সর্বভূক পাঠক হয়ে এই সৃষ্টিবিশ্বের অনাঘ্রাত মাধুরীর আস্বাদ পেতে চাই- পিয়াস মজিদ

একুশে গ্রন্থমেলার লেখক-পাঠকের অপূর্ব মিলনমেলা। আমরা সিলেটটুডে২৪.কমের পক্ষ থেকে মুখোমুখি হয়েছি লেখক-প্রকাশকদের সাথে। এবারের পর্বে কথা বলছেন কবি পিয়াস মজিদ

 প্রকাশিত: ২০১৫-০১-২১ ২৩:০৮:৫০

পিয়াস মজিদ

নিউজ ডেস্ক:

পিয়াস মজিদ লেখালেখির মাধ্যম হিসেবে কবিতাকে প্রাধান্য দিলেও সাহিত্যের অন্যান্য শাখাগুলোতেও রয়েছে তাঁর সপ্রতিভ উপস্থিতি। লেখালেখির মাধ্যমে ইতোমধ্যে বোদ্ধা পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছেন, বলা যায় নির্দ্বিধায়। কবিতা, প্রবন্ধ, গল্পপুস্তিকা ও সম্পাদনাগ্রন্থ মিলিয়ে তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১০।

বয়সে তরুণ হলেও লেখালেখিতে খুব তরুণ বলা যাবে না তাঁকে। জন্ম নিয়েছিলেন ২১ ডিসেম্বর ১৯৮৪। তাঁর সম্পাদিত ছোটকাগজগুলো হচ্ছে ভুবনডাঙা ও আর্কেডিয়া। 

নিজের একটা পাঠকশ্রেণি সৃষ্টির পাশাপাশি সাহিত্যকর্মে অবদানের জন্যে পেয়েছেন এইচএসবিসি-কালি ও কলম পুরস্কার ২০১২। এছাড়াও তাঁর ছোটগল্প অবলম্বনে আশুতোষ সুজন নির্মাণ করেছেন টেলিছবি নগর ঢাকায় জনৈক জীবনানন্দ।

সিলেটটুডে২৪.কম’র সাথে আলাপচারিতায় ওঠে এসেছে তাঁর নিজের লেখালেখি, বইমেলা এবং বাংলাসাহিত্যের বিভিন্ন দিক। বিস্তারিত পাঠকের উদ্দেশে:

সিলেটটুডে২৪: অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫-তে আপনার কী বই আসছে?
পিয়াস মজিদ: এবার বইমেলায় মৌলিক ও সম্পাদিত মিলে আমার ৫টি বই প্রকাশিত হচ্ছে। অন্যপ্রকাশ থেকে বেরুবে নতুন কবিতার বই কুয়াশা ক্যাফে। কথাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হচ্ছে কথাসাহিত্যকেন্দ্রিত একটি গদ্যের বই কামু মার্কেস ইলিয়াস ও অন্যান্য। আমার গৃহীত সাক্ষাৎকারের একটি সংকলন প্রকাশ পাবে আলাপন অষ্টমী নামে। এর প্রকাশক- জাগৃতি প্রকাশনী । আমার সংকলন ও সম্পাদনায় শামসুর রাহমান অনূদিত হো চি মিনের কবিতা শীর্ষক একটি বই প্রকাশিত হচ্ছে রূপসীবাংলা প্রকাশ থেকে। সৈয়দ শামসুল হকের জলেশ্বরী সিরিজের গল্প-উপন্যাস-কথাকাব্য কয়েক খণ্ডে প্রকশিত হবে আমার সংকলন ও সম্পাদনায়। এবারের বইমেলায় জলেশ্বরী ১ম খণ্ড প্রকাশিত হতে যাচ্ছে পাঠক সমাবেশ থেকে। 

সিলেটটুডে২৪: আপনার প্রকাশিত বই সংখ্যা কত? 
পিয়াস মজিদ: মৌলিক ও সম্পাদিত মিলেঝুলে আমার প্রকাশিত বই দশটির বেশি। কবিতাগ্রন্থ- নাচপ্রতিমার লাশ (২০০৯, ২য় সংস্করণ-২০১৪), মারবেল ফলের মওসুম (২০১১, ২য় সংস্করণ-২০১৩), গোধূলিগুচ্ছ (২০১৩), গল্পপুস্তিকা- ক্ষত আত্মার বিজ্ঞপ্তি (২০১০), প্রবন্ধ- করুণ মাল্যবান ও অন্যান্য প্রবন্ধ (২০১২, ২য় সংস্করণ-২০১৪), কবিতাজীবনী (২০১৪)। 

এছাড়া একক ও যৌথ সম্পাদিত বইয়ের মধ্যে আছে- কবিকথন- শামসুর রাহমানের নির্বাচিত সাক্ষাৎকার, তরুণ আলোয় রশীদ করীম, আবদুল মান্নান সৈয়দের অপ্রকাশিত-অগ্রন্থিত রচনা নিয়ে তিনটি বই- সুধীন্দ্রনাথ দত্ত : কালো সূর্যের নিচে বহ্ন্যুৎসব, ঘুমের ভিতরে নিদ্রাহীন, মিটিল না সাধ ভালোবসিয়া তোমায়, আমার সংকলন, গ্রন্থনা সম্পাদনায় প্রকাশিত সৈয়দ শামসুল হকের কবিতাগ্রন্থ অর্পিত পদাবলি, নির্বাচিত কবিতা : শামীম কবীর ইত্যাদি।

সিলেটটুডে২৪: অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আপনার প্রত্যাশা কী?
পিয়াস মজিদ: ভাল বইয়ের সঙ্গে পাঠকের অপরিচয়ের অর্গল ভেঙে যাক। রঙচঙে বিজ্ঞাপনের বাহারি প্রতারণা পেরিয়ে পাঠকসাধারণ তার প্রিয়-প্রয়োজনীয় বইয়ের দুয়ারে পৌঁছে যান ; একুশের মেলায় এই আমার প্রত্যাশা। 

সিলেটটুডে২৪: অমর একুশে গ্রন্থমেলা কিভাবে আরো আকর্ষণীয় করা যায়?
পিয়াস মজিদ: সময়ের প্রয়োজনে বইমেলাসহ যে কোন আয়োজনেরই বাহ্যিক আকর্ষণ বাড়ে নানা মাত্রায়। তবে আমি প্রত্যাশা করি এক একটি বইমেলাকে কেন্দ্র করে এক একটি নতুন পাঠকপ্রজন্ম গড়ে ওঠবে। এর মাধ্যমেই বইমেলার প্রকৃত ও স্থায়ী আকর্ষণ বৃদ্ধি পাবে। 

সিলেটটুডে২৪: একুশে গ্রন্থমেলায় নিয়মিত যান? কী কারণে?
পিয়াস মজিদ: যখন ছিলাম বইমেলা থেকে দূরে, মফস্বল শহরে ; তখন পত্রিকার পাতায় মেলার সংবাদ পড়ে, ছবি দেখে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটাতাম। ঢাকা থেকে একটু দূরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে সেই সাভার থেকে প্রায় রোজই মেলায় আসতাম; নতুন বইয়ের ঘ্রাণ আর প্রাণের উত্তাপ আহরণ করতে। আর অকিঞ্চিৎকর লেখালেখির সুবাদে যখন প্রথম আমার বই বেরুল মেলায় তখন অনুভূতিটা আরেকটু অন্যরকম। মেলাটা তখন আরো বেশি আপন, বেশি প্রাণময়। তবে প্রতিবছর মেলা এলেই কিছু বিষাদও ঘনিয়ে আসে। হুমায়ুন আজাদের উপস্থিতি ছাড়া মেলার কথা কি ভাবতে পারতাম কখনো? কিংবা হুমায়ূন আহমেদের? এই যেমন লিটলম্যাগ কর্ণারে প্রায় প্রতিসন্ধ্যায় যার উপস্থিতি বলতে গেলে অনিবার্য ছিল সেই কবি ও সম্পাদক খোন্দকার আশরাফ হোসেন যখন মেলায় ছবি হয়ে যান, তাঁর নামে নামকরণ হয় ‘খোন্দকার আশরাফ হোসেন লিটলম্যাগ চত্বর’ ; তখন বসন্তেও যেন লাগে শোকের ছোঁয়া। না, শুধু শোক নয়; পরক্ষণেই ভাবি- আছেন তো; শামসুর রাহমান, শওকত ওসমান, আহমদ শরীফ, রশীদ করীম, মাহমুদুল হক, আবদুল মান্নান সৈয়দ বা শহীদুল জহির সবাই-ইতো আছেন বইমেলায় থরে থরে সাজানো বইয়ের সারিতে। এভাবে আনন্দ ও বিষাদে ঘেরা বইমেলায় নিয়মিত যাই আমরা ; প্রাণের একান্ততম অনুভবে।  

সিলেটটুডে২৪: লেখালেখিতে কোন বিষয়টিকে আপনি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন? কী যুক্তি এর পেছনে?
পিয়াস মজিদ: বিশাল বিশ্বকাঠামোয় আমি ব্যক্তির আর্ত-অবয়বকে বাক্সময় করার চেষ্টা করি কবিতা কিংবা গদ্যে; সেই ব্যক্তি যে বাস্তব ও স্বপ্ন উভয়ের মারে নিঃশেষিত কিন্তু যে ব্যক্তির বিকাশ ব্যতীত সমষ্টিবিশ্বের সৃজনশীল উত্থান সম্ভব নয়।

সিলেটটুডে২৪: আপনার বই আর পাঠক এবং আপনি আর অন্যান্য বই এ সম্পর্কে আপনার কী মূল্যায়ন?
পিয়াস মজিদ: সাধারণ পাঠক তো আছেনই, ফেসবুকের কল্যাণে ভার্চুয়াল বিশ্বের দেশ-বিদেশের পাঠকের মূল্যায়ন যখন পাই তখন বোধ করি লেখালেখি নামক এই সব অক্ষরপাত নেহায়েত বৃথা কিছু নয়। বস্তুত পাঠকের মধ্য দিয়েই তো একজন লেখক সার্থকভাবে অস্তিত্ববহ হন। সেই পাঠকের দেখা যখন পাই, মূল্যায়ন যখন শুনি তখন নিজেকে দীপিত বোধ করি। আর সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের মতো সেই লেখা সৃষ্টির অপেক্ষায় থাকি যা সম্ভোগের মধ্য দিয়ে তৈরি হবে নতুনতম পাঠক। ঠিক একইভাবে নিজেও যেন থাকতে পারি চিরপাঠক ; সে প্রত্যাশা করি। সর্বভূক পাঠক হয়ে এই সৃষ্টিবিশ্বের অনাঘ্রাত মাধুরীর আস্বাদ পেতে চাই। 

সিলেটটুডে২৪: বই প্রকাশে আপনি কী ধরণের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছিলেন? কিভাবে উত্তরণ ঘটল?
পিয়াস মজিদ: না, বই প্রকাশে কোন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হইনি বরং প্রথম বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা মধুরই বলতে হবে। অগ্রজপ্রতিম প্রকাশক অস্ট্রিক আর্যু তার ‘বাঙলায়ন’ প্রকাশন থেকে বই করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন অনেক আগে। তার কাছেই গেলাম। তার সাথে বই প্রকাশের চূড়ান্ত আলাপ সেরে যেই-না  প্রচ্ছদের কথা ভাবছি ঠিক সেই সেই মুহূর্তেই আবির্ভাব কবি-শিল্পী শিবু কুমার শীলের। বললেন- তিনিই করে দেবেন আমার বইয়ের প্রচ্ছদ। তারপর অপেক্ষা, অপেক্ষা এবং আর খুব বেশি অপেক্ষা না করতেই বইমেলার এক দুপুরে প্রকাশকের ফোন ‘সন্ধ্যায় নাচপ্রতিমা আপনার অপেক্ষা করবে’। এভাবে ২০০৯-এর ফেব্রুয়ারি বইমেলায় বাঙলায়ন প্রকাশনী থেকে শিবু কুমার শীলের প্রচ্ছদে প্রকাশিত হলো আমার প্রথম কবিতাগ্রন্থ নাচপ্রতিমার লাশ। এরপর থেকে নানা প্রকাশকের সাগ্রহ আহ্বানে প্রকাশিত হয়ে চলেছে আমার বেশ কয়েকটি বই।

সিলেটটুডে২৪: প্রকাশিত, প্রকাশিতব্য বই আর প্রকাশক(দের) সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন
পিয়াস মজিদ: আমার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে মৌলিক ও সম্পাদিত মিলে সর্বাধিক ৮টি বই বেরিয়েছে শুদ্ধস্বর থেকে। শুধু বই প্রকাশ নয়, আমার কয়েকটি বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণও প্রকাশিত হয়েছে শুদ্ধস্বর থেকে। প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরীকে এ জন্য ধন্যবাদ জানাই। আর আমার বইয়ের অন্যান্য প্রকাশকদের মধ্যে আছেন অন্যপ্রকাশ, কথাপ্রকাশ, জাগৃতি প্রকাশনী, অন্বেষা প্রকাশন, বাঙলায়ন, অ্যাডর্ন, গদ্যপদ্য, যেহেতু বর্ষা, ইত্যাদি। প্রত্যেক প্রকাশকই গুরুত্বের সঙ্গে আমার মতো তরুণের বই সাগ্রহে-সযত্নে প্রকাশ করে চলেছেন। আমি আপ্লুত।  

সিলেটটুডে২৪: সিলেটটুডে২৪.কম’র পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
পিয়াস মজিদ: সিলেটটুডে২৪.কম কর্তৃপক্ষ ও এর পাঠকদেরও জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। 


গ্রন্থনা: ক.য়া/ জানুয়ারি ২১, ২০১৫

আপনার মন্তব্য