প্রকাশিত: ২০১৫-০৭-২৪ ২৩:০০:১২
মা, আমি তোমাকে ডেকেছি আজ তোমার দুধে সিক্ত শুদ্ধ শব্দে, যে শব্দের জন্য আমি বহুদিন নিঃশব্দ ছিলাম:
হরিণের বাঁধা চোখে শুভ্র শব্দ
একটি শব্দের জন্য
বহুদিন আমি নিঃশব্দ ছিলাম।
একটি শুভ্র শব্দ-
শেফালীর তাঁতে বোনা শাড়ী
অঞ্চলে কমলার ঠোঁট,
অথবা গভীর-দুঃখ, কালো পাড় নিশীথনিবিড়,
যেন বীণার তন্ত্রে বাজা অবিরাম শিশিরের সুর-
সজিনার ফুল, দুখীনির কপোলের মত।
বৃক্ষের কোল ছেড়ে পাখি ওড়ে, পাখি ওড়ে যায়
আকাশের নীলিমা স্পর্শ করে,
সূর্যমুখীর মত যে উচ্চারণ অরণ্যে তারা ফোটায়
সন্ধ্যার প্রাঙ্গনে অতসী ফুলের মতন।
হরিণ শাবক চাঁদের দুধের বাটি নিঃশেষে করে পান-
তৃষিত চোখের কোণে যে গানের কলি ধরে রাখে,
পাখিদের কূজন কন্ঠে ধারণ করে
যে বৃক্ষ নির্কন্ঠ ঝিনুকের কান্নার মতন-
আমি সেই নাম ধরে আজো সন্ত্রাসে ডাকিনি।
একটি কোমল শব্দ আঙ্গিনায় তুলসীর পাতায়,
সমগ্র কোল জুড়ে ঘাসের নবীন শিশু ছিল,
কারা যেন ধরে নিয়ে যায় হরিণের চোখ বেঁধে
কারা যেন ধরে নিয়ে যায়।
আর্ত ত্রাসে পাখি উড়ে যায় নির্কন্ঠ বৃক্ষ থেকে
শেফালী গাছের গায়ে ধুলো জমে, শুধুই ধুলো জমে।
হোগলার বন ছেড়ে যে যুবক ভালবেসে যুদ্ধে গেছে,
ফিরেছে কি ফেরে নাই কেহ নাহি জানে।
অবিরাম শিশিরের মত ব্যাকুল অশ্রুজলে শেফালীর ধুলো মোছে
শ্রাবণের ধারার মত দেশ ভেসে যায়।
মা তুমি উঠে আসো, শংকা হরণ করো-
বেতের ফলের মত চোখ মেলে চেয়ে দেখো
সজিনার ফুলের রোদে হরিনেরা খেলা করে।
আমার কন্ঠজুড়ে নিষিদ্ধ কবিতার মত
মা তুমি উঠে আসো; শংকা হরণ করো।
মা, আমি তোমাকে ডেকেছি আজ
তোমার দুধে সিক্ত শুদ্ধ শব্দে,
যে শব্দের জন্য আমি
বহুদিন নিঃশব্দ ছিলাম।
একদা যুবকের ফিরে না আসার গল্প
হারমোনিয়াম কাঁধে রাজপথ দিয়ে হেটে যাওয়া
সেই যুবকটিকে কেউ আর মনে রাখেনি-
মনে রাখেনি- অশুদ্ধতার প্রাচীর ডিঙ্গানো
শুদ্ধ ভৈরবী রাগে প্রতিবাদি কোন সুর।
মানুষের ভালবাসায় মরচে ধরে,
ঘুণে ধরে চলমান সমাজের চাকায়।
সংসদের প্রতিটি চেয়ার নতুন মনিব পেয়ে
উন্মত্ত হয় আহ্লাদে। মায়ের গায়ে চড়ে গণতন্ত্রের
মাড় দেয়া কড়কড়ে শাড়ি। বাবার বুক চেরা
দলবদ্ধ কার্বন-ডাই অক্সাইড, ভাইবোনগুলোর
অনিশ্চিত ভবিষ্যত- জ্যামিতির বক্র রেখার সূত্র ধরে,
মিলিয়ে যায়; আকাশের শেষ নীলিমায়।
এক গভীর রাতে জনহীন বঙ্গবন্ধু এভ্যিনিউ-
মত্ত হয় পল্টনের সাথে আলোচনায়, সমস্যার হিস্যা নেয়।
নতুন বছরের বাজেট আলোচনায় মত্ত হয়; অক্লান্ত অবলীলায়।
আজ ট্রাকের আগ্রাসনে কার বুকে কয়টা লাশ পড়েছে, আলোচনা হয়।
শেষরাতের শেষ তারাটিকে সাক্ষী মেনে অতঃপর-
মিনিট এক-এর নিরবতা, যেন এক নৈমিত্তিক ব্রতে,
আত্মার মাগফেরাতে।
অনেকগুলো বছর পরে, গল্পের শেষ প্রান্তে এসে-
মানুষের ভালবাসায় বিশুদ্ধতা বিরাজ করে-
ঘুণে ধরা সমাজের চাকায় ফেরে চঞ্চলতা-
বক্ররেখাগুলো পেয়ে যায় সরল রেখার ডিজিটেল সমাধান-
সংসদের চেয়ারে ইনডেমনিটির জায়গা হয় না।
মায়ের বুকনদীতে উপচে পড়ে গণতন্ত্রের জোয়ার-
বাবার আতর মেশানো নিঃশ্বাসে শেফালীর সুবাতাস-
বঙ্গবন্ধু এভ্যিনিউ-পল্টন একাকার হয় নিয়ন বিলবোর্ডের খুনসুটিতে।
সবই ঘটে যায় অথবা মিলে যায়,
বশ্যতা স্বীকার করা গাণিতিক সমাধানে।
অথচ সেই যুবকটি; সেই যুবকটি আর ফিরে আসে না-
কাঁধে ঝুলানো হারমোনিয়াম আর ভৈরবী রাগে
নিষ্কন্টক প্রতিবাদি কোন সুরে।
আপনার মন্তব্য