প্রকাশিত: ২০১৮-১১-৩০ ২৩:১১:২১
সিলেটটুডে ডেস্ক:
ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭ পেয়েছেন অধ্যাপক যতীন সরকার, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও পিয়াস মজিদ।
যতীন সরকার তার 'মুক্তবুদ্ধির চড়াই-উতরাই' বইটির জন্য প্রবন্ধ, আত্মজীবনী, ভ্রমণ ও অনুবাদ শ্রেণিতে, কবিতা ও কথাসাহিত্য শ্রেণিতে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম তার 'একাত্তর ও অন্যান্য গল্প' বইয়ের জন্য এবং পিয়াস মজিদ তার 'মনীষার মুখরেখা' বইয়ের জন্য 'হুমায়ূন আহমেদ তরুণ সাহিত্য পুরস্কার' বিজয়ী হয়েছেন।
'মুক্তবুদ্ধির চড়াই-উতরাই' বইটি কথাপ্রকাশ, 'একাত্তর ও অন্যান্য গল্প' অন্যপ্রকাশ এবং 'মনীষার মুখরেখা' মাওলা ব্রাদার্স প্রকাশ করেছে।
দেশের বরেণ্য সাহিত্যিকদের সম্মাননা জানানো এবং তরুণ লেখকদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার প্রবর্তিত হয়েছে সাত বছর আগে। এরই মধ্যে দেশের সাহিত্যাঙ্গনের অন্যতম সেরা পুরস্কার হয়ে উঠেছে এটি।
এবারের পুরস্কারে প্রথম দুটি শাখার প্রত্যেক বিজয়ী পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন দুই লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও সম্মাননা। তরুণ লেখক পেয়েছেন এক লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও সম্মাননা। পুরস্কারের জন্য তিন শাখায় এবার ৪৬৭টি বই জমা পড়ে। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিত বই পুরস্কারের জন্য বিবেচনায় নেওয়া হয়।
ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, কবি হেলাল হাফিজ ও কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হকের সমন্বয়ে গঠিত বিচারকমণ্ডলী পুরস্কারের জন্য সেরা তিনটি বই নির্বাচন করেন।
শুক্রবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের কার্নিভাল হলে ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে সাহিত্যিক, কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, শিল্পী, সংস্কৃতিসেবীসহ সাহিত্যমনস্ক বিজ্ঞজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। উত্তরীয় পরানোর পর বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারের সম্মাননা স্মারকসহ চেক তুলে দেন বিচারকমণ্ডলীর তিন সদস্য হাসান আজিজুল হক, হেলাল হাফিজ, আনোয়ারা সৈয়দ হক এবং সমকালের প্রকাশক এ. কে. আজাদ, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর এফ হোসেন।
শুরুতেই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সমকালের ফিচার সম্পাদক মাহবুব আজীজ সবাইকে স্বাগত জানান। সেই সঙ্গে স্মৃতিচিত্রের মধ্য দিয়ে সমকালের প্রয়াত সম্পাদক ও ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কারের স্বপ্নদ্রষ্টা গোলাম সারওয়ারকে স্মরণ করা হয়। এর পর নৃত্যের ছন্দে অতিথিদের স্বাগত জানায় পূজা সেনগুপ্ত ও তার নাচের দল তুরঙ্গমী রেপার্টরি ড্যান্স থিয়েটার। দলটি জীবনানন্দ দাশের 'বনলতা সেন' কবিতার সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে।
এরপর সংগীত পরিবেশন করেন ইফ্ফাত আরা দেওয়ান। তিনি শুরুতেই গেয়ে শোনান 'দাঁড়াও আমার আঁখির আগে'। এর পর তিনি একে একে গেয়ে শোনান 'আমার ভাঙা পথের রাঙা ধুলায় পড়েছে কার পায়ের চিহ্ন', 'খেলাঘর বাঁধতে লেগেছি আমার মনের ভিতরে'সহ বেশ কিছু গান।
নৃত্যগীতের পর উপস্থাপন করা হয় ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কারের ওপরে নির্মিত একটি সংক্ষিপ্ত তথ্যচিত্র। চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের সহযোগিতায় ও ব্র্যাক ব্যাংকের হেড অব কমিউনিকেশন জারা জাবীন মাহবুব উপস্থাপিত তথ্যচিত্রে জানানো হয়, বাংলা সাহিত্যের মৌলিক সৃষ্টিকর্মকে উৎসাহিত করার জন্য ২০১১ সাল থেকে ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়। পরে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তরুণ সাহিত্য পুরস্কারটির নামকরণ হয় এই বরেণ্য লেখকের নামে। প্রথম দুটি পুরস্কারের অর্থমূল্য শুরুতে এক লাখ টাকা করে হলেও, এখন এর মূল্যমান দ্বিগুণ। হুমায়ূন আহমেদ তরুণ সাহিত্য পুরস্কারের মূল্যও আগের চেয়ে দ্বিগুণ করে এর অর্থমূল্য করা হয়েছে এক লাখ টাকা।
পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণার পর উত্তরীয় পরিয়ে দিয়ে তাদের হাতে পুরস্কারের চেক ও পদক তুলে দেওয়া হয়। পুরস্কৃত লেখকদের রচনা এবং তাদের জন্য রচিত সম্মাননা পাঠ করেন রূপা চক্রবর্তী, বন্যা মির্জা ও কোহিনূর আখন্দ।
এর আগে ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার পান ২০১১ সালে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, হাসান আজিজুল হক ও দ্রাবিড় সৈকত, ২০১২ সালে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, বুলবুল চৌধুরী ও শুভাশিস সিনহা, ২০১৩ সালে মঈনুল আহসান সাবের, মাসরুর আরেফিন ও বদরুন নাহার, ২০১৪ সালে হরিশংকর জলদাস, সুস্মিতা ইসলাম ও মুজিব ইরম, ২০১৫ সালে নির্মলেন্দু গুণ, রাজকুমার সিংহ ও স্বকৃত নোমান এবং ২০১৬ সালে ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ও মাজহার সরকার।
আপনার মন্তব্য