ফারহানা রহমান-এর ৩টি কবিতা

 প্রকাশিত: ২০১৫-০৯-০৬ ১২:৩২:১৪

তোমাকে ছোঁয়ার আশায়... আমার উড়ন্ত চুল যেন একঝাঁক ধূসর রঙের মেঘ:

ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির জলে
ফোঁটা ফোঁটা মুক্তোর জলে কাল সারারাত
বৃষ্টির চাদরের ওম নিয়ে মেঘের কোলে মাথা রেখে অনর্গল হয়েছি স্নাত।
অবিরত সুখের নিঃসংকোচে।
ভেজা ভেজা উষ্ণতার আদর মেখেছি তৃপ্তির অনুপম মাধুর্যে।
বৃষ্টির প্লাবনে ভেসে
মাটিকে আদরে জড়ায় ধরে পলি... তেমনই ।
মনেও নতুন অঙ্কুর এসে বাতাসে দোলে কচি কচি সবুজ পাতা।
আর মহুয়ার ঘ্রাণ ছড়ায় দিকে দিকে প্রাচুর্যে।
তবু না বলা কথারা গোপনে দীঘি হয়।
এমনই সে দীঘি যে জ্যো‌ৎস্নায় প্লাবিত হয়।
ঝর্ণাজলে লুণ্ঠিত হয়ে হয়ে
অবগাহনের কাল পেরিয়ে চলেছি ক্রমশ
আঁকাবাঁকা পাহাড়ের সানুতলে
হৃদয় ভেসে যায় মাতামহুরীর জলে।

আঁধার রাত কেটে হয় বৃষ্টিভেজা ভোর। 
আকাশ ভরা আলো
দেখেছিলাম তোমার চোখে অপূর্ব সে আলো!

তোমাকে ছোঁয়ার আশায়...
আমার উড়ন্ত চুল যেন একঝাঁক ধূসর রঙের মেঘ।

উড়ে উড়ে ক্লান্ত-
মাঠের পর মাঠ;
মরুভূমি আর পর্বতমালা, সমুদ্র 
সূর্য, দিগন্ত পেরিয়ে...
সেই অজস্র নক্ষত্রের রাত।

সেই সোনালী হ্যালুজিনের মতো। 
নদী থেকে নদী আর সাগরে 
কেবলই ভেসে বেড়াতো তারা
শেষে কোন একদিন শান্ত ঘুমন্ত অবস্থায় তেমনই। খুঁজে পাবে-
মাতামুহুরীর জীর্ণ সাঁকোর মতো।

ভুলা যায় না
পুরনো শহর, পুরনো রীতি;
একটা দুটো পুরনো স্মৃতি ...
কবে আর ভুলতে পেরেছি?
ভুলিনি- ভুলা যায়না।

সেই সোনালী রোদ্দুর মাখা মায়াময় দিন;
ঝিরিঝিরি শিশিরভেজা;
শ্যামলিমায়-হয়ে যাওয়া লীন,
দুরের ওই ছায়াঘেরা অরুণিমা;
নিয়ে যেত আমায় -
ছাড়িয়ে অসীমের সীমানা।

স্নিগ্ধতায় ভেজা নরম জ্যোৎস্নার আলো;
কেন এত লাগতো ভালো?
পাহাড়ের মায়াবী হাতছানি
আমায় এখনো ডাকে, কেন জানি?

অচেনাকে আঁকড়ে ধরেছি;
অজানার পথে হেঁটেছি-
অজানাকে ভালবেসেছি;
কত কি হারিয়েছি...
হায়! সে সব-
কবে আর ভুলতে পেরেছি?
ভুলিনি- ভুলা যায়না।।


পারবে কি চিনতে আমায়
যদি বহুদিন পর
আবার দেখা হয়
তোমাতে-আমায়
পারবে কি চিনতে আমায়?

ধরো, কোন ব্যস্ত পথের কোণে,
কোন ভীষণ জন-অরন্যে-
হারানো শহরের মাঝে-
অথবা মলিন গোধূলির সাঁঝে;
দেখা হয় তোমাতে- আমায়
চিনতে কি পারবে আমায়?

হয়তো, কোন নোনাবালি তীরে
কোন পাহাড়ি ঝর্ণানদীর পাড়ে-
বিস্তীর্ণ উদ্যানে
বা তটরেখার কোণে;
যদি দেখা হয়ে যায় নির্জনে-
পারবে কি চিনতে আমায়?

এমনও তো হতে পারে-
শরত, হেমন্ত, তীব্র শীতের প্রচণ্ড কাঁপনে
অথবা, কোন তুমুল ফাল্গুনে;
আগুন নিয়ে খেলাকরা সূর্যের
মধ্য গগনের দিনে,
দেখা হয় তোমাতে- আমায়
পারবে কি চিনতে আমায়?

এমন যদি হয়-
শিশিরভেজা কোন সকালে,
সুরভিত জুঁইফোটা মায়াবী বিকেলে;
হয়তবা, বিমূর্ত কোন রাত্রিবেলায়-
মৌনতার চাদর গায়ে দাড়িয়ে আছি;
তোমার চোখের তারায়...
চিনতে কি পারবে আমায়?

তাকানোর মত তাকালেই চিনবে আমায়...

আপনার মন্তব্য