একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫: বৃহৎ পরিসর, ভিন্ন আঙ্গিকে

অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণে গত বছর থেকে এ পর্যন্ত প্রয়াত দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের ১৩ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব স্মরণে স্মৃতি-স্মারক স্থাপন করা হবে।

 প্রকাশিত: ২০১৫-০১-৩১ ১৮:১৩:১৮

 আপডেট: ২০১৭-০৮-১৬ ১৮:৪০:২৭

নিউজ ডেস্ক:

ভিন্ন আঙ্গিক ও বৃহৎ পরিসরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এ মেলাটি এখন একটি বৃহৎ জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। তাই পরিসর বাড়াতে সময়ের দাবি পূরণ এবং আন্তর্জাতিক কাঠামোয় রূপ দিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মেলা। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হলেও একাডেমির সঙ্গে মেলার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই, জানালেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।
 
শনিবার (৩১ জানুয়ারি)  বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে গ্রন্থমেলা’২০১৫ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই বললেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।
 
তিনি আরও জানান- এবারের বইমেলাকে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের আয়াজন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সুইডেনসহ ১২টি দেশের ৪৮ জন সাহিত্যিক এতে অংশ নেবেন।
 
রোববার (১ ফেব্রুয়ারি) বেলা তিনটায় একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে উদ্বোধনী আয়োজন। প্রধান অতিথি হিসেবে মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনি গ্রন্থমেলা পরিদর্শন করবেন। 
 
ওইদিন থেকে ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং একুশে ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে।
 
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং একাডেমির সামনের ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে (৯২টি প্রতিষ্ঠানকে ১২৮টি ইউনিট) এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান (২৫৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৪৩৭টি ইউনিট) মিলিয়ে মোট ৩৫১টি প্রতিষ্ঠানকে সর্বমোট ৫৬৫টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। 
 
এবারই প্রথমবারের মতো বাংলা একাডেমিসহ মোট ১১টি  প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে গ্রন্থমেলায় প্রতিটির জন্য  ৪০০ বর্গফুটের প্যাভিলিয়ন প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ১০৬টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ১টি করে ইউনিট, ৯৬টি প্রতিষ্ঠানকে ২ ইউনিট, ৪৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৩টি ইউনিট এবং ১টি প্রতিষ্ঠানকে ৪ ইউনিটের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমির অভ্যন্তরীণ অংশে ৩২টি শিশু-কিশোর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ৪২টি ইউনিট, ২৫টি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ৪৪টি ইউনিট, ১৯টি মিডিয়া ও আইটি প্রতিষ্ঠানকে ২০টি ইউনিট এবং ১৭টি অন্যান্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ২২টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। 
 
এবার উন্মুক্ত জায়গাসহ ৭২টি লিটল ম্যাগাজিনকে বর্ধমান হাউজের দক্ষিণ পাশে লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে জায়গা করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বই প্রকাশ করেছেন তাদের বই বিক্রি বা প্রদর্শনের জন্য জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে রাখা যাবে। 
 
গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি তাদের প্রকাশিত বই ৩০ শতাংশ কমিশনে ও ২০০০ সালের আগে পর্যন্ত প্রকাশিত একাডেমির বই ৭০ শতাংশ কমিশনে এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বিক্রি করবে। একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মিলে বাংলা একাডেমির ৫টি বিক্রয় কেন্দ্র থাকবে। এর একটি সম্পূর্ণ সাজানো হবে একাডেমি প্রকাশিত শিশু-কিশোর গ্রন্থ দিয়ে।  
 
অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণে গত বছর থেকে এ পর্যন্ত প্রয়াত দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের ১৩ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব― কবি আবুল হোসেন, দার্শনিক সরদার ফজলুল করিম, ভাষা সংগ্রামী ও লেখক বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ইতিহাসবিদ সালাহ্উদ্দীন আহমেদ, চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, শিক্ষাবিদ জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, সংগীতশিল্পী ফিরোজা বেগম, ভাষা সংগ্রামী আবদুল মতিন, জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন, সাংবাদিক এবিএম মূসা, শিশুসাহিত্যিক এখলাসউদ্দিন আহমেদ, মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণাদায়ী গানের রচয়িতা গোবিন্দ হালদার, জিনবিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম স্মরণে স্মৃতি-স্মারক স্থাপন করা হবে। 
 
নজরুল মঞ্চকে ঘিরে নির্মিত শিশু কর্নারে থাকবে শিশু-কিশোর বিষয়ক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। শিশুদের বিনোদনের জন্য শিশু কর্নারে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারেও নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে নজরুল মঞ্চে। 
 
অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রচার কার্যক্রমের জন্য তথ্যকেন্দ্র থাকবে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মিলে দু’টি লেখককুঞ্জ থাকবে। 
 
মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের একটি পথ এবং টিএসসি ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন দিয়ে মেলা থেকে বের হওয়ার দু’টি পথ থাকবে। গ্রন্থমেলা সম্পূর্ণ পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। দুই স্টলপ্রতি একটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র এবং প্রশিক্ষিত অগ্নিনির্বাপক কর্মী থাকবেন। ইতোমধ্যে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে স্টলের কর্মীদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। 
 
ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থিত স্বাধীনতা স্তম্ভ ও এর পাশ্ববর্তী জলাধারকে নান্দনিকভাবে গ্রন্থমেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে, যাতে স্বাধীনতার স্তম্ভের আলোক-বিচ্ছুরণে মেলা প্রাঙ্গণ আলোকিত হয়ে ওঠে। এছাড়া ইতোমধ্যে বাংলা বর্ণমালা ও ভাষা শহীদদের প্রতিকৃতি ও মহান ভাষা আন্দোলনের তথ্য সম্বলিত নানা স্মারকে মেলা প্রাঙ্গণকে একুশের চেতনায় সজ্জিত করা হয়েছে। 
 
গ্রন্থমেলা চলাকালে বাংলা একাডেমির ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ২ ফেব্রুয়ারি সকালের অধিবেশনে সৈয়দ শামসুল হক সাহিত্য সম্মেলনের ‘ধারণাপত্র’ উপস্থাপন করবেন। এছাড়া সৃষ্টিশীল সাহিত্যের তিনটি বিষয়ে তিন দিনব্যাপী দু’টি করে অধিবেশনে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত প্রথম অধিবেশন এবং বিকেল আড়াইটা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত দ্বিতীয় অধিবেশন। 
 
প্রতিটি অধিবেশনই অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে। 
 
সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চিন, ভারত, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইডেন, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, মালয়েশিয়া, ইকুয়েডরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও ভাষার প্রায় পঞ্চাশজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও সাহিত্য-সমালোচক অংশগ্রহণ করবেন। তাদের মধ্যে  রয়েছেন ফ্রাঁস ভট্টাচার্য, হান্স হার্ডার, ফাদার দ্যতিয়েন, মারিয়া বারেরা হেলেনা, তবিয়াস বিয়ানওনে, দাতু ড. আহমেদ কামাল আবদুল্লাহ, জার্মেইন ড্রুগেনব্রুট, সিন্ডিলি ব্রাউন, পিটার নাইবার্স, জামি ঝু, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, নবনীতা দেবসেন, উদয় নারায়ণ সিংহ, কবি উৎপল কুমার বসু, কবি সুবোধ সরকার প্রমুখ। 
 
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের পাশাপাশি ত্রিপুরা, আসাম এবং বিহারের মৈথিলি ও ভোজপুরি ভাষার  বেশ কয়েকজন সাহিত্যিকও এ সাহিত্য সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন।  
 
এ ছাড়া মাসব্যাপী প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, সাধারণ জ্ঞান, আবৃত্তি এবং উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। 
 
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০১৪ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে। এছাড়া ২০১৪ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ১টি প্রতিষ্ঠানকে প্রথমবারের মতো ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে।  
 
মাসব্যাপী গ্রন্থমেলায় এবার ৪ দিন শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হবে। 
 
গ্রন্থমেলা উপলক্ষে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব রনজিৎ কুমার বিশ্বাস, টেলিটকের উপ-মহাব্যবস্থাপক (বিপনন) শাহ জুলফিকার হায়দার, বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক মুর্শিদ আনোয়ারসহ টেলিটক এবং স্টেপ মিডিয়ার কর্মকর্তারা ।  
 
 
                                                                                 
 

আপনার মন্তব্য