বেঁচে থাকার দুঃসহ নির্ভারতা: (প্রথম পর্ব : নির্ভারতা এবং ভার - ৬ এবং ৭)

 প্রকাশিত: ২০১৫-১২-০৭ ১২:৪২:৫৪

 আপডেট: ২০১৫-১২-১২ ১১:২৩:৪২

কাজী মাহবুব হাসান:

বেঁচে থাকার দুঃসহ নির্ভারতা: (প্রথম পর্ব : নির্ভারতা এবং ভার-৪ এবং ৫ )

   এর পর



কাম বন্ধুত্বের অলিখিত চুক্তির শর্ত দাবী করছে যে টমাস তার জীবন থেকে সব ভালোবাসাকেই পরিত্যাগ করবে। যে মুহূর্তে সে চুক্তির এই শর্তটি লঙ্ঘন করছে, তার অন্য প্রেমিকারা অপেক্ষাকৃত নিম্নস্তরে নেমে আসে এবং যে কোন সময় বিদ্রোহ ঘটার মত একটি ক্ষেত্রও প্রস্তত হয়।

সেকারণে, তেরেজা এবং তার ভারী সুটকেসটির জন্য টমাস আলাদা একটি ঘর ভাড়া করে। তেরেজাকে দেখাশোনা করা, তাকে রক্ষা করা, তার সঙ্গ উপভোগ করতে পারার ইচ্ছা পোষণ করতো টমাস, কিন্তু তার আগের জীবনযাত্রা বদলে ফেলার জন্য সে কোনো প্রয়োজন বোধ করেনি। সে চায়নি, কেউ জানতে পারুক, তেরেজা তার বাসায় রাত কাটাচ্ছে এবং তার সাথে ঘুমাচ্ছে। এক সাথে রাত কাটানো হচ্ছে ভালোবাসার করপাস ডেলিকটি [১৮]।

টমাস কখনোই তার অন্য প্রেমিকাদের সাথে রাত কাটায়নি। ব্যাপারটা খুব সহজ, যদি সে অন্য কারো বাসায় অবস্থান করে, সে যখনই চায়, তখনই সেখান থেকে বের হয়ে যেতে পারে। শুধু ব্যাপারটা ঝামেলা হয় যখন অন্যরা তার বাসায় আসে এবং তাকে যথারীতি ব্যাখ্যা দিতে হয় - মধ্যরাত্রির পরে সে তাদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসবে কারণ তার অনিদ্রা রোগ আছে এবং আরেকজন মানুষের খুব কাছাকাছি শুয়ে তার পক্ষে ঘুমানো একেবারেই অসম্ভব। যদিও তার এই দাবী সত্যি থেকে খুব একটা দূরে নয়, তারপরও সে তার অতিথিদের আসল এবং পুরো সত্যটা বলতে কখনো সাহস পায়নি: সঙ্গমের পরপরই সে তার নিজের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত একধরনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা বোধ করে একা থাকার জন্য । মধ্যরাতে  অচেনা কোন এক শরীরের পাশে ঘুম থেকে জাগা তার খুবই অপছন্দের একটি বিষয়। এবং সকালবেলায়  তার ফ্ল্যাটে একজন অনুপ্রবেশকারীর সাথে ঘুম থেকে ওঠা, তাকে আরো বেশী বিকর্ষণ করে। বাথরুমে কেউ তার দাঁত মাজার শব্দ শুনতে পাক সেটা সে কখনোই চায়না, এছাড়া সকালের অন্তরঙ্গ প্রাতরাশের ভাবনাও তাকে আদৌ আকর্ষণ করে না।
.
সে কারণেই সে খুবই অবাক হয়, ঘুম ভেঙ্গে তেরেজাকে তার পাশে, তার হাত আঁকড়ে ধরে শুয়ে থাকতে দেখে। সে প্রায় পুরোপুরিভাবেই বুঝতে ব্যর্থ হয়, আসলে কি ঘটেছে। কিন্তু মনে মনে পেছনের কয়েক ঘণ্টায় কি কি ঘটেছে, সেটা ভাবতে শুরু করলেই সে অনুভব করতে শুরু করে, এতদিন পর্যন্ত তার অজানা একটা সুখের আবেশ সেখান থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে।

সেই সময় থেকেই তারা দুজনই একসাথে ঘুমানোর জন্য উন্মুখ হয়েই অপেক্ষা করতো। আমি এমন কি হয়তো বলতে পারবো, তাদের শারীরিক মিলনের উদ্দেশ্য যতটা না আনন্দ অনুসন্ধান তার চেয়ে বরং সঙ্গম পরবর্তী যে ঘুম, সেটাই মুখ্য ছিল। প্রভাবটা অবশ্য বেশী পড়েছিল তেরেজার উপরেই। যখনই তেরেজা তার ভাড়া করা রুমে রাত কাটাতো (খুব শীঘ্রই টমাসকে কাছে পাবার জন্য যা শুধুমাত্র একটা অজুহাতে পরিণত হয়েছিল), একা ঘুমানো তার জন্য ভীষণ কঠিন হয়ে পড়তো। কিন্তু যখনই টমাসের কাছে খুব সহজেই ঘুমিয়ে পড়তো তেরেজা, যত অস্থিরই সে থাকুক না কেন। টমাস তাকে তাৎক্ষনিক ভাবে বানিয়ে বানিয়ে রূপকথার গল্প শোনাতো অস্ফুট স্বরে, কিংবা শুধু আবোল তাবোল অর্থহীন কোনো কথা, তার একঘেয়ে পুনরাবৃত্তি করা শব্দাবলী, কখনো হাস্যকর, কখনো তাকে সুস্থির করতো, সবকিছুই রূপান্তরিত হতো একটা অস্পষ্ট দৃশ্যে যা তেরেজাকে নিয়ে যেত ঘুমের জগতে, রাতের প্রথম স্বপ্ন দেখিয়ে। তেরেজার ঘুমের উপর এভাবে টমাসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, চাওয়া মাত্রই তেরেজাকে ঘুম পাড়াতে পারতো সে।

যখন তারা একসাথে ঘুমাতো, প্রথম রাতের মতই টমাসকে সে ধরে রাখতো শক্ত করে, কখনো কব্জি, আঙ্গুল বা গোড়ালী। যদি কখনো টমাস তেরেজাকে ঘুম না ভাঙ্গিয়ে উঠতে চাইতো, তাকে বদলি কোনো কিছু ব্যবহার করতে হতো। যেহেতু সে টমাসকে এমনকি তার ঘুমের মধ্যে খুব সাবধানে পাহারা দিয়ে রাখতো, তেরেজার হাতের বাঁধুনি থেকে নিজের আঙ্গুল ছাড়িয়ে নেবার প্রক্রিয়ায় সবসময়ই সে তার ঘুম আংশিক ভাঙ্গিয়ে দিয়ে সফল হত আর তখন টমাস তাকে শান্ত করতো, তার হাতের ভিতর অন্য কিছু প্রতিস্থাপিত করে ( গোল করে পাকানো পায়জামার উপরে পড়ার কাপড়, পায়ের চটি কিংবা বই) যা তেরেজা এমন শক্ত করে ধরতো, যেন টমাসের শরীরেরই কোন অংশ।

একবার, যখন সে কেবল তেরেজাকে ঘুম পাড়িয়েছে, কিন্তু তেরেজা কেবল স্বপ্নের প্রথম স্তরটির বেশী পার হয়নি, সুতরাং তখনও টমাসের গলার আওয়াজ সে শুনছিল, টমাস তাকে বলে, ’বিদায়, আমি এখন যাচ্ছি’; তেরেজা তাকে ঘুমের মধ্যেই জিজ্ঞাসা করে, ’কোথায়’? একটু রুঢ় স্বরে টমাস উত্তর দেয়, ’এখান থেকে দুরে’। তেরেজা বিছানার উপরে উঠে বসে বলে, ’তাহলে আমিও তোমার সাথে যাবো’। ’না, তুমি আমার সাথে যেতে পারবেনা, আমি সারাজীবনের জন্য চলে যাচ্ছি’, বলে টমাস দরজা খুলে হলের মধ্যে বেরিয়ে আসে। তেরেজা ঘুম চোখেই উঠে দাড়ায় এবং টমাসের পেছন পেছন হলে চলে আসে, ছোট রাত্রিবাসের নীচে পুরো নগ্ন তেরেজা। তার দৃষ্টি শূন্য, অভিব্যক্তিহীন, তবে বেশ ক্লান্তিহীনভাবে সে হেটে আসে টমাসের পিছু পিছু; ফ্ল্যাটের হল থেকে বেরিয়ে বিল্ডিং এর হলে আসে টমাস ( যে হলটি সবার জন্য উন্মুক্ত), তার মুখের উপর দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে। কিন্তু ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে তেরেজাও বেরিয়ে আসে হলে তাকে অনুসরণ করে, তার ঘুমের মধ্যেই সে যেন নিশ্চিত ভাবে বুঝতে পেরেছে, টমাস তাকে একেবারে ছেড়ে চলে যাচ্ছে এবং তাকে তার থামাতে হবে। সিঁড়ি দিয়ে নেমে প্রথম ল্যান্ডিং এসে অপেক্ষা করে টমাস, তেরেজার জন্য। তেরেজাও সেখানে নেমে আসে এবং টমাসের হাত ধরে তাকে আবার বিছানায় নিয়ে আসে।

টমাস একটি উপসংহারে পৌঁছেছিল: কোন নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হওয়া আর কোনো নারীর সাথে ঘুমানো, দুটো আসলে পৃথক তীব্র আবেগীয় অনুভূতি, শুধু পৃথকই না, একেবারে বিপরীত। সঙ্গমের কামনার মধ্যে আসলে ভালোবাসা তার উপস্থিতিকে অনুভূত করায় না ( যে কামনা অসংখ্য রমণীর প্রতি হতে পারে) বরং একসাথে ঘুমানোর কামনা মধ্যেই সে তার উপস্থিতিটা জানান দেয় (যে কামনা শুধুমাত্র একটি নারীর প্রতি সীমাবদ্ধ)।

 

রাতের মাঝামাঝি কোন এক সময়ে, তেরেজা হঠাৎ করে ঘুমের মধ্যে যন্ত্রণায় গোঙাতে শুরু করে। টমাস তার ঘুম ভাঙ্গায়,কিন্তু যখনই সে চোখ খুলে টমাসকে দেখে, ঘৃণার সাথেই তেরেজা বলে ওঠে,‘আমার কাছ থেকে তুমি সরে যাও! আমার কাছ থেকে তুমি সরে যাও’! এরপর তেরেজা তার দুঃস্বপ্নটি বর্ণনা করে:  তারা দুইজন এবং সাবিনা বিশাল একটা ঘরের মধ্যে একসাথে, ঘরটির মাঝখানে একটি বিছানা,অনেকটা যেন কোনো নাট্যশালার মঞ্চ। যখন টমাস সেখানে সাবিনার সাথে সঙ্গমে ব্যস্ত হয়, সে তেরেজাকে এক কোনায় দাড়িয়ে থাকতে নির্দেশ দেয়। সেই দৃশ্যটি তেরেজাকে অসহনীয় কষ্ট দিতে থাকে। হৃদয়ের এই যন্ত্রণাটিকে শরীরের যন্ত্রণা দিয়ে লাঘব করার আশায় তেরেজা তার আঙ্গুলের নখগুলোর নীচে সুঁই দিয়ে খোঁচাতে থাকে। শক্ত করে মুঠো বানিয়ে তেরেজা  বলে ‘এত বেশী যন্ত্রণা হচ্ছিল’, যেন সত্যি আঙ্গুলগুলো সূঁচের এর আঘাতে ক্ষতবিক্ষত।

তেরেজাকে নিজের বুকের মধ্যে টেনে নেয় টমাস এবং ধীরে ধীরে ( বেশ অনেকক্ষণ ধরে বেশ তীব্রভাবে তেরেজা কাঁপছিল) একসময় টমাসের আলিঙ্গনে ঘুমিয়ে পড়ে তেরেজা ।
পরের দিন, তেরেজার স্বপ্নটির কথা ভাবার সময় টমাসের একটা বিষয় মনে পড়ে গিয়েছিল। সে তার ডেস্কের একটি ড্রয়ার খুলে তাকে লেখা সাবিনার চিঠির একটি প্যাকেট বের করে আনে। বেশী সময় লাগলো না তার এই অনুচ্ছেদটি খুঁজে পেতে: তোমার সাথে আমি আমার স্টুডিওতে সঙ্গম করতে চাই, এটা হবে যেন চারপাশে দর্শক দিয়ে ঘেরা কোনো মঞ্চ। দর্শকদের কারোরই কাছে আসার অনুমতি নেই, কিন্তু তারা আমাদের দিক থেকে চোখ সরাতেও পারবে না..।

সবচেয়ে খারাপ যে বিষয়টি টমাসের মনে হলো, চিঠিটিতে তারিখ ছিল,বেশ সাম্প্রতিক একটি চিঠি, টমাসের সাথে তেরেজার একসাথে থাকতে শুরু করার বেশ পরেই লেখা।
‘তুমি তাহলে আমার চিঠিপত্র ঘাটাঘাটি করেছো!’
তেরেজা অস্বীকার করে না, ‘আমাকে বের করে দাও,তাহলে!’
কিন্তু, না, তেরেজাকে সে বের করে দেয়নি। সাবিনার স্টুডিওর দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ানো তেরেজা তার নখের নীচে সুঁই ঢোকাচ্ছে, এমন দৃশ্যটা কল্পনা করতে পেরেছিল টমাস। তেরেজার আঙ্গুলগুলো সে নিজের হাতের মধ্যে নিয়েছিল, আদর করেছিল হাত দিয়ে, ঠোঁটে ছুঁইয়ে চুমু খেয়েছিল, যেন এখনো সেখানে রক্ত লেগে আছে।
কিন্তু এরপর থেকেই প্রায় সবকিছইু যেন টমাসের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠলো। তার গোপন জীবন সম্বন্ধে তেরেজার নতুন কিছু না জানতে পারা ছাড়া এমন কোনো দিন আর অতিবাহিত হয়নি এরপর।

প্রথম প্রথম টমাস সবকিছু অস্বীকার করেছে। এরপর, যখন প্রমাণ খুব সুস্পষ্ট, টমাসে যুক্তি ছিল যে তার জীবনে বহুগামিতা অন্ততপক্ষে তেরেজার জন্য তার ভালোবাসায় কোন অন্তরায় সৃষ্টি করছে না। কিন্তু টমাসের আচরণ পরস্পরবিরোধী: প্রথমে সে তার বিশ্বাসভঙ্গতাগুলোকে অস্বীকার করে, তারপর সেই কাজগুলোর ন্যায্যতা প্রতিপাদন করার জন্য সে চেষ্টা করে।
টমাস একবার যখন টেলিফোনে কারো সাথে দেখার করার তারিখ ঠিক করে বিদায় জানাচ্ছিল, তখনই পাশের ঘর থেকে একটা দাঁতে দাঁত লাগার মত অদ্ভুত আওয়াজ সে শুনতে পায়। ঘটনাক্রমে, সেদিন তার অজান্তেই তেরেজা বাসায় ফিরে এসেছিল। ঔষধের বোতল থেকে কোন কিছু গলায় ঢালার সময় তেরেজা তার হাত এক বাজে ভাবে কাঁপছিল, যে কাচের বোতল তার দাঁতের সাথে ধাক্কা খাচ্ছিল সশব্দে।

টমাস তার উপর প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, যেন তেরেজাকে সে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। বোতলটি ছিটকে পড়ে মেঝেতে, তার কার্পেটে একটা দাগ তৈরি করে ভ্যালেরিয়ান ড্রপস [১৯]। তেরেজাও টমাসের হাত থেকে নিজে ছাড়িয়ে নিতে বেশ ভালো প্রতিরোধ গড়ে তোলে, তাকে শান্ত করতে তেরেজার দুই হাতের কব্জি ধরে, পেছন থেকে শক্ত করে ধরে থাকতে হয় টমাসকে প্রায় সিকি ঘন্টাকাল।
টমাস জানতো, সে একটা অযৌক্তিক পরিস্থিতিতে আছে, কারণ সম্পূর্ণ অসমতায় যার ভিত্তি।

একদিন সন্ধ্যায়, সাবিনার সাথে তার চিঠিপত্রগুলো তেরেজার আবিষ্কারের আগে, তেরেজার নতুন চাকরীর সুখবর উদযাপন উপলক্ষে কয়েকজন বন্ধুদের নিয়ে তারা একটি পানশালায় গিয়েছিল। সেই সাপ্তাহিকীতে তেরেজার পদোন্নতি হয়েছে, আলোকচিত্রের ডার্ক রুম টেকনিশিয়ান থেকে সে এখন স্টাফ ফটোগ্রাফার। যেহেতু টমাসের নাচার ব্যাপারে কোন আগ্রহ ছিল না, সেকারণে তেরেজার একজন অপেক্ষাকৃত তরুণ সহকর্মী তেরেজার সাথে তার সেই দ্বায়িত্বটা  পালন করেছিল সেদিন। নাচের মেঝেতে যুগল হিসাবে তাদের চমৎকার লাগছিল এবং টমাসের মনে হয়েছিল, তেরেজাকে এর চেয়ে সুন্দর সে এর আগে কোনোদিনও দেখেনি। সে অবাক হয়ে দেখছিল, তেরেজা কত অনায়াসে, তাৎক্ষনিক ভাবেই নির্ভুল সূক্ষ্মতা আর আনুগত্যের সাথে তার নাচের সঙ্গীর ইচ্ছাকে অনুসরণ করতে পারছিল। নাচটাকে টমাসের মনে হচ্ছিল যেন তেরেজার নিজেকে পূর্ণ নিবেদনের একটা ঘোষণা, তার নাচের সঙ্গীর সামান্যতম ইচ্ছা পূরণ করার জন্য তার গভীরতম কামনা। যা এই সঙ্গী পুরুষটির সাথে তার সম্পর্কের কোন বাধ্যবাধকতায় আরোপিত না। যদি টমাসের সাথে তেরেজার পরিচয় না হত, তেরেজা তার সাথে দেখা হওয়া যে কোন পুরুষের আহবানে সাড়া দেবার জন্য হয়তো তৈরি থাকতো। টমাসের কোনো কষ্টই হলোনা, তার তরুণ সহকর্মী আর তেরেজাকে প্রেমিক প্রেমিকা হিসাবে কল্পনা করতে। এবং এত অনায়াসে সেই কাহিনী সে কল্পনা করতে পেরেছিল দেখে, বেশ আহতবোধ করেছিল টমাস। সে বুঝতে পারে, তেরেজার শরীর যে কোন পুরুষ শরীরের সাথে সঙ্গমরত ভাবাটা খুবই সহজ, এবং এই চিন্তাটি তার মেজাজটাকে নষ্ট করে ফেলে অবোধ্য অস্থিরতায়। সেদিন অনেক গভীর রাত না হওয়া পর্যন্ত, বাসায়, তেরেজার কাছে টমাস স্বীকার করেনি, তার ঈর্ষান্বিত হবার কথাটি।

শুধুমাত্র কাল্পনিক হাইপোথিসিসের উপর ভর করা এই অর্থহীন ঈর্ষা, প্রমাণ করেছিল তেরেজার বিশ্বস্ততাকে সে তাদের সম্পর্কের একটি নিঃশর্ত সত্য হিসাবে আসলে সে ধরে নিয়েছে। তাহলে কেমন করে সে তেরেজার প্রতি অসন্তুষ্ট হতে পারে, যখন তার খুবই বাস্তব প্রেমিকাদের প্রতি প্রদর্শিত তেরেজার ঈর্ষার জন্য ?

(চলবে..)
নোটস-
[১৮] করপাস ডেলিক্টি (Corpus delicti) ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ body of the crime, পশ্চিমা বিচার ব্যবস্থায় শব্দটি ব্যবহৃত হয় একটি মূলনীতি প্রকাশ করতে যা দাবী করে কোন একটি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেটা অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে সেই অপরাধের জন্য কাউকে অপরাধী সাব্যস্ত করার জন্য।
[১৯] ভ্যালেরিয়ান ড্রপস: ভেষজ ঘুমের ঔষধ, ভ্যালেরিয়ানা উদ্ভিদের মূলের নির্যাস থেকে যা তৈরি করা হয়।

আপনার মন্তব্য