্র একজন ব্যাচেলরের জীবনেই সে তার নিজের পূর্ণতা পেতে পারে। তার জীবনটাও সে এমনভাবেই সাজানোর চেষ্টা করেছিল, যেন কোনো নারী সুটকেস নিয়ে সেখানে ঢুকতে না পারে। এ কারণেই তার ফ্ল্যাটে একটি মাত্র বিছানা। যদিও সেটা যথেষ্ট প্রশস্ত, তবে টমাস তার প্রেমিকাদের বলতো কারো পাশাপাশি বিছানায় শুয়ে  সে ঘুমাতে পারেনা এবং সাধারণত মধ্যরাতের পর সে তাদের বাড়ী পৌঁছে দিয়ে আসতো। সুতরাং তার বাসায় তেরেজার প্রথম বেড়াতে আসার সময় তার পাশে টমাসের না শোবার কারণ শুধুমাত্র ফ্লুই ছিলনা । সেবারই প্রথম সে রাত কাটিয়েছিল তার বড় আর্মচেয়ারে, আর সপ্তাহের বাকী দিনগুলো সে গাড়ী চালিয়ে ফেরত গেছে হাসপাতালে, সেখানে তার অফিসে একটা অস্থায়ী বিছানা আছে ।

কিন্তু এবার  তেরেজার পাশেই ঘুমিয়ে পড়ে টমাস। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই সে তার পাশে তেরেজাকে দেখে, তার হাত ধরে তখনও সে ঘুমিয়ে। তারা কি সারা রাত হাতে হাত ধরে কাটিয়েছিল? তার জন্য এটা বিশ্বাস করা খুবই কঠিন।

এবং ঘুমের মধ্যে তেরেজা যখন গভীর ভাবে ঘুমের শ্বাস নিচ্ছিল তার হাতে ধরা ছিল টমাসের হাত (বেশ শক্ত করে ধরা: তেরেজার শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রাখা হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়াতে পারছিল না টমাস), বিশাল আকারের সুটকেসটাও দাড়িয়ে ছিল বিছানার পাশে।

ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেবার ভয়ে তেরেজার হাত থেকে নিজের হাতটা ছাগানোর চেষ্টা থেকে বিরত থাকে সে এবং খুব সাবধানে পাশ ফিরে শোয় তেরেজাকে একটু ভালো করে দেখার জন্য।

আবারও তার কাছে মনে হলো তেরেজা যেন একটা শিশু, যাকে আলকাতরা লেপা বুলরাশের ঝুড়িতে শুইয়ে দিয়ে কেউ নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে। সে নিশ্চয়ই শিশুসহ এই ঝুড়িটি উত্তাল নদীতে ভেসে যেতে দিতে পারেনা! ফারাও কন্যা যদি মোজেসকে [১২] নিয়ে ভেসে যাওয়া ঝুড়িটাকে ঢেউ থেকে ছিনিয়ে না নিত, কোনো ওল্ড টেস্টামেন্টও [১৩] লেখা হতো না, এখন সভ্যতা বলতে আমরা যা জানি সেটারও অস্তিত্ব থাকতো না। কত প্রাচীন পুরাণ কাহিনীর শুরু হয়েছে পরিত্যক্ত শিশুকে রক্ষা করার মধ্য দিয়ে। পলিবাস যদি শিশু ইডিপাসকে [১৪] না প্রতিপালন করতেন, সফোক্লিস [১৫] কি তার সবচেয়ে সুন্দরতম  বিয়োগান্তক নাটকটি লিখতে পারতেন!

টমাস সেই সময় অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছিল, কখনো কখনো রূপকগুলো খুবই ভয়ঙ্কর হতে পারে। রূপকগুলোকে কখনো হালকা ভাবে নেয়া ঠিক না। একটি মাত্র রুপকই কিন্তু পারে ভালোবাসার জন্ম দিতে।


টমাস তার স্ত্রীর সাথে মাত্র দুইটি বছর একসাথে বসবাস করেছিল এবং তাদের একটি ছেলে আছে। বিবাহ বিচ্ছেদের প্রক্রিয়ায় বিচারক শিশুটির দায়ভার দেন তার মাকে এবং টমাসকে নির্দেশ দেন তার মাসিক আয়ের এক তৃতীয়াংশ শিশুটির ভরণপোষণের জন্য প্রদান করতে। এছাড়া বিচারক তাকে এক সপ্তাহ অন্তর ছেলের সাথে দেখা করার অধিকারও মঞ্জুর করেছিলেন।

কিন্তু প্রতিবারই, যখন টমাস এর তার ছেলেকে দেখতে যাবার কথা, ছেলেটির মা কোনো না কোনো একটা অজুহাত খুঁজে বের করতো, যেন টমাসের সাথে তার ছেলের দেখা না হয়। খুব দ্রুত টমাস বুঝতে পেরেছিল, তাদের জন্য সে যদি দামী উপহার সে নিয়ে যায় তাহলে এই দেখা করার বিষয়টি অপেক্ষাকৃত ঝামেলমুক্ত হচ্ছে। অর্থাৎ মা’কে তার ঘুষ দিতে হবে, তার নিজের ছেলের ভালোবাসা পাবার জন্য। ছেলেটির মধ্যে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিগুলো, যা অবশ্যই ছেলেটির মায়ের দৃষ্টিভঙ্গির সম্পূর্ণভাবে বিপরীত, বপন করার একধরনের অবাস্তব এবং আদর্শগত একটি ভাববিলাসী প্রচেষ্টা করার সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ সে অবশ্য দেখেছিল। কিন্তু শুধু সেই ভাবনাটাই তাকে নিঃশেষ করে ফেলেছিল। যখন, এরকম কোনো এক রোববারে, ছেলেটির মা, তার নির্ধারিত দেখা করার দিনে, ছেলের সাথে দেখা করার যাবে না বলে অজুহাত দাড় করিয়ে বাতিল করে দিয়েছিল, টমাসও সেই মুহূর্তের আকস্মিক তাড়নায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আর কখনোই সে তার ছেলেকে দেখবে না।

কেন এই শিশুটির জন্য তার অতিরিক্ত কিছু অনুভব করা উচিৎ, শুধুমাত্র অন্য অনেকদিনের মতই একটি অপরিণামদর্শী রাত ছাড়া যার সাথে তার কোন যোগসূত্রই নেই?  অবশ্যই সে তার ভরণপোষণের খরচ অব্যাহত রাখার ব্যাপারে বিবেকের প্রতি সতর্ক , তবে টমাস চাচ্ছিল না শুধুমাত্র পিতৃসূলভ অনুভূতির খাতিরে কেউ তাকে বাধ্য করুক তার ছেলের জন্য যুদ্ধ করতে!

বলা বাহুল্য, টমাসের এই সিদ্ধান্তের সমব্যথী কোনো সমর্থক ছিল না। তার নিজের বাবামা সরাসরি তাকেই একমাত্র দোষী হিসাবে চিহ্নিত করেছিল: যদি টমাস তার ছেলের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ না দেখায়, তাহলে তারা , অর্থাৎ টমাসের বাবা মাও তাদের ছেলের ব্যাপারে আর কোনো আগ্রহ দেখাবে না। তারা যথারীতি তাদের প্রাক্তন পুত্রবধূর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার যাবতীয় প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন এবং তাদের এই দৃষ্টান্তমূলক এবং ন্যায়বিচারের স্বপক্ষে তাদের আদর্শগত অবস্থানটি বেশ গর্বে সাথে প্রচারও করেছিলেন।

এভাবেই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মূলত টমাস তার জীবন থেকে স্ত্রী, পুত্র, মা এবং বাবাকে পুরোপুরি আলাদা করার বিষয়টি সম্পন্ন করে ফেলে। শুধুমাত্র একটি জিনিস এই অভিজ্ঞতা টমাসকে শিখিয়েছিল, তা হলো নারীজাতির প্রতি তার ভয়। টমাস তাদের কামনা করে বটে, তবে টমাস তাদের ভয়ও করে।  এই ভয় আর কামনার মধ্যে একটি সমঝোতা করার প্রয়োজনে, এক বিশেষ ধরনের সম্পর্ক সে পরিকল্পনা করেছিল, তার ভাষায় সেই সম্পর্কটি হচ্ছে ‘কাম বন্ধুত্বের’ । সে তার প্রেমিকাদের বলতো : শুধুমাত্র একটি সম্পর্কেই দুই পক্ষ সুখী হতে পারে, যে সম্পর্কে অতিরিক্ত ভাবাবেগের কোন জায়গা নেই এবং কোনো পক্ষই একে অপরের জীবন এবং স্বাধীনতার উপর কোনো দাবী আরোপ করে না।

এই কাম বন্ধুত্বগুলো যেন ভালোবাসার আগ্রাসী রূপ ধারণ না করে, সেটা নিশ্চিত করতে, টমাস তার দীর্ঘ দিনের প্রেমিকাদের সাথে দেখা করতো শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট সময়ের বিরতি দিয়ে। টমাস মনে করতো তার এই পদ্ধতিতে কোনো ভুল নেই এবং তার বন্ধুদের মধ্যে বিষয়টি প্রচলনের জন্য প্রচারও করতো:  ‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে ’তিন’ এর নিয়মটা মেনে চলা। হয় তুমি কোনো নারীর সাথে দেখা করবে খুব দ্রুত পর পর তিনবার, এরপর আর কখনোই না অথবা এই সম্পর্ককে অনেক বছর টিকিয়ে রাখতে চাইলে সেক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে হবে, প্রতিটি দেখার মধ্যবর্তী সময়কাল কমপক্ষে তিন সপ্তাহ।’

এই তিনের নিয়ম টমাসকে সাহায্য করেছিল যেমন বেশ কিছু নারীর সাথে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক রাখতে এবং একই সাথে আরো অনেকের সাথে সংক্ষিপ্ত কিছু সম্পর্কে জড়াতে। টমাসকে অবশ্যই সবাই সহজে বুঝতে পারতো না। তাকে একমাত্র যে নারী সবচেয়ে ভালো বুঝতে পেরেছিল, সে হলো সাবিনা।  সাবিনা মূলত একজন চিত্রশিল্পী। সাবিনা টমাসকে বলতো, ‘আমি তোমাকে পছন্দ করি, যে কারণে সেটি হলো. তুমি কিচ [১৬] এর সম্পূর্ণ বিপরীত, কিচ এর রাজত্বে তুমি একটা দানব হতে’।

প্রাহাতে তেরেজার জন্য একটা কাজ খুঁজতে এই সাবিনারই শরণাপন্ন হয়েছিল টমাস। কাম বন্ধুত্বের অলিখিত চুক্তি মোতাবেক  সাবিনা তার পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব ততটুকু করার কথা দিয়েছিল এবং খুব শীঘ্রই সে আসলেই তেরেজার জন্য একটা কাজের ব্যবস্থাও করে। একটি সচিত্র সাপ্তাহিক পত্রিকার ডার্ক রুমে। যদিও তেরেজার এই নতুন কাজটি হবার জন্য তার আলাদা কোনো যোগ্যতার প্রয়োজন ছিল না, তবে কাজটি তার অবস্থান ওয়েট্রেস থেকে প্রেসের একজন সদস্য হিসাবে উন্নীত করেছিল। যখন সাবিনা নিজেই সাপ্তাহিকটির সবার সাথে তেরেজাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল, টমাস বুঝতে পেরেছিল, সাবিনার চেয়ে ভালো বন্ধু হিসাবে এমন কোনো প্রেমিকা সে তার জীবনে পায়নি এর আগে।

(চলবে...)

নোট:
১২] মোজেস আব্রাহামিক ধর্মগুলোর ( জুডাইজম, খ্রিস্টধর্ম এবং ইসলাম) একজন প্রধান নবী। হিব্রু বাইবেল অনুযায়ী, মোজেস হচ্ছেন প্রাক্তন মিসরীয় রাজকুমার, পরবর্তী জীবনে যিনি ধর্মীয় নেতা হয়েছিলেন। জুডাইজম বা ইহুদী ধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নবী তিনি, যার উপর ধর্মগ্রন্থ হিসাবে তোরাহ নাজিল হয়েছিল বলে দাবী করা হয়। বুলরাশ বা নলখাগড়ার ঝুড়িতে মোজেস এর কাহিনীর সূত্র বাইবেলের প্রথম খণ্ড এক্সোডাসে। তৎকালীন মিসরীর সম্রাট ( ফারাও, খুব সম্ভবত দ্বিতীয় রামেসিস) আদেশ জারী করেন যে সব হিব্রু শিশু বালককে জন্মের সময় পানিতে ডুবিয়ে মারতে হবে। হিব্রুরা ওল্ড টেস্টামেন্ট অনুযায়ী তখন মিসরে বন্দী। মোজেসের মা ইয়োকোবেদ তার তিনমাস বয়সী পুত্রকে বাঁচাতে আলকাতরা দিয়ে লেপা একটি নলখাগড়া দিয়ে বোনা ঝুড়ির মধ্যে রেখে নীল নদের জলে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন, ফারাওয়ের কন্যা সেই ঝুড়িতে ভেসে আসা শিশুর কান্না শুনে তাকে উদ্ধার করেন।মোজেস ফারাও পরিবারের রাজকুমার হিসাবে প্রতিপালিত হয়েছিলেন।

[১৩] ওল্ড টেস্টামেন্ট - খ্রিস্টীয় বাইবেলের প্রথমাংশ, মূলত যার ভিত্তি হিব্রু বাইবেল, প্রাচীন ইজরায়েলাইটদের ধর্মীয় নানা কাহিনী ও লেখার সংকলন।

[১৪] পলিবাস - গ্রীক পুরাণের একটি চরিত্র, করিন্থের রাজা ছিলেন। থিবস এর রাজা রানী লেইয়াস ও জোকাস্টা যখন তাদের সন্তান ইডিপাসকে পরিত্যাগ করেছিলেন তার শৈশবে, পলিবস ইডিপাসকে নিজের ছেলের মত মানুষ করেন। ইডিপাস যখন ডেলফির ওরাকলের ভবিষ্যদ্বাণীতে জানতে পারেন তিনি তার বাবাকে হত্যা করবেন ও মাকে বিয়ে করবেন, ইডিপাস স্বেচ্ছা নির্বাসন বেছে নেন। পরবর্তীতে নিয়তি তাকে নিয়ে আসে থিবসে, যেখানে নিজের অজান্তে সে তার সত্যিকারের পিতা লেইয়াসকে হত্যা এবং মা জোকাস্টাকে বিবাহ করেন। এই কাহিনী নিয়েই সফোক্লিস ইডিপাস দি কিং নাটকটি লিখেছিলেন।

[১৫] সফোক্লিস (৪৯৭-৪০৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) অন্যতম প্রধান গ্রীক নাট্যকার,যার ট্রাজেডি বা বিয়োগান্তক নাটক সুপরিচিত। প্রায় ১২০ টি নাটক তিনি লিখেছিলেন, যার মাত্র সাতটি পূর্ণাঙ্গভাবে এখনও টিকে আছে। এই নাটকগুলোর মধ্যে অন্যতম ইডিপাস দি কিং।

[১৬] কিচ (Kitsch) একটি জার্মান ভাষা থেকে ধার করা শব্দ, এর অর্থ হতে পারে স্থূল ভাবালুতা থেকে কুরুচিপূর্ণ কোন কিছু), শব্দটি সাধারণত ব্যবহৃত হয় খুব জনপ্রিয় কোন শিল্পকলা বা ডিজাইন অথবা সাংস্কৃতিক কোনো প্রতীককে স্থুলরুচিপূর্ণভাবে যখন গণ উৎপাদন করা হয়। শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল শিল্পকলার ক্ষেত্রে উনবিংশ শতাব্দীর একটি শিল্প আন্দোলনের প্রতি প্রতিক্রিয়া হিসাবে, নন্দনতাত্ত্বিকতার দিক থেকে পরবর্তীতে শিল্প সমালোচকরা যাদের সমালোচনা করেছিলেন অতিমাত্রায় ভাবালুতাপুর্ণ এবং আবেগময়তার নাটকীয়তা পূর্ণ। সেই থেকে কিচ আর্ট, ঘনিষ্ঠভাবে সেন্টিমেন্টাল আর্টের সাথে সংশ্লিষ্ট। কোনো একটি দৃশ্যমান চিত্রকলাকে কিচ হিসাবে চিহ্নিত করাকে সাধারণত নিন্দাসূচকার্থে মনে করা হয়।

আপনার মন্তব্য